আব্দুল্লাহ আল মারুফ 11 November, 2020 03:34 PM
নিজের তোলা পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার কিছু ছবি বিভিন্ন ফেইসবুক গ্রুপে শেয়ার করার পর 'পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা' নিয়ে শত শত মেসেজ পেয়েছি। সব মেসেজের উত্তর দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এই লেখার মাধ্যমে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি-
১. কাঞ্চনজঙ্ঘা কখন দেখা যায়?
=> অক্টোবরের মাঝামাঝি, কখনো অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে নভেম্বর এর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। (যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তবেই!) আসার আগে অবশ্যই আবহাওয়ার অবস্থা কনফার্ম করে আসবেন। নয়তো দূর থেকে কষ্ট করে পঞ্চগড় এসে কাঞ্চনজঙ্ঘা না দেখতে পেয়ে হতাশা নিয়ে ফিরতে হবে। অনেকেই হুটহাট করে এসে দেখতে না পেয়ে ফিরে গেছে।
আর এটা হয়তো অনেকেই জানেন যে, সান্দাকফু থেকেও সবসময় কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা মিলে না। নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত সময়ে সান্দাকফু গিয়েও মেঘের উপস্থিতি ও বিরুপ আবহাওয়ার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘা না দেখতে পেয়ে ফিরে এসেছে এমন উদাহারণও কম নেই।
২. পঞ্চগড়-এর কোন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘাসবচেয়ে ভালো দেখা যায়?
=> পঞ্চগড়ের সব ফাঁকা জায়গা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। এমকি মাঝে মাঝে ঠাকুরগাঁও থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। তবে তেঁতুলিয়া থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। তেঁতুলিয়ার যে কোনও ফাঁকা জায়গা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়, তবে তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো, শালবাহান, মাঝিপাড়া, রণচন্ডী, বেরং ব্রীজ এই জায়গাগুলো থেকে সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। যদি বলেন একটা নির্দিষ্ট জায়গা থেকে দেখব, তবে বলব তেঁতুলিয়া ডাকবাংলো।
৩. দিনের কোন সময় কাঞ্চনজঙ্ঘা সবচেয়ে ভালো দেখা যায়?
=> আমি বলব ঠিক সূর্যোদয় এর সময় আর সূর্যাস্তের সময় সবচেয়ে ভালো দেখা যায়। আর সারাদিনই মোটামুটি দেখা যায়। ভোরে লালচে বর্ণের (আমার সবচেয়ে প্রিয়) কিংবা সকালে শ্বেতশুভ্র আর বিকেলের পর গোধুলীর আলোয় লালচে।
৪. পঞ্চগড়ে যাতায়াতের ব্যবস্থা কী?
=> দেশের যে কোনও প্রান্ত থেকে সরাসরি পঞ্চগড়ে বাস ও ট্রেনে আসতে পারবেন। ঢাকা যাত্রীবাহী এসি, নন এসি নিয়মিত দিবা/রাত্রি ঢাকা-পঞ্চগড় চলাচল করে। ৬০০-৬৫০ টাকা (নন-এসি) ১০০০-১৬০০ টাকা (এসি) এছাড়া ঢাকা পঞ্চগড় রুটে প্রতিদিন ৩টি আন্ত-নগর ট্রেন চলাচল করে। সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে একতা এক্সপ্রেস, রাত ৮ টায় দ্রুতযান এক্সপ্রেস এবং রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে পঞ্চগড় এক্সপ্রেস (সেমি-ননস্টপ) ভাড়া ৫৫০ টাকা থেকে শুরু। দু একটা বাস সরাসরি ঢাকা থেকে তেঁতুলিয়া চলাচল করে।
চট্টগ্রাম থেকে ননএসি বাস ভাড়া ৯০০ টাকা।
রাজশাহী-পঞ্চগড় রুটে সরাসরি বিআরটিসি বাস চলাচল করে। ভাড়া- ৪৫০ টাকা তবে এই বাসে আমার তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে।
রাজশাহী থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে ছাড়ে (শুক্রবার সাপ্তাহিক বন্ধ)।
আর পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া এক ঘন্টার রাস্তা। বাস ভাড়া ৫০ টাকা।
৫. তেঁতুলিয়াতে থাকার ব্যবস্থা কী?
=> প্রথমেই বলে নিই আহামরি কোনও রিসোর্ট অথবা অত্যাধুনিক কোনও হোটেল এখানে নেই। যেহেতু বছরে কয়েকদিন মাত্র কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় তাই ঐ সময় ছাড়া টুরিস্টদের তেমন কেন চাপ থাকে না। তাই তেমন কোনও অত্যাধুনিক হোটেল বা রিসোর্ট গড়ে ওঠেনি এখানে।
তবে তেঁতুলিয়াতে ২ থেকে ৩টা আবাসিক হোটেল রয়েছে, আর একটি ডাকবাংলো। ডাকবাংলোতে থাকতে হলে অব্যশই উপজেলা পরিষদ তেঁতুলিয়া, বা ডিসি অফিস পঞ্চগড় এর রেফারেন্স লাগবে, আর কাঞ্চনজংঘা যখন দেখা যায় তখন ডাকবাংলো খালি পাওয়া কঠিন। ঐ সময় আবাসিক হোটেল বা ডাকবাংলো দুটোতেই জায়গা পাওয়া খুব দুষ্কর ব্যাপার, আসার আগে অব্যশই হোটেল/ ডাকবাংলোতে কনফার্ম করে আসবেন। চাইলে পঞ্চগড় শহরেও থাকতে পারেন, এখানে ভালো হোটেল আছে। মাইক্রোবাস ভাড়া করে রাখলে ভোরে পঞ্চগড় থেকে তেঁতুলিয়া রওনা করা যাবে।
জনাব হাবিব , ফোনঃ 01737359451 (কেয়ার টেকার, পুরাতন ডাকবাংলো তেঁতুলিয়া)
৫. ভালো খাবার কোথায় পাওয়া যায়?
=> আমি সাজেস্ট করব পঞ্চগড়ে মৌচাক হোটেল এবং তেঁতুলিয়ায় বাংলা হোটেল। খাবারের দাম সহনীয় থাকবে।
৬. কাঞ্চনজঙ্ঘার পাশাপাশি পঞ্চগড়ে আর দেখার মতো কী কী আছে?
★ বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট,
★ তেতুলিয়া ডাকবাংলো, মহানন্দার পাড়,
★ কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট,
★ মিনি মিনা বাজার,
★ আনন্দধারা রিসোর্ট (পূর্ব অনুমতি নিতে হবে)
★ মহারাজার দিঘী,
★ সলিল্যান্ড টি গার্ডেন,
★ রকস্ মিউজিয়াম,
★ মির্জাপুর শাহী মসজিদ
আরোও দর্শনীয় জায়গা আছে, তবে তেঁতুলিয়া ভ্রমণে এগুলোও উল্লেখ্যযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে কিছু কথা না বল্লেই নয়- পঞ্চগড়ের স্থানীয়দের জন্য কাঞ্চনজঙ্ঘা আহামরি কোনও বিষয় নয়। আমরা ছোটবেলা থেকেই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখছি। কিন্তু তবুও প্রতি বছর এই সময়ে আমার কাছে আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে নতুনভাবে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।
অন্যদিকে যারা কৃত্রিমতায় মগ্ন, কৃত্রিম সৌন্দর্য যাদের মস্তিষ্ককে আচ্ছাদিত করে রেখেছে তাদের কাছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মূল্যই বা কী? তারা পঞ্চগড়কে ওভাররেটেড জায়গা বলতেই পারেন, ট্রল করতেই পারেন। এতে আমি বিন্দু মাত্র বিচলিত হব না। তাদের বলব ইগনোর করতে। কিন্তু যারা প্রকৃতি প্রেমিক, যাদের পাহাড় - সমুদ্র কিংবা সমতল সকল স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবসময়ই কাছে টানে, যারা ভালবাসে প্রকৃতির বিশালতায় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে, তাদের জন্য প্রকৃতিকে খুব কাছে থেকে অনুভব করার একটি উৎকৃষ্ট জায়গা হতে পারে পঞ্চগড়।
দিগন্তবিস্তৃত সবুজ সমতলভুমির চা বাগান এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা অঞ্চল এই পঞ্চগড়। তেঁতুলিয়া ডাকবাংলোর পাশে মহানন্দার পাড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার অপরিসীম সৌন্দর্য যে কোনও প্রকৃতি প্রেমিককে প্রকৃতি প্রেমের শীতল অনুভূতির স্পর্শ দেবে। তাই আসুন এবং দেখুন প্রকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি পঞ্চগড়কে।
দয়াকরে যেখানে সেখানে টিস্যু বা ময়লা ফেলবেন না। অবশ্যই ময়লা আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। চারপাশ পরিষ্কার থাকলে তবেই ভ্রমণ হবে উপভোগ্য। ভ্রমনের সুস্থ পরিবেশ বজায় রাখবেন এবং প্রকৃতিটাকে সুন্দর রাখবেন।
ছবিটি তেঁতুলিয়া থেকে ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পঞ্চগড় শহরের কাছে ফুলতলা বাজারের পাশে করতোয়া নদীর পাড় থেকে তোলা। তোলার সময় : সকাল ৬ টা ৫৪ মিনিট, ৩১ অক্টোবর ২০২০
-জেড