রহমতটোয়েন্টিফোর ডেস্ক 28 February, 2021 03:30 PM
হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সহকারী মহাসচিব ও লালবাগ জামেয়া মাদ্রাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস মাওলানা জসিম উদ্দিনের উপর হামলার ঘটনায় যদি কারো প্রভাবে অথবা ইশারায় তদন্ত মাঝপথে থেমে যায় তাহলে হত্যাচেষ্টাকারী, সন্ত্রাসী গডফাদারদের বিচারের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে হেফাজত।
রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতারা এ কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে হেফাজতের মহাসচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, ‘প্রশাসন কোনো কোনো বিশেষ ঘটনার ক্ষেত্রে তিন থেকে ১০ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করে। কিন্তু হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা জসিমের উপর হামলার পর এতোদিন হয়ে গেলেও শাহিন হুজুরসহ মূল হোতাদের গ্রেফতার করা হয়য়নি। কোন গোপন রহস্যের কারণে শাহিন হুজুরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না, তা আমরা জানতে চাই।
তিনি বলেন, ‘শুধু হেফাজত নেতা নয়, একজন নাগরিকের রক্ত কেন ঝরবে? এ ধরনের জুলুম, অন্যায় অত্যাচারের প্রতিবাদ করতেই হেফাজতের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষেত্রেও হেফাজত নীরবে বসে থাকতে পারে না।’
এতে লিখিত বক্তব্যে ঢাকা মহানগরী সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেন, ‘মাওলানা জসিম উদ্দিনের উপর ছুরিকাঘাত করার সাথে জড়িত মাসুম আহমেদ ইমরানকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। সে প্রশাসনকে এ ঘটনায় লালবাগ আশরাফুল উলুম বড় কাটারা মাদরাসার কিতাব বিভাগের শিক্ষক শাহিন হুজুরের নাম বলেছে। শাহিন হুজুর এখন পলাতক রয়েছে। হত্যাচেষ্টা মামলার পর প্রাথমিক তদন্ত ও প্রশাসনিক তৎপরতা সন্তোষজনক থাকলেও মাসুমের গ্রেফতার ও শাহিনের নাম প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই তদন্তের ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত স্থবিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তার পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার পরও তাকে গ্রেফতার না করে কালক্ষেপণ করার বিষয়টি খুবই রহস্যজনক। আমরা আশঙ্কা করছি, কোনো কুচক্রী মহলের ইশারায় তাকে গ্রেফতার না করে মূলহোতাদের বাঁচানোর অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা সরকার ও প্রশাসনকে জানিয়ে দিতে চাই, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যদি কারো প্রভাবে অথবা ইশারায় তদন্ত মাঝপথে থেমে যায় তাহলে হত্যাচেষ্টাকারী, সন্ত্রাসী গডফাদারদের বিচারের দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।’
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য, এহেন বর্বরোচিত হামলার পর ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি মূলহোতাদের কেউ। এভাবে দিনের পর দিন হত্যাচেষ্টার মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মাওলানা জসিম। তার জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। শাহিনকে গ্রেফতার করা না হলে মূল কালপ্রিটরা এরপর শুধু মাওলানা জসিমকে নয়, আরো সিনিয়র কোনো আলেমকেও হত্যার প্রচেষ্টা করতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।’
তারা বলেন, ‘বিশ্বস্ত একটি সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, মাওলানা জসিমের উপর হামলার ঘটনার পর শাহিন দুই দিন লালবাগ কেল্লার মোড়ে তার এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। সেই বাড়িতে বসবাসরত এক বাসিন্দা আমাদের জানিয়েছে, শাহিনকে প্রায়ই এ বাড়িতে মটর সাইকেল রাখতে দেখা যেত। তবে হামলাকারী মাসুম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে শাহিনকে আর সেখানে দেখা যায়নি।’
তারা আরো বলেন, ‘তদন্তকারীদের একটি সূত্র আমাদের জানিয়েছে, মাওলানা জসিমের উপর হামলার দিন শাহিন কেল্লারমোড়ের সে বাড়িতেই ছিল। তবে ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে শাহিন পলাতক। লালবাগের যে বাসায় শাহিন তার পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকতো, সে বাসায় অভিযান চালিয়ে তার পরিবারের কোনো সদস্যকেও খুঁজে পায়নি পুলিশ।’
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ‘শাহিনের সাথে মাওলানা জসিমের ব্যক্তিগত কোনো সম্পর্ক নেই। হত্যাচেষ্টার মতো কোনো ক্ষোভ বা শত্রুতা তো দূরের কথা, সামান্য কোনো বৈরী সম্পর্কও তাদের পরস্পরের মধ্যে কখনো ছিল না। তাই এ কথা আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, শাহিন কারো নির্দেশেই মাওলানা জসিমকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাড়াটে খুনির সাথে আর্থিক লেনদেন করেছিল। মূলত কারা শাহিনকে ভাড়াটে খুনি নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছিল, শাহিনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেই সেই মূলহোতাদের নাম বেরিয়ে আসবে।’
সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, মাওলানা জসিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
-জেড
এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: