| |
               

মূল পাতা অর্থনীতি বিশ্ববাজারে কমলো ভোজ্যতেলের দাম


বিশ্ববাজারে কমলো ভোজ্যতেলের দাম


রহমত ডেস্ক     31 May, 2022     09:00 AM    


বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমেছে। তবে বিশ্ববাজারে কমলেও তার খুব বেশি প্রভাব নেই দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে। চলতি সপ্তাহে প্রতি লিটারে কমেছে ৪ থেকে ৬ টাকা। অথচ একই সময়ে আর্ন্তজাতিক বাজারে টন প্রতি তেলের দাম কমেছে প্রায় দুইশ ডলার। দেশের বাজারে তেলের দাম না কমার পেছনে ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন।

চলতি বছরের মার্চে আর্ন্তজাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম রেকর্ড গড়ে উঠেছিল প্রতি টন ১৯শ ৫৭ ডলার। তবে চলতি মাসের শুরু থেকে এই দাম ক্রমশ কমতে শুরু করে। চলতি সপ্তাহে দাম কমে দাঁড়িয়েছে ১৭শ ৬০ ডলার।

কিন্তু আর্ন্তজাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে যে গতিতে দেশে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছিল, কমার ক্ষেত্রে একেবারেই তা গতিহীন।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে টনপ্রতি উল্টো ৬শ টাকা বেড়ে পাম অয়েল এখন সাড়ে ৬ হাজার টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৭ হাজার টাকায়। তাই হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশের মিলগুলো থেকে তেল সংগ্রহে লম্বা লাইনে পড়তে হচ্ছে তাদের। অর্ডারের পর সরবরাহ পেতে ৭ থেকে ১০ দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের ভোজ্যতেলের বাজার শুধু আর্ন্তজাতিক দামের ওপর নির্ভর করে না বলেও দাবি করছেন তারা। খুব শিগগিরই ভোজ্যতেলের দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ভোক্তা অধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে দাম বাড়ার খবর এলেই দেশের বাজারে দাম বেড়ে যায়। কিন্তু নিম্নমুখী হলে সেটা যথাসময়ে কার্যকর হয় না কখনো। দাম কমার খবর এলেই গড়িমসি শুরু করেন ব্যবসায়ীরা। যতটা কালক্ষেপণ করতে পারেন, তাদের মুনাফা ততই বাড়ে। ফলে বিশ্ববাজারে দর কমা ও বাড়া, উভয় ক্ষেত্রেই প্রতারিত হন সাধারণ মানুষ। মূল্যবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তাদের শতভাগেরও বেশি মাশুল গুনতে হলেও কমার সুফল তারা পান খুব কম।

এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্য সচিব গোলাম রহমান বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের কোনো নীতি নৈতিকতা নেই। তারা যে কোনো অজুহাত পেলে সেটাকে ইস্যু বানিয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন।

তিনি বলেন, সরকার ব্যবসার প্রসার চায়। কিন্তু সে সুযোগ নিয়ে তারা ভোক্তাকে জিম্মি করছে। ব্যবসার প্রসার ভোক্তার পকেট কাটার লাইসেন্স হতে পারে না। তাদের নৈতিক করার জন্য অবশ্যই সরকারের কঠিন মনিটরিং করতে হবে। বাজার বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শুধু তেলের ক্ষেত্রে এমন হচ্ছে তা নয়। বর্তমানে বাজারে আমদানি সংকটের অজুহাতে আটা-ময়দা ও পেঁয়াজের দামও অস্থিতিশীল রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে যে অজুহাতে আটা, ময়দা ও গমের দাম বেড়েছিল, সেটি কার্যকর হয়নি। তবে বাড়তি দাম ঠিকই কার্যকর রয়েছে। ভারত গম রফতানি বন্ধের ঘোষণা দিতে না দিতেই পাইকারি বাজারে গমের দাম ২৫ শতাংশের মতো বেড়েছিল। নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও সে দাম আর কমেনি। ১৪ মে ভারত গম রফতানি বন্ধ করলেও বাংলাদেশের জন্য সে শর্ত শিথিল রয়েছে। তারপরও দেশে বেড়েছে গম, তা থেকে তৈরি আটা ও ময়দার দাম। ফলে আটা-ময়দা দিয়ে তৈরি বিস্কুট, ব্রেড ও প্রায় সব বেকারি পণ্যের দাম বেড়েছে। এমনকি রেস্তোরাঁয় পরোটার দামও বেড়েছে।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসেই আটার দাম বেড়েছে ২৬ দশমিক ৭৬ শতাংশ আর ময়দার ১৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। একইভাবে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির আইপিও বন্ধের কারণে দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছিল। যা দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও স্বাভাবিক হয়নি। এসব বিষয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, পুরোনো ওইসব সংকট কাটলেও বর্তমানে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে কম দামে পণ্য কেনা যাচ্ছে না। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার প্রভাব দেশের বাজারে নেই কেন, এমন প্রশ্ন করা হলে শীর্ষ আমদানিকারক বা তাদের প্রতিনিধিদের কেউই কথা বলতে চাননি।

সার্বিক বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, তেলের ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞার সময় দাম নির্ধারণ করেছিল। এখন নিষেধাজ্ঞা কেটে গেছে। নতুন করে আমদানি করা তেলের মূল্য বিবেচনায় আগামীতে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হবে।