রহমত ডেস্ক 21 June, 2022 11:19 AM
মুফতি আব্দুল হালিম বুখারী। একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় লেখক, বক্তা, সমাজ সংস্কারক ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক উপদেষ্টা, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ সুপারভাইজারি কমিটির সভাপতি, ইসলামি সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি এবং জামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক। ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদানের নিমিত্তে আল হাইআতুল উলয়া গঠিত হলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হোন। বরেণ্য এ আলেম আজ মঙ্গলবার ( ২১ জুন) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম শহরের সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।
জন্ম ও বংশ :মুফতি আব্দুল হালিম বুখারী ১৯৪৫ সালের জানুয়ারিতে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া থানার রাজঘাটা (তৎকালীন সাতকানিয়ার অন্তর্গত) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আব্দুল গণী বুখারী। তার পরদাদা সৈয়দ আহমদ বুখারী উজবেকিস্তানের বোখারার বাসিন্দা ছিলেন। বৈরী পরিবেশে তিনি চীন-ভারত হয়ে ইয়াঙ্গুনে হিজরত করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশে বসতি স্থাপন করেন।
শিক্ষাজীবন : তিনি নিজ গ্রামের রাজঘাটা হোসাইনিয়া আজিজুল উলুম মাদ্রাসায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। তারপর আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হয়ে ১৯৬৪ সালে দাওরায়ে হাদিস (মাস্টার্স) সমাপ্ত করেন। ১৯৬৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর বাংলা সাহিত্য ও গবেষণা বিভাগে অধ্যয়ন করেন। তিনি টাঙ্গাইল আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম ও কামিল, গোপালপুর মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ১ম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। তিনি টাঙ্গাইল কাগমারী কলেজ থেকে এইচএসসি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন। পাশাপাশি তিনি লাহোর ডন হোমিওপ্যাথিক কলেজে বায়োক্যামিকের উপর ২ বছর মেয়াদী কোর্স সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন : শিক্ষকতার মাধ্যমে তিনি কর্মজীবনের সূচনা করেন। ১৯৬৭ — ১৯৬৮ পর্যন্ত তিনি টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক ছিলেন। এরপর তিনি সাতকানিয়া মাহমুদুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় যোগদান করেন। ১৯৭২ সালে তিনি পুনরায় টাঙ্গাইল দারুল উলুম আলিয়া মাদ্রাসায় চলে যান। ১৯৭২ — ১৯৮২ পর্যন্ত সেখানে মুহাদ্দিস ও শায়খুল হাদিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮২ সালে তিনি আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ায় চলে আসেন। ২০০৩ — ২০০৮ পর্যন্ত জামিয়ার সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব পালনের পর ২০০৮ সালে আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক মনোনীত হন। ১৯৮২ থেকে জামিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। বাংলাদেশের অন্যতম কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন ১৯৮৩ থেকে। জামিয়া পটিয়ার অধীনে পরিচালিত বাংলাদেশ তাহফীজুল কুরআন সংস্থার তিনি বর্তমান সভাপতি। সারাদেশে ইসলামী সম্মেলন আয়োজন করার লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি এই সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০১৫ সালে ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান রাহিমাহুল্লাহর মৃত্যুবরণের পর তিনি সভাপতির দায়িত্ব পান। তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ সুপারভাইজারি কমিটির সভাপতি। ২০১৮ সালে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদানের নিমিত্তে আল হাইআতুল উলয়া গঠিত হয়। আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব হিসেবে পদাধিকার বলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন। ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সম্মেলনে তাকে উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য নির্বাচিত করা হয়।
তাসাউফ : তিনি মুফতি আজিজুল হক রাহিমাহুল্লাহর খলিফা জামিয়া ইসলামিয়া দারুসসুন্নাহ হ্নীলার সাবেক শায়খুল হাদিস শাহ মুহাম্মদ ইসহাকের নিকট বায়’আত গ্রহণ করেন এবং খেলাফত লাভ করেন।
পরিবার : তিনি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া নিবাসী মাওলানা এরশাদের কন্যা খালেসা বেগমের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ তার চার ছেলে ও তিন মেয়ে। পরিবারের সবাই ইসলামি কর্মকাণ্ডে জড়িত।
তাসনিফাত : তার উল্লেখ্যযোগ্য রচনার মধ্যে রয়েছে : তাসহিলুত ত্বহাভি, তাসহিলুল উসুল, তাসহিলুত তিরমিজী ইত্যাদি