| |
               

মূল পাতা ফিচার দোহারে অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প


দোহারে অবহেলায় পড়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প


বিপ্লব ঘোষ, দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) থেকে     20 December, 2020     02:39 PM    


অযন্ত অবহেলায় পড়ে আছে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ঢাকার দোহারের রাইপাড়া ইউনিয়নের লক্ষ্মীপ্রসাদ গ্রামের পোদ্দার বাড়ি মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প। এ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের দাবি স্থানটিকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার। ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর সূচনার ঘোষণা দিলেও অজ্ঞাত কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। এমতাবস্থায় সেটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা দুঃখের সঙ্গে জানান, বিশ্বের প্রতিটি জাতি তাদের বীরত্বের নজির রেখেছেন। সংরক্ষণ করেছেন তাদের ইতিহাসের স্মৃতি। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, আমরা যাদের কারণে এই মহান বিজয় পেলাম তাদের স্মৃতি নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। স্থানীয় কিছু কুচক্রী মহল এই জাদুঘরটিকে আজও পরিপূর্ণ জাদুঘরে রূপান্তর করতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এদিকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে জাদুঘর ভবনটি।

তারা জানান, অখিল পোদ্দারের পরিত্যক্ত এই বাড়িতে ১৯৭১ সালে দোহার ও নবাবগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের ঘাঁটি ছিল। স্থানটি দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা সহজে খবরাখবর দেওয়া-নেওয়া করত। স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধারা বাড়িটিকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ঘোষণা করেন। এমতাবস্থায় সেটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে পরিণত হয়েছে। হারিয়ে যেতে বসেছে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পোদ্দার বাড়ি মুক্তিযুদ্ধ ক্যাম্প।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই বাড়িটির জমি প্রায় ৫২ শতাংশ। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ইকরাশী গ্রামের মৃত আনোয়ার খান মেম্বার এই বাড়িটি লিজ নেন। দীর্ঘদিন তিনি বাড়িটি ভোগ দখল করেন। ২০১২ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের আবেদনের ভিত্তিতে তৎকালীন দোহার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা বাড়িটি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি জাদুঘর করার ঘোষণা দেন।

পরবর্তী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল আমিন লিজ বাতিল করে ভবন ও জমি দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে হস্তান্তর করেন। সে অনুযায়ী অখিল পোদ্দারের বাড়িটি বর্তমান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ জাদুঘরের নিজস্ব সম্পত্তি হিসাবে বিবেচিত।

দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবুল এবিষয়ে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন এই বাড়িটি স্মৃতিবিজড়িত স্থান।  মুক্তিযোদ্ধারা এই বাড়িটিতে যাতায়াত করতেন। তিনি এই বাড়িটি দ্রুত সংস্কারে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

দোহারের চরকুশাই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম করম আলী বলেন, ১৯৭১ সালে এই বাড়িটির ভেতরে অবস্থান করতেন দোহার নবাবগঞ্জ ও মনিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা। এখান থেকে সুসংগঠিত হয়ে পাকহানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা ও পরিচালনা করতেন। দীর্ঘ ৪৯ বছর যাবৎ অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে এই ভবনটি। স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সংস্কারে দোহার উপজেলার অনেক মুক্তিযোদ্ধার অনুদানের বিষয়টিও জানান তিনি।

বাংলাদেশ কৃষকলীগের সহ-সভাপতি মো. আবুল হোসেন বলেন, স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মৃতি রক্ষায় দোহার নবাবগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্ন। সরকারিভাবে কিংবা সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে আসলেই প্রিয় মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নটি বাস্তবায়ন হতে পারে। গড়ে উঠতে পাড়ে একটি দর্শনীয় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর। যা আগামী প্রজন্মকে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে সাহায্য করবে।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এফ এম ফিরোজ মাহমুদ এবিষয়ে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘরটি দেশ প্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পদ। তাদের স্মৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে স্মৃতি জড়িত ভবনটির উন্নয়নে বিষয়ে আমি কাজ করব ইনশাল্লাহ।