রহমত ডেস্ক 03 April, 2022 05:58 PM
দেশের জনগণকে সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আপনারা (কর্মকর্তাগণ) সব সময় মাথায় রাখবেন- জনগণ যেন আপনাদের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়, কারণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। আপনাদের (প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের) দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করার সর্বোচ্চ সুযোগ রয়েছে। এই তরুণ প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাঠ পযায়ে কর্ম অভিজ্ঞতার মাধ্যমে ভবিষ্যতে উচ্চতর পদ লাভের পর, তারা বাস্তবিকভাবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। আপনারাই বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার সরকারের গৃহীত ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নের মূল চাবিকাঠি।
তিনি বলেন, প্রশিক্ষিত ও দক্ষ সিভিল সার্ভিস তার সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অন্যতম সহযোগী হাতিয়ার। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিই, প্রশাসন তা বাস্তবায়ন করে। আমরা চাই আপনারা আপনাদের জ্ঞান, মেধা এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন ও জনগণের সেবা করবেন। তরুণ কর্মকর্তাদের যেখানে পোস্টিং দেয়া হবে- সে স্থান সম্পর্কে ভালভাবে জানতে এবং স্থানীয়দের ভাগ্য, জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের ব্যাপারে সব সময় চিন্তা-ভাবনা করার নির্দেশনা দেন তিনি।
আজ (৩ এপ্রিল) রবিবার রাজধানীর শাহবাগস্থ বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২১, ১২২ ও ১২৩ আইন ও প্রশাসন কোর্সের সনদ বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস প্রশাসনিক একাডেমির রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিন।অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এইচ এন আশেকুর রহমান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলি আজম। এ সময় বিসিএস প্রশাসনিক একাডেমির ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফরহাদ হোসেন রেক্টরের কাছে শীর্ষ স্থান অধিকারকারীদের মাঝে পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ হস্তান্তর করেন।১২১, ১২২ ও ১২৩ কোর্সে মোট ৯৯ জন অংশ নেন। ১২১, ১২২ ও ১২৩ থেকে প্রথম স্থান অধিকারকারী রেক্টর অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত তিন জন হলেন- মো. নাভিদ রেজওয়ানুল কবির, মো. রাকিবুর হাসান ও রেজওয়ানা আফরিন। এ সময় তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি, ১২১ এর মহুয়া আফরোজ ও আলাউদ্দিন, ১২২ এর সাবরিনা শারমীন ও সুমা খাতুন এবং ১২৩ এর কাজী মো. অনিক ইসলাম ও মেহেদী হাসান যথাক্রমে এই কোর্সগুলোর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গৃহীত দ্বিতীয় বিপ্লবের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যদি দ্বিতীয় বিপ্লব বাস্তবায়ন করতে পারতেন, তাহলে দশ বছরে বাংলাদেশ একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতো। কিন্তু, বঙ্গবন্ধুকে সে সুযোগ দেওয়া হয়নি। কারণ, ’৭৫ সালে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের মানুষ বঞ্চিত ও শোষিত ছিল। বঙ্গবন্ধু সর্বদা জনগণের সেবা করার জন্য সরকারি কর্মচারিদের নির্দেশনা দিয়েছেন, আমি মনে করি যে, একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আপনাদের উচিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং অসাম্প্রদায়িক ও উন্নত বাংলাদেশ গড়ার চেতনা নিয়ে কাজ করা।
তিনি বলেন, তিনি দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে চান। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর পাঁচ বছরে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশবাসীর সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণ নিশ্চিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। বঙ্গবন্ধু ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন শুরু করলেও তাকে হত্যার পর তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এখন তার সরকার দেশের কোন মানুষ যাতে গৃহহীন ও ঠিকানাহীন না থাকে তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে। আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় আসার তারা আশ্রয়ন-১ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছিলেন।
আশ্রয়ণ প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গৃহহীন মানুষের হাসিমুখ দেখার চেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আর কিছু হতে পারে না। বাংলাদেশ এখন সব শর্ত পূরণ করে একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে। একটি উন্নয়নশীল জাতি হিসাবে, আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে এবং এটিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সরকারকে জনগণের মৌলিক অধিকার পূরণ করতে হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্য-শোষণমুক্ত উন্নত দেশে পরিণত করতে হবে। আপনারা যারা মাঠ পর্যায়েরর প্রশাসনে কাজ করছেন, তারাই জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের চাবিকাঠি।
সংবিধানের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, ‘জনগণই দেশের মালিক’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করাই তার সরকারের সকল কার্যক্রমের লক্ষ্য। ১৯৭৫ সালের পর যারা ক্ষমতা দখল করেছে, তারা এটাকে শুধু ভোগের বস্তু হিসেবে নিয়েছিল। আমি শুধু প্রধানমন্ত্রী নই, বঙ্গবন্ধুর কন্যাও। আমার দায়িত্ব দেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা এবং তৃণমূল থেকে উন্নয়ন করা। পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা-২০৪১ সম্পর্কে একটি কাঠামো তৈরি করেছে, যা সময়ের প্রয়োজনে আপডেট করা যেতে পারে। স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে পরিকল্পনার ভিত্তিতে দেশ এগিয়ে যাবে।