| |
               

মূল পাতা রাজনীতি আওয়ামী লীগ বিএনপির আমলে মানুষের ভোটের অধিকারই ছিল না : প্রধানমন্ত্রী


বিএনপির আমলে মানুষের ভোটের অধিকারই ছিল না : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     01 August, 2022     06:21 PM    


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের আওয়ামী লীগেরও প্রত্যেকটি নেতাকর্মীকে এই আহ্বান জানাবো দেশবাসীর কাছে যেতে হবে এবং আমাদের খাদ্য যে আমরা নিজেরা উৎপাদন করবো সে কথাটা জানাতে হবে। বিএনপির শাসনামলে মানুষের ভোট দেওয়ার অধিকারটাই ছিল না। দুর্ভাগ্য হলো একটা মিলিটারি ডিক্টেটর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যে দল গঠন করেছিল তাদের কাছে এখন নানা রকম নীতির কথা শুনতে হয়। যারা এই বাংলাদেশটাকে বানিয়েছিল অস্ত্র চোরাকারবারি, সন্ত্রাসি জঙ্গীবাদের দেশ। বিএনপির দেশকে সম্পূর্ণ পরনির্ভরশীল করে দেশের মানুষের নিরাপত্তা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছিল। পাঁচ বার দুর্নীতিতে এই বাংলাদেশ এক নম্বরে ছিল। হত্যা, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এই তো ছিল। প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া এবং তাদেরকে লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা। শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস করে স্বাক্ষরতার হার কমিয়ে ফেলা। দেশকে খাদ্য ঘাটতিতে রেখে ভিক্ষুক জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচয় করানো এবং ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আসা। এটাও একটা ব্যবসা। খাদ্য কিনবে, ব্যবসা করবে এবং কমিশন খাবে এটাই ছিল বিএনপির নীতি। ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছে। একটা চালান ধরা পড়েছে। এই রকম কতো চালান এই দেশে এসেছে আর গিয়েছে।

আজ (১ আগস্ট) সোমবার সকালে শোকবহ আগস্টের প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ এর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর সংলগ্ন এলাকার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী এবং দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউত্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দার খন্ড চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বেই এমনকি অকে উন্নত দেশের অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। আমেরিকার মত জায়গায় যেখানে ১ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ছিল সেটা ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, জার্মানিসহ ইউরোপের বহুদেশে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং উন্নত দেশগুলো হিমসিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে আমরা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে আমাদের মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি এবং প্রত্যেকের নিজস্ব জলাশয় কাজে লাগানোর আহ্বান পুণর্ব্যক্ত করে প্রশাসন সশস্র বাহিনী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কৃষক লীগকেও একাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

অতীতের জনংখ্যার উর্ধ্বগতির হার কমে আসার নজীর সাম্প্রতিক গণশুমারীতে পাওয়া নিয়ে সমালোচনারও উত্তর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশকে গড়ে তোলায় সকলের মাঝে সরকার একটি চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। আজকে জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটির ওপরে, কিন্তু হিসেবটা কারো কারো পছন্দ হচ্ছে না। এই হিসেবেটা যাদের পছন্দ নয় এবং তারা যদি জনসংখ্যা বাড়িয়েই যেতে চায় তাহলেও দেশের নাগরিক হিসেবে তাঁর সরকার তাদের খাদ্য সংস্থান করবে। কিন্তু আমরা চাই প্রত্যেকটি পরিবার যেন একটি সুখী পরিবার হয় এবং সবাই যেন সুন্দর ভাবে বাঁচতে পারে, প্রতিটি ছেলে-মেয়ে সুন্দর ভাবে লেখাপড়া করতে পারে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত এবং তাদের বিদেশে পাঠানো টাকা ফেরতও আনা হয়েছে। এটা ভুলে যায় কেন। টাকাতো আমরা ফেরত এনেছি। তাদের দুর্নীতি আমাদের বলতে হবে কেন। একটা আন্তর্জাতিক সংস্থা আমেরিকার এফবিআই তারাই তো খুঁজে বের করেছে। খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া এরা কার কার কাছ থেকে দুর্নীতি করে কত টাকা নিয়েছে। গ্যাটকো, নাইকো থেকে শুরু করে সিমেন্সের টাকা এগুলো তো একেবারে সবকিছুই প্রকাশ হয়েছে।

বিএনপি জামাত জোট সরকারের ‘দুঃশাসন ও সেই সময়ে অনুষ্ঠিত ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনগুলোর কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ এর ১লা অক্টোবরের নির্বাচনে কি কোন মানুষ ভোট দিতে যেতে পেরেছে? সমস্ত বাংলাদেশে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এরা তো প্রকাশ্যে সিল মারতো। একেকটা বাসে করে যাবে বিএনপির সন্ত্রাসীরা একেকটা বুথে ঢুকবে, সিল মারবে, বাক্স ভরবে আর চলে আসবে। আর সেটা না পারলে সোজা ফলাফল ঘোষণা। এই সমস্ত প্রক্রিয়ায় সেই সময় মাগুরা নির্বাচন, মিরপুর নির্বাচন ও ঢাকা-১০ আসনের নির্বাচন হয়েছে, তাদের কাছ থেকেও কথা শুনতে হয় নির্বাচন নিয়ে, তারা কথা বলে কোন মুখে? কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে তো তাদের ক্ষমতায় আসা নয় বরং অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে অথবা দেশ বিক্রির মুচলেখা দিয়ে আসা। ’৭৫-এর বিয়োগান্তক বেদনাবিধূর অধ্যায় স্মরণ করে এর প্রেক্ষাপট সৃষ্টিতে সে সময়কার ব্যাপক বিভ্রান্তিকর অপপ্রচারের বিভিন্ন প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন, ২০ টাকা যখন মোটা কাপড়ের দাম তখন প্রায় দেড়শো টাকা মূল্যের জাল পরিয়ে বাসন্তীর ছবি তুলে সে ছবি দিয়ে দেশে বিদেশে ব্যাপক অপপ্রচার চালানো হয়। আন্তর্জাতিক চক্রান্তে ’৭৪ এর সেই দুর্ভিক্ষ ছিল, বঙ্গকন্ধু সেই দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করে চালের কেজি ১০টাকা থেকে ৩ টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন। আর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়ে যখন দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাঁকে হত্যার পথ বেছে নেয় ঘাতক চক্র।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গকন্ধু হত্যাকান্ড ইতিহাসের একটি কলংকজনক অধ্যায়। যাঁদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য বঙ্গকন্ধু নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন আপনজন হিসেবে বাবাকে যেজন্য তাঁরা কাছে পাননি সেই বাঙ্গালিদের হাতেই কেন বঙ্গকন্ধুকে জীবন দিতে হলো সে প্রশ্নের উত্তর আজো খুঁজে ফেরেন তিনি। বঙ্গকন্ধু হত্যার ৬ বছর পর্যন্ত প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে একরকম জোর করেই দেশে ফিরে আসার কথা বলেন, দেশে ফেরার পরও তিনি দেখেছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভিঙ্গ-মঙ্গা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি যে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে বিশ্বে বঙ্গকন্ধুর সরকারের দুর্নাম রটনার অপচেষ্টা হয় সে বাসন্তীকে খুঁজে বের করে দেখতে পান তারও ভাগ্য ফেরেনি। তবে, আওয়ামী লীগ সে সময়ও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। যে অপবাদ দিয়ে ১৫ আগস্ট ঘটানো হলো তাহলে দেশের কি পরিবর্তন তারা আনলো সেটা দেখার ইচ্ছ ছিল বলেই আমি কুড়িগ্রামের চিলমারি গিয়ে ৩ মাইল হেঁটে কাদা-পানি মাড়িয়ে, মেঠে পথ ভেঙ্গে সেই বাসস্তীর বাড়ি গিয়ে দেখেছি ছিন্ন কাপড়ে বাসন্তিকে, তার মা অসুস্থ, একটি বেড়ার চালার নিচে কোনমতে পড়ে আছে। তাকে ঘরও বলা যায় না। মাছি ভনভন করছে। ’৭৫ এ বঙ্গকন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এদেশে খুনী ও যুদ্ধাপরাধীদেও যে রাজত্ব গড়ে উঠেছিল সেভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে। বাবার রক্ত নিয়েওতো বাসন্তীদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি তাহলে কেন হত্যা করা হলো?