মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন আফগানে নারী শিক্ষা ও আসন্ন দুর্ভিক্ষের মিথ
কায়সার আহমাদ 11 May, 2022 07:59 AM
নারীকে অন্দর মহল থেকে বের করে পাবলিক প্লেসে আনতে পশ্চিমা বিশ্ব সবচে বেশি কাজ করে থাকে। এর কারনে এই নয় যে তারা নারী ক্ষমতায়ন, অধিকার ইত্যাদি চায়। এগুলো তো স্রেফ কিছু বাহানা। আসল কথা হল একটি সমাজ ব্যবস্থা ও কালচার ধ্বংস করার জন্য কেবল নারীকে পাবলিক প্লেসে বের করে আনাই যথেষ্ট। যৌবনের টগবগ সময়ে শিক্ষার নামে নারীকে ঘর থেকে বের করে পাবলিক প্লেসে উপস্থিত করার মাধ্যমে সমাজকে খুব সহজে ধ্বংস করা যায়। এর মাধ্যমেই সমাজের সবচে শক্তিশালী স্তম্ভ ও ওয়ার্কফোর্সকে বিকার গ্রস্ত করে দেয়া হয়। নারীপুরুষ একে অপরকে আকৃষ্ট করার পথ খুলে দেয়া হয় যা আবার ফাহাশা, নেশা, টাকা কামানোর অনৈতিক কম্পেটিশন, পশ্চিমা সভ্যতার মত সাজা, কাপড় পরা ইত্যাদির দিকে যুব সমাজকে টেনে নিয়ে প্রবেশ করায়, পাশাপাশি জাহিলিয়াতের বিনোদন ইন্ডাস্ট্রি, মডেল, গান-মিউজিক, এমনকি বড় বড় ফুড চেইন ইন্ডাস্ট্রি গজিয়ে উঠতে থাকে।
পশ্চিমাদের কাছে আফগানে নারী শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ না, গুরুত্বপূর্ণ হল পাবলিক প্লেসে নারীর উপস্থিতি। যার মাধ্যমে পশ্চিমারা আফগানের পারিবারিক, সামাজিক সকল ব্যবস্থা ভেঙ্গে ফেলতে পারবে। শক্তি দিয়ে কুর'আনের শাসন না থামাতে পারলেও কমপক্ষে নারী শিক্ষার কথা বলে ইসলামি সমাজকে জারজ সমাজে পরিণত করার লক্ষ্যে এখন পশ্চিমারা অগ্রসর হচ্ছে। আফগানে মানুষ না খেয়ে মরুক তা ইম্পরট্যান্ট না, ইম্পরট্যান্ট হল নারী শিক্ষা। তাই আফগানীদের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার অ্যামেরিকা ফ্রিজ করে রেখে নারী শিক্ষার জয় ধ্বনি দিচ্ছে।
প্লেটো'স রিপাবলিকে সক্রেটিস যে সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিল সেটা তৈরির প্রথম পদক্ষেপই হল নারীকে পাবলিক প্লেসে আনা। নারী অন্দরমহলে অবস্থান করছে, এবং প্রয়োজনে বের হলে নিজেকে ঢেকে রাখছে, এমতাবস্থায় কখনোই পশ্চিমাদের মত জারজ সমাজ গড়া সম্ভব নয়।
বস্তুবাদী ও ক্যাপিটালিস্টিক দুনিয়ায় সবকিছুই বস্তুগত ও ভোগগত প্রগতির উপর নির্ভর করে জাজ করা হয়। যে রাষ্ট্র অর্থনৈতিক ভাবে যত পিছিয়ে, যত অনুন্নত তাকে ততই অসমম্মানকর অবস্থায় দেখা হয়। বর্তমান সেকুলার, লিবারেল, পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় আমাদেরকে বুঝানো হয়, রাষ্ট্রে এ তিনটি নীতি যত ভালো করে বাস্তবায়ন করা হবে তত অগ্রগতি হবে। আফগানিস্তানের অর্থনীতির ভঙ্গুর অবস্থা আগে থেকেই বিরাজমান। কিন্তু পশ্চিমারা এর দায় মাত্র কয়েকমাস আগে ক্ষমতায় বসা তালিবদের উপর চাপাচ্ছে। অন্যদিকে বলছে নারী শিক্ষা না হলে এমনই হবে। অথচ শিক্ষার দিক দিয়ে শ্রীলংকা তো এ উপমহাদেশে সবচে বেশি এগিয়ে কিন্তু এখন তাদের অর্থনীতির অবস্থা কেমন তা সকলেই জানে।
দ্বিতীয়ত গত বছরের নভেম্বর থেকে শুনছি, আফগানে দুর্ভিক্ষ আসছে। উইন্টার ইজ কামিং বলে কাউন্টডাউন শুরু হয়েছে। বড় বড় সংস্থা গবেষণা করে বলছে শীতের মৌসুমে অন্তত দশ লক্ষ শিশু খাদ্যভাবে মারা যাবে। আলহামুদিল্লাহ শীত গেল এখন গ্রীষ্ম এসেছে, কোথায় গেল সেই মারা যাওয়ার পরিসংখ্যান? একটি ইসলামিক সিস্টেম মাত্র দাঁড়িয়েছে আর এখনই তারা বিভিন্ন দিক খুঁজে খুঁজে সমালোচনা শুরু করেছে। (এক্ষেত্রে বাংলার পিওর মুসলিম ও মুশরিকদের পায়ের নিচে দেবে থাকা ভারতীয় নম নম করা মুসলিমরাও কম যায় না)
যাইহোক, অসংখ্য শিশু ইয়ামানে মারা যাচ্ছে, মারা যাচ্ছে আফ্রিকার বিভিন্ন দারিদ্র পীড়িত রাষ্ট্রগুলোতে। দুর্ভিক্ষ বা যুদ্ধ কবলিত রাষ্ট্রে অনেক মানুষ মারা যাবে এটা অস্বাভাবিক নয়। বরং এটাই নিয়ম। ১৯৭১ সালে যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে এদেশেও প্রচুর লোক মারা গেছে। ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে শহর ঢাকার অবস্থা ভয়াবহ ছিল। আঞ্জুমানে ইসলাম প্রতিদিন শহরের রাস্তা থেকে তখন ৩০-৪০ টি বেওয়ারিশ লাশ তুলে দাফনের ব্যবস্থা করত। অনাহারে প্রতি ঘন্টায় ৩-৪ জনের মৃত্যু হত। অথচ তখন ঢাকায় মাত্র বিশ লক্ষ লোকের বাস। বিভিন্ন জেলায় খাদ্যভাবে বহু পরিবার একত্রে আত্মহত্যার পথ বেঁছে নিয়েছিল।
বস্তুত, পশ্চিমা মেডিয়া খুব কোশেস করেও আফগানিস্তানে দারিদ্রতার ও নারীবাদীদের উপর জুলমের চিত্র তেমন খুঁজে পাচ্ছে না। তাই রাস্তার ভিক্ষুককে ধরে তার জীবন কাহিনী বয়ান শুরু করে দেয়। অথচ এর চেয়ে ভয়াবহ অবস্থা আমি বাংলাদেশেই দেখছি। ভিক্ষুকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে এখানে। অন্যদিকে নারীরা কত কষ্টে আছে সেটার চিত্রতেও দেখা যাচ্ছে নারীরা হাসাহাসি করছে, কোনো গ্রেফতার নেই, টর্চার নেই, নেই কোনো যুলুম। হ্যা এক দুইজনকে যদি কয়েক ঘন্টার জন্য ইন্টারোগেট করা হয় তবে সে কাহিনী উপস্থাপনের সময়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে ভীষণ মর্মান্তিক সাউন্ড জুড়ে দেয়, যেন মনে হচ্ছে সভ্য জাপানিজ বা জার্মানরা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় যেভাবে মানুষ হত্যা করছে ঠিক তেমনি কিছু আফগানে ঘটছে।
নারী স্বাধীনতার আন্দোলন তালিবারা খানিক শক্তি প্রয়োগে দমন করছে, তালিবরা চাচ্ছে নারীরা পর্দায় আবৃত থাকুক, অন্যদিকে ফ্রান্স সরকার চাচ্ছে নারীরা উন্মুক্ত থাকুক তাই ফ্রান্স সরকার হিজাব পড়া নারীদের হিজাব টেনে খুলে ফেলছে। সেটা নিয়ে কোনো রিপোর্ট নেই। আমি মনে করি এই আন্দোলন দমনে তালিবরা একটু বেশি যত্নশীল ছিল, এর চেয়ে ভালো হত যদি তারা ফ্রান্সের মত বা কানাডার মত করে দমন করত, ঠিক যেভাবে মডারেট মুসলিমদের আইডল, লিবারেল, সেকুলার, হোমোসেক্সুয়াল ও জারজ সভ্যতার রক্ষক জাস্টিন ট্রুড ট্রাক আন্দোলনকারীদের দমন করেছিল।
ইসলামি পরিবেশ নিশ্চিত করে নারী শিক্ষায় কোনো সমস্যা নেই, এটার বিরোধীতাও কেও করে না। কিন্তু পরিবেশ নিশ্চিত হবার পূর্বে নারী শিক্ষার যতই গুরুত্ব বুঝানো হোক না তা বিধান পরিবর্তন করতে পারবে না। একটি দেশের উন্নয়নের জন্য শিক্ষা জরুরি, কিন্তু কেবল শিক্ষার মাধ্যমে উন্নতি লাভ হয় না। আজকের পশ্চিমারা ধনী হয়েছে কয়েকশ বছর আগে দুর্বল রাষ্ট্রগুলোকে কোলোনাইজের মাধ্যমে; সৌদি, দুবাই, কাতার ধনী হয়েছে আল্লাহ প্রদত্ত মুসলিমদের সম্পদ বিক্রির মাধ্যমে।