রহমত ডেস্ক 03 April, 2022 08:22 PM
বন্ধ হওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিকদের সব বকেয়া ঈদের আগে পরিশোধ ও অবিলম্বে পাটকলগুলো চালু করার দাবি জানিয়েছে ‘পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ’।
আজ (৩ এপ্রিল) রবিবার দুপুর ১২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাম গণতান্ত্রিক জোটের জেলা সমন্বয়ক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা আহ্বায়ক জনার্দন দত্ত, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক মুনীর চৌধুরী, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির (মার্ক্সবাদী) জেলা সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক খান, সিপিবি নেতা এইচ এম শাহাদাৎ, শেখ আবদুল হান্নান, সুতপা বেদজ্ঞ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের জেলা সদস্য মোস্তফা খালিদ খসরু প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের আহ্বায়ক কুদরত-ই-খুদা বলেন, লোকসান দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল একযোগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিজেএমসি, অর্থ ও পাট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভ্রান্ত নীতির কারণে পাটকলগুলোয় লোকসান হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে প্রতিটি সরকারই লোকসানপ্রক্রিয়াকে অব্যাহত রেখে এসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। অথচ এখনো রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলকে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিতে চালিয়ে লাভজনক করার সুযোগ আছে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ-স্কপের প্রস্তাবনা অনুযায়ী মাত্র ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করা সম্ভব। পাটকল শ্রমঘন শিল্প। এ শিল্পের বিকাশের মধ্য দিয়ে বেকার সমস্যা লাঘব করা যাবে। একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্ববাজার বিবেচনায় দেশের অর্থনীতিতে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু সরকার ইজারাপ্রক্রিয়ায় ব্যক্তিমালিকদের বরাদ্দ দিয়ে এসব পাটকল চালানোর প্রক্রিয়া নিয়ে এগোচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বিকাশের কথা বিবেচনা করলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বদলি শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক ও পাঁচটি মিলের (খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস, আরআর জুট মিলস এবং কেএফডি জুট মিলস) শ্রমিকেরা কেউই এখনো বকেয়া পাননি। এর বাইরে ২০১৯ সালের ছয় সপ্তাহের মজুরি, ২০২০ সালের ঈদুল আজহার বোনাসসহ ২০১৫ থেকে পাঁচ বছরের উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স, ২০২০ সালের জুলাই মাসের প্রথম দুই দিনের ইনক্রিমেন্টসহ মজুরি এখনো বকেয়া রয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীরাও এখনো তাঁদের প্রাপ্য টাকা পাননি। বকেয়া পাওনা শ্রমিক-কর্মচারীদের ন্যায্য অধিকার, সরকারের দয়া বা করুণা নয়। তাঁরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কঠোর পরিশ্রম করেছেন, সেই শ্রমের ন্যায্য পারিশ্রমিকই এখন তাঁদের পাওনা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ফলে স্থায়ী, বদলি, দৈনিক ভিত্তিসহ প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। গত ২১ মাস তাঁরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শুধু পাটকলশ্রমিকেরাই নন, পাটশিল্পসংশ্লিষ্ট প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর কালো ছায়া নেমে এসেছে। সরকার তিন মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ঘোষণা দিলেও এখনো তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি। মিলের কলোনিতে বসবাস করা অসহায় শ্রমিকদের শ্রম আইন ভঙ্গ করে অর্থ পরিশোধের আগেই আবাসন থেকে উৎখাত করা হয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন শিশু ও বৃদ্ধরা। তাঁদের খাদ্য, চিকিৎসা ও রক্ষণাবেক্ষণে অক্ষম হয়ে পড়েছেন বেকার শ্রমিকেরা। এ ছাড়া শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকারের কথা বলতেও দিচ্ছে না সরকার। শ্রমিকেরা রাজপথে কর্মসূচি দিলে তাতে বাধা, গ্রেপ্তার, হয়রানি করা হচ্ছে। সরকারের এ ধরনের স্বৈরাচারী ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। আজ রোজা শুরু হয়েছে। এক মাস পরে ঈদ। একদিকে বেকারত্ব, অন্যদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে রোজার মাসে শ্রমিকদের পানি খেয়ে সাহ্রি ও ইফতার করতে হবে। এ রকম অমানবিক পরিস্থিতির দিকে সরকার শ্রমিকদের ঠেলে দিয়েছে। শ্রমিকদের এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ঈদের আগে বকেয়া পাওনা পরিশোধের আহ্বান জানানো হয়। অন্যথায় শ্রমিকদের নিয়ে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দেওয়া হয়।