মনোজ কুমার দাস 06 July, 2021 06:53 PM
আগের দিন অর্থাৎ ১লা আগস্ট ২০১৯ হেমকুণ্ড সাহিব দর্শন করে ঘাঙারিয়ায় নেমে এসে বিকেলের আকাশ দেখি বেশ পরিষ্কার। পর্যটকদের বেশির ভাগ সবাই হেমগঙ্গার শেষ অংশ যেখানে পুষ্পবতী নদীর সঙ্গে মিলিত হচ্ছে, সেখানে আনন্দে মেতে উঠেছে। ঐ সময় ওখানে বেশ কিছু প্রজাতির পাখিরও দেখা মিলল।
সন্ধ্যা নামার আগে গুরুদোয়ারার দিকে পা বাড়াতেই পাশের খাবারের দোকানগুলোতে গরম গরম গোলাপ জামুন, সিঙাড়া, চাট এইসব খাওয়া-দাওয়া করে ৭টা নাগাদ গুরুদোয়ারায় ঢুকে পড়ে সোজা বিছানায় শুয়ে পড়লাম। ৮টা নাগাদ অসম্ভব জোরে শুরু হলো বৃষ্টি , এদিকে সারাদিন এতটা ধকলের পর কম বেশি সকলেই ঘুমিয়ে কাদা।
রাত ১০টা বাজে বৃষ্টি কিন্তু হয়ে চলেছে। আবার রাতের খাবারের জন্য সকলকে যাবার জন্য বলতে দুই তিন জন খাবারের জায়গায় গেল। আমি গেলাম না। কারণ সন্ধ্যা বেলায় ঐ সব খাওয়ার পর পেট বেশ ভার হয়ে আছে। আবার ভোর বেলা উঠে তৈরি হতে হবে ফুলের উপত্যকায় যেতে। সেই জন্য তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকাল ৫টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে দেখি বৃষ্টির কিন্তু থামার কোনো লক্ষণই নেই। সে কিন্ত সারা রাত ধরে অঝোর ধারায় ঝড়েই চলেছে। যাই হোক, আমরাও সবাই যার যার মতো তৈরি হয়ে নিয়ে নীচের খাবারের জায়গায় গিয়ে সকালের খাবার খেয়ে নিলাম। ৭টা বাজতে আমরা গুরুদোয়ারা থেকে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।
এখান থেকে বেরিয়ে মিনিট কুড়ি পড়েই ফুলের উপত্যকায় যাবার জন্যে বন বিভাগের অনুমতি নেওয়ার জায়গায় পৌঁছে গেলাম। বৃষ্টিও কিন্তু তখন বন্ধ হয়ে গেছে। অনুমতি নেওয়ার জন্য সকলের ১৫০ টাকা এবং পরিচয়পত্র দরকার পড়ে। আর সবচাইতে যেটা মজার সেটা হলো- আপনাকে যে অনুমতি দেওয়া হয় সেটা কিন্তু তিন দিনের জন্য।
আমরা ২রা আগস্ট অনুমতি সাপেক্ষে উপত্যকায় সসম্মানে উপনীত হলাম এবং প্রকৃতির নৈস্বর্গিক অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে অন্য পর্যটকদের তুলনায় অনেক বেশি পথ অতিক্রম করলাম। কারণ আমরা সেদিন যখন অনুমতি নিই, তখন আমরা ছিলাম দ্বিতীয় দল। যথারীতি আমরা অনেক আগেই উপরের দিকে এগিয়ে যাই এবং যতদুর পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছাই, সেখান থেকে ফিরে আসার সময় কাউকে আর এগোতে দেখিনি। উপরে একটা জায়গায় বড় একটি পাথরকে কেন্দ্র করে পিকনিক স্পট ফিক্সিং করা আছে। বেশির ভাগ মানুষই দেখি তার আশপাশের মধ্যে রয়েছে।
উপরে ফুলের উপত্যকায় ঘোরাঘুরি করতে করতেই আবার আকাশের মেঘের অবস্থা দেখে আমরা ঠিক করি, আজকেই আমরা ঘাঙারিয়া থেকে গোবিন্দঘাট নেমে যাব (৩রা আগস্ট আমাদের ঘাঙারিয়া থাকার কথা ছিল)।
যথারীতি আমরা বেলা দুটো নাগাদ ঘাঙারিয়ায় নেমে এসে গুরুদোয়ারায় দুপুরের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে গোবিন্দঘাটের উদ্দেশে হাঁটা শুরু করলাম। হাঁটা শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বৃষ্টিও শুরু হলো। গোবিন্দ ঘাট পৌঁছানো পর্যন্ত পুরো ১০ কি. মি. রাস্তা বৃষ্টির দরুন ভিজে অলকানন্দা এবং লক্ষণগঙ্গার সংযোগস্থলে অবস্থিত নদীর পাড়ে গোবিন্দঘাটের গুরুদোয়ারায় পৌঁছলাম।
-অতিথি লেখক, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত
/জেআর/