| |
               

মূল পাতা সারাদেশ মহানগর দেশের সবখানে উন্নয়নের জোয়ার বইছে : আইজিপি


দেশের সবখানে উন্নয়নের জোয়ার বইছে : আইজিপি


রহমত নিউজ ডেস্ক     19 September, 2023     08:56 AM    


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের সবখানে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, উন্নয়নের এই ধারাকে আরো বহুদূর নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকার কারণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সেক্টরকে যেভাবে  উজ্জীবিত করেছেন, এর মধ্য দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় উন্নয়ন কার্যক্রমের একটা জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এই রংপুর এলাকাতে আলু চাষ হয় বা বিভিন্ন সবজি চাষ হয়। এখানকার মানুষ যা চাষ করছে তার জন্য কোল্ডস্টোরেজ দরকার হয়, এটাও হবে। জিনিসপত্রের দাম, পাওয়া না পাওয়ার বিষয়ে অনেক কথাবার্তা আছে, তবে আমি মনে করি এসব হবে। এখন উৎপাদন বাড়ছে। আগে দক্ষিণবঙ্গের লোকেরা কাজের সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় যেতো, এখন তাদের এলাকাতে বিভিন্ন বিদেশি ফল চাষাবাদ হচ্ছে। সুন্দরবনে পর্যটন বিকশিত হচ্ছে, রংপুরেও হচ্ছে। সবদিকে একটা উন্নয়নের জোয়ার বইছে।

সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। স্বাগত বক্তব্য দেন আরপিএমপি কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার হাবিবুর রহমান, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ডেন্ট বাসুদেব বনিক, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. হাসিবুর রশিদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরী, র‌্যাব-১৩ এর কমান্ডার আরাফাত ইসলাম, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, মহানগর কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন বাবলু।

আইজিপি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য দরকার টেকসই নিরাপত্তা। টেকসই নিরাপত্তা থাকলে টেকসই শান্তি আসবে, টেকসই শান্তি থাকলে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। আমরা এই লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়েছি। আরও বহুদূর যেতে হবে। আমরা এগিয়েছি বলেই আমাদের মাথাপিছু আয় ৫০০ ডলার থেকে ৩ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পেরেছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা আগামী দিনেও রংপুরসহ দেশবাসীর সহযোগিতার প্রত্যাশা করছি। কোনো এক সময় এই বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের হোলি খেলা শুরু হয়েছিল। সারা দেশের মাঝে একসঙ্গে ৬৩ জেলায় বোমা হামলা হয়েছিল। সাধারণ মানুষদের মধ্যে যারা চাকরি করতেন তাদেরকে বিভিন্ন বাহিনীকে ট্যাক্স দিতে হয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দায়িত্ব গ্রহণের পর জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্সের নীতি গ্রহণ করেন। আমাদের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি করেছেন। আমাদের লোকবল বৃদ্ধি ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। দেশকে ডিজিটালাইজড করেছেন। আমরা এখন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে সক্ষমতা অর্জন করেছি। দেশে আজকে স্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন এদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৫০০ ডলার। আর এখন আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় ৩০০০ ডলার, আমাদের উন্নতি হয়েছে। আমি যখন নীলফামারীতে ছিলাম ওই সময় একজন পুলিশ সুপার হিসেবে যে বেতন পেতাম, তা দিয়ে নিয়মিত বিমানে যাতায়াত করা সম্ভব ছিল না। আগে একটা বিমান ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে সৈয়দপুরে আসত, তারপর আবার রাজশাহী হয়ে ঢাকায় ফিরত। আর এখন সৈয়দপুর থেকে প্রতিদিন নিয়মিত ১৮টি ফ্লাইট চলাচল করছে। এর মানে আমাদের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে, আর্থিক সক্ষমতা বেড়েছে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রংপুরের মানুষ সব সময় সহায়তা করেছেন। রংপুরের মানুষ শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমি নীলফামারীতে প্রায় সাড়ে তিন বছর পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এজন্য এই এলাকার মানুষের আমার একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়ে গেছে এবং তাদের সম্পর্কে আমি জানি, আমার সম্পর্কেও তারা জানে। এখানকার মানুষ আইনশৃঙ্খলা ও প্রশাসনের প্রতি আন্তরিক। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য রংপুরের মানুষ সব সময় সহায়তা করে আসছেন। রংপুরের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সব সময় ভালো থাকে। যারা রংপুরের আবেগকে বুঝতে পারবে, সেরকম অফিসারদেরকে আমরা রংপুরে দিয়ে থাকি। এই নগরীর প্রধান সমস্যা হলো মাদক, জুয়া ও যানজট। নিয়মিত কাজ করলে এগুলো সমস্যার উন্নতি হবে। মাদকের জন্য আভিযানিক কার্যক্রমের পাশাপাশি সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে কার সঙ্গে মিশছে সেটা নজরে রাখতে হবে। অভিভাবকদের সচেতনতা বাড়ানো ও প্রত্যেক নাগরিককে নিজের জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আগামী দিনে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে, স্মার্ট পুলিশিং বিনির্মাণে সবার সহযোগিতা চান আইজিপি।

এর আগে বেলা ১১টায় রংপুর নগরীর সুরভী উদ্যানের সামনে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর সেখান থেকে একটি বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত সুধী সমাবেশে অংশ নেন অতিথিরা। অনুষ্ঠানে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেককাটা পর্ব শেষে একটি স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এছাড়াও বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গৃহীত বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এছাড়াও মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম গতিশীল করার লক্ষ্যে একটি গাড়ি উপহার দেন কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামকে। এ বছর পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশেষ ট্রাফিক সেবা সপ্তাহ, মাদকবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্ট, বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান, রচনা লেখা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আরপিএমপি। এছাড়াও পুলিশের সঙ্গে নগরবাসীর যোগাযোগ স্থাপনে ‘হ্যালো আরপিএমপি’ নামে একটি অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এর আগে ২০১০ সালের ২৫ জানুয়ারি মন্ত্রিপরিষদের সভায় রংপুর বিভাগ অনুমোদন এবং একই বছর ৯ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে রংপুর বিভাগের কার্যক্রম শুরুর পর এখানে মেট্রোপলিটন পুলিশের দাবি ওঠে। ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ১ হাজার ১৮৫টি পদ নিয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয় এবং ১৯ এপ্রিল তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ পুলিশের নবীনতম ইউনিট হিসেবে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে রংপুর মহানগরী পুলিশ বিল-২০১৮ পাস হয়। প্রায় ১০ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা নিয়ে ২৪০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) কার্যক্রম ছয়টি থানা নিয়ে শুরু হয়।


এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: রংপুর