রহমত ডেস্ক 28 March, 2022 07:28 PM
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব অপরাধ দমনে নজিরবিহীন সাফল্য দেখিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোল মডেল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়, যা উন্নয়নেরও পূর্বশর্ত। দেশের একমাত্র এলিট ফোর্স র্যাব ইতোমধ্যে জননিরাপত্তা রক্ষায় গণমানুষের আস্থার বাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
আজ ৯২৮ মার্চ) সোমবার সকালে কুর্মিটোলা র্যাব সদর দপ্তরে শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে র্যাব এর ১৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। অনুষ্টানে উপস্থিত ছিলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, র্যাব মহাপরিচালক-ডিজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, মহাপুলিশ পরিদর্শক-আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ,র্যাবের অতিরিক্ত মহাপািরচালক (অপারেশন) কর্ণেল আবুল কালাম আজাদ, র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন, সদরদপ্তরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, র্যাবের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের (অধিনায়ক)সহ অন্যান্য অতিথিসহ র্যাবের কর্মকর্তারা ।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীবলেন, জঙ্গিবাদ, চরমপন্থি, জলদস্যু দমন ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে এ বাহিনী অতিব গুরুত্বপূণ্য দায়িত্ব পালন করেছে। মাদকবিরোধী অভিযানেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা। র্যাবের ডি-র্যাডিকালাইজেশন ও রি-হ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম ‘নবদিগন্তের পথে’ অত্যন্ত অভিনব ও যুগান্তকারী উদ্যোগ। এর মাধ্যমে অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সমাজের মূলধারায় আবার তাদের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। আত্মসমর্পণ করা ৪২১ জন সন্ত্রাসী পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় যুক্ত রয়েছে। জঙ্গি দমনে বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে রোল মডেল, বিগত ও বর্তমান সময়ে শীর্ষ জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সফল অভিযান চালিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে অনেকটা সক্ষম হয়েছে এলিট ফোর্স র্যাব। সম্প্রতি জঙ্গি দমনে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি ও কৌশলের আলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গি দমনে যে সফল তৎপরতা চালিয়েছে তাতে র্যাবের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ২০১৬ সালে হলি আর্টিজানসহ শোলাকিয়া, সিলেটের আতিয়া মহল, ঢাকার আশুলিয়া, মিরপুর, তেজগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে ও ঝিনাইদহসহ প্রতিটি জঙ্গি দমন অপারেশনে র্যাব তার পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছে।
তিনি বলেন, একটা সময় এমন ছিল যে বিশ্ব ঐতিহ্যের নিদর্শন সুন্দরবন ছিল বনদস্যু ও জলদস্যুদের অভয়ারণ্য। সুন্দরবনের বাওয়ালি নৌয়ালীসহ প্রায় ২৫ লাখ মানুষের নিয়ন্ত্রক ছিল এ বনদস্যুরা। প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধান ও র্যাবের কর্মতৎপরতায় সুন্দরবনকে আমরা দস্যুমুক্ত করেছি। সুন্দরবনে আজ শান্তির সুবাতাস বইছে, ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৩২টি জলদস্যু বনদস্যু বাহিনীর ৩২৮ জন সদস্য, ৪৬২টি অস্ত্র ও ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদসহ র্যাবের কাছে আত্মসমর্পণ করে। জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করানোর মধ্যেই র্যাব ক্ষান্ত হয়নি। বরং তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাও গ্রহণ করেছে। র্যাবের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কক্সবাজার ও মহেশখালী উপকূলীয় অঞ্চলের ১৮টি বাহিনীর ৭৭ জন সদস্য, ১৮৮টি অস্ত্র ও ৯ হাজার ৭০৩ রাউন্ড গোলাবারুদসহ আত্মসমর্পণ করে।
তিনি আরো বলেন, র্যাব চরমপন্থির আগ্রাসন থেকে দেশকে মুক্ত করেছে, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রক্তাক্ত জনপদে মানুষ পেয়েছে নিরাপদ জীবন। ফলে সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জঙ্গি দমনের মাধ্যমে দেশের আপামর জনগণের নিরাপত্তা সমুন্নত হয়েছে। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, জলদস্যু দমনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এনেছে। বিভিন্ন হত্যা, খুন, অপহরণ, ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেফতারের মাধ্যমে ভিকটিম ও পরিবারের বিচার পাওয়ার পথ সুগম করেছে। র্যাব মানবপাচার বিরোধী অভিযান পরিচালনা ও ভিকটিম উদ্ধার করার ফলে নতুন জীবনের স্বাদ পেয়েছে অনেকে। বিভিন্ন রকম দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের পাশে থাকে র্যাব। মানবিক দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে দুস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধীদের পাশেও দাঁড়িয়েছে।
কামাল বলেন, মাদক বিস্তার রোধে র্যাব গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে যাচ্ছে। ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ এ সামাজিক যুদ্ধ এবং অভিযাত্রা আমাদের সফল করতে হবে। পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। মাদকবিরোধী অভিযান সুসংহত করার লক্ষ্যে কক্সবাজার জেলায় একটি পরিপূর্ণ ব্যাটালিয়ন প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা একটি যুগোপযোগী ‘মাদক নিয়ন্ত্রণ আইন’ প্রণয়ন করেছি। গত এক বছরে র্যাবের অভিযানে উদ্ধার হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ পিস ইয়াবা, ১৪৯ কেজি হেরোইন, ২৮ কেজি আইস, ১ লাখ ৩৯ হাজার বোতল ফেনসিডিলসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭১১ কোটি টাকা।