রহমত নিউজ 26 November, 2023 11:09 AM
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে পদত্যাগ করলেন জমিয়তের সহ সভাপতি এডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের এক পোস্টের মাধ্যমে পদত্যাগের কথা জানান তিনি। এর আগে, দলীয় সিদ্ধান্ত ছাড়ায় গত বৃহস্পতিবার গণভবনে গিয়ে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন তিনি। এর একদিন পর শুক্রবার মাওলানা পাশার দল জমিয়ত তার সদস্যপদ স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচিত জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ সভাপতি এফেইসবুকের পোস্টে এডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী লিখেছেন, অশ্রুশিক্ত নয়নে প্রাণাধিক প্রিয় জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ থেকে পদত্যাগ করলাম। দেশ ও বিদেশের লাখো শুভাকাঙ্ক্ষীদের উদ্দেশ্যে আমার অন্তর জুড়ানো বক্তব্য হলো - আমাকে দল থেকে ঠেলে দেয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম। কারণ আমাকে যে দোষে দোষী সাব্যস্ত করা হলো এই দোষে স্থায়ী কমিটির কমপক্ষে চারজন সদস্য সম্পৃক্ত। অথচ আমার সদস্য পদ স্থগিত করার আগে আমাকে টেলিফোনে হলেও কথা বলতে পারতেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ ও দেয়া হলো না। আফসোসের বিষয় হলো জমিয়ত করতে গিয়ে জীবন যৌবন হারালাম- পরিবারকেও সময় দিতে পারলামনা। আমার সখের সিলেটের অভিজাত এলাকা উপশহরের দুটি বাসা এবং মধুবন মার্কেটের দোকানটিও বিক্রি করলাম। দুঃখ নেই, আপনারা ভালো থাকুন। তবে বিশ্বাস করি ষড়যন্ত্রকারীরা এই দুনিয়ায়ই লাঞ্চনার জিন্দেগী উপভোগ করবে। বিগত চল্লিশ বছর থেকে যাদের সাথে চলাফেরা করেছি-সকলের কাছে মাফ চাই। শেষ কথা হলো আমি সাবেক মন্ত্রী জমিয়তের গর্বের প্রতীক মুফতী ওয়াক্কাস রহ. এর মতো ধৈর্য আমার নেই। আমি ফকিরের ও ছেলে নই- ইনশাআল্লাহ নির্বাচনের পর মাঠে দেখা হবে। গুড বাই প্রাণের জমিয়ত।
এর আগে, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রাতে সিলেটের স্থানীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে ডভোকেট মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরী বলেছেন, আমি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কারণে দল যদি আমাকে বহিষ্কার করে, তাহলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবো। গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে দল আমার সদস্যপদ স্থগিতের কথা জানিয়েছে। কিন্তু নিয়ম হলো অভিযুক্তকে চিঠি দিয়ে তার বক্তব্য শোনা। অথচ আমাকে কারণ দর্শানোর কোনো নোটিশ না দিয়ে গণমাধ্যমে পাঠানো বার্তায় আমার পদ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনী ও গঠনতন্ত্রবিরোধী। দুই-একদিনের মধ্যে আমার সিদ্ধান্ত জাতিকে জানাবো। এখন নির্বাচনী এলাকায় আছি।
তবে, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, গঠনতন্ত্র অনুসারেই মাওলানা শাহীনূর পাশা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দলের শৃঙ্খলাবিরোধী অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গঠনতন্ত্রের ৫১(১) ধারা মোতাবেক দলের সভাপতি নির্বাহী ক্ষমতাবলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দলের আগামী কার্যনির্বাহী বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। গঠনতন্ত্রের কোথাও উল্লেখ নেই পদপদবী স্থগিত করতে হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে। বহিষ্কারের ক্ষেত্রে সেই প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু তাকে তো বহিষ্কার করা হয়নি, পদ স্থগিত করা হয়েছে।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী মন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের সঙ্গে ধানের শীষ প্রতীকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে সারাদেশে পরিচিতি পেয়েছিলেন শাহীনূর পাশা চৌধুরী। এরপর ২০০৫ সালে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদের মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে ৪ দলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে ধানের শীষ প্রতীকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এডভোকেট শাহীনূর পাশা চৌধুরী ১৯৯২ সাল থেকে জমিয়তের রাজনীতিতে যুক্ত। তিনি ছাত্র জমিয়তের সাধারণ সম্পাদক, যুব জমিয়তের সভাপতি, জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব ও সর্বশেষ দলের সহসভাপতি ছিলেন। ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি সুনামগঞ্জ-৩ আসন থেকে জমিয়তের খেজুর গাছ প্রতীকে নির্বাচন করেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট্রের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে পরাজিত হন।