‘আল্লামা বোখারী দেখামাত্র আনাস বলে বুকে টেনে নিতেন’

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মুফতি আবদুল হালিম বোখারীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করে আঞ্জুমানে দাওয়াতে ইসলাহের আমীর ও আল্লামা  শফীর রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাহেবজাদা মাওলানা আনাস মাদানী বলেছেন, আল্লামা শাহ মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী আমার অভিভাবক সমতুল্য ছিলেন। তিনি আমার আব্বা শাইখূল ইসলাম রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ইন্তেকালের পরে আমাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিতেন। হযরতের সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি রয়েছে যা কখনো ভুলবার নয়। কুরআন-সুন্নাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মুকাবেলায় তাঁর ভূমিকা প্রশংসনীয় ছিল।মঙ্গলবার (২১ জুন) গণমাধ্যমে প্রেরিত এক শোকবার্তায় তিনি এসব কথা বলেন। 

মাওলানা আনাস মাদানী বলেন, আমার ব্যক্তিগত জীবনে আল্লামা শাহ মুফতি আব্দুল হালিম বোখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। দেশে ইসলামি শিক্ষা বিস্তার এবং দ্বীনি আন্দোলনে প্রায় সময় হযরত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমার বাবার ইন্তেকালের পর প্রায় সময় যোগাযোগ করে খোঁজ-খবর নিয়েছেন-নিতেন। তিনি বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের অভিভাবক ছিলেন। হযরত হাকীমুল ইসলাম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি দেখামাত্র আনাস বলে আমাকে বুকে টেনে নিতেন। আজকে আমি আমার মুরব্বীকে হারিয়ে নিজেকে খুব অসহায় মনে করছি। আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌসে আমাদের দ্বিতীয়বার মুলাকাতের সৌভাগ্য দান করুক।  বাংলার আকাশে এই চমকপ্রদ নক্ষত্র এত তাড়াতাড়ি নিবে যাবে কখনো কল্পনা করিনি। আমার বাবা মরহুম শাইখুল ইসলাম রহ এর সাথে থেকে রাজপথে বহু আন্দোলন সংগ্রাম করে গেছেন।

তিনি আরো বলেন, এলমে দ্বীনের প্রচার-প্রসারে হযরতের ভূমিকা কওমি অঙ্গনে স্বরণীয় হয়ে থাকবে। তাঁর বর্ণাঢ্য জীবনের প্রতিটি ধাপ আমাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। দেশের এই অন্যতম শীর্ষ আলেমেদ্বীনের ইন্তেকালে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। সাথে সাথে হযরতের মাগফিরাত কামনা করছি। তিনি বহু মসজিদ, মাদরাসা প্রতিষ্ঠানসহ দীনের বহুমুখি খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। দেশব্যাপী হাকীমুল ইসলাম আল্লামা শাহ আব্দুল হালিম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহির অসংখ্য রুহানি সন্তান, শোকসন্তপ্ত পরিবার,সহকর্মী ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সমাবেদনা জ্ঞাপন করছি।

এর আগে, মঙ্গলবার (২১ জুন) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম শহরের সিএসসিআর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আল-জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মুহতামিম মুফতি আবদুল হালীম বোখারী ইন্তোকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মঙ্গলবার (২১ জুন) রাতে জামিয়া আল-ইসলামিয়া পটিয়ার মাঠে জামিয়ার প্রধান মুফতী ও মুহাদ্দিস মুফতী হাফেজ আহমদুল্লাহ নামাযের ইমামতিতে মুফতি আবদুল হালিম বোখারীর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে রবিবার (১৯ জুন) বাদ মাগরিব হঠাৎ শ্বাস কষ্টজনিত রোগে অসুস্থ হয়ে পড়েন মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী। পরে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করেন।

মুফতি আব্দুল হালীম বোখারী হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের সাবেক উপদেষ্টা, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়ার মহাপরিচালক, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিস বাংলাদেশের মহাসচিব। এছাড়াও তিনি শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের শরীয়াহ সুপারভাইজারি কমিটির সভাপতি, ইসলামি সম্মেলন সংস্থা বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ তাহফিজুল কুরআন সংস্থার সভাপতি এবং জামিয়া পটিয়ার মুখপাত্র মাসিক আত তাওহীদের প্রধান সম্পাদক। ২০১৮ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের স্বীকৃতি প্রদানের নিমিত্তে আল হাইআতুল উলয়া গঠিত হলে তিনি এর স্থায়ী কমিটির সদস্য মনোনীত হন।