| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক বাংলাদেশে মার্কিন চাপে সুযোগ নেবে চীন, উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের


ভারতীয় গণমাধ্যমে সূত্রবিহীন রিপোর্টে দাবি

বাংলাদেশে মার্কিন চাপে সুযোগ নেবে চীন, উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     29 August, 2023     01:03 PM    


বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ লক্ষ্যে নির্বাচনে বাধা দিলে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দিয়ে রেখেছে দেশটি। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে মার্কিন চাপে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। আর এই বিষয়ে উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের।

মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস এক প্রতিবেদনে এ দাবি করেছে। অবশ্য সূত্রবিহীন ওই রিপোর্টে নির্দিষ্ট করে দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্য নেই।

হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, আসন্ন সাধারণ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ‘চরমপন্থি শক্তির’ হাতকে শক্তিশালী করতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে পারে বলে ভারত ‘যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে’। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি এই তথ্য জানিয়েছেন বলে সংবাদমাধ্যমটি দাবি করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই লোকেরা জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি আলাপ-আলোচনা চলাকালীন যুক্তরাষ্ট্রকে এই বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ তার উদ্বেগ জানিয়েছে। নয়াদিল্লির বিশ্বাস, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ দিচ্ছে তা বাংলাদেশকে ‘চীনের আরও কাছে ঠেলে দিতে পারে’। আর তেমনটি হলে তা এই অঞ্চলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা দাবি করেছে। যদিও ভারতীয় পক্ষ স্পষ্ট করে বলেছে- তারাও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়, তারপরও এই বিষয়ে খুব বেশি চাপ দেওয়া হলে তা শুধুমাত্র শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী চরমপন্থি ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে বলে তারা মার্কিন নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছে।

#SheikhHasina, who has been in power since 2009 and is eyeing an unprecedented fourth consecutive term, is seen as one of #India’s closest allies in the neighbourhood.

(@Rezhasan reports)https://t.co/pdudqXUTyC

— Hindustan Times (@htTweets) August 29, 2023

২০২১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের আধাসামরিক বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এবং র‌্যাবের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও চলতি বছরের মে মাসে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে বাংলাদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকিও দেয় বৈশ্বিক মোড়ল এই দেশটি। একইসঙ্গে ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকার প্রয়োগ করা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করার জন্য সহিংসতাকে কাজে লাগানো, এবং এমন কোনও পদক্ষেপ – যার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা সংবাদমাধ্যমকে তাদের মত প্রচার থেকে বিরত রাখার মতো কার্মকাণ্ডেও ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানানো হয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, গত ২৩ আগস্ট দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ওই বৈঠকে জিনপিংয়ের করা মন্তব্যের পর মার্কিন চাপের জেরে চীনের বাংলাদেশে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেদিনের সেই বৈঠকে শি জিনপিং বলেন, চীন বাংলাদেশে বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে এবং উভয় দেশ নিজেদের মূল স্বার্থে একে অপরকে সমর্থন করার জন্য ঢাকার সাথে কাজ করবে বেইজিং। অন্যদিকে বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক ‘পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার’ নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিবেশী অঞ্চলে ভারতের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত মিত্র হিসাবে বিবেচনা করে থাকে নয়াদিল্লি। ভারত-বিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে দমন করার পাশাপাশি উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য প্রধান প্রধান বন্দরগুলো ব্যবহারের সুযোগ দেওয়াসহ জ্বালানি এবং বাণিজ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বাড়িয়েছে হাসিনার সরকার।

বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আগামী বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে পারে এবং সেই নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে হাসিনার সরকারের ওপর যে চাপ দেওয়া হচ্ছে তা বিরোধী দল বিএনপিকে উৎসাহিত ও সংগঠিত করছে এবং তারা একের পর এক বিশাল সমাবেশ করছে। উপরে উদ্ধৃত একজন ব্যক্তি বলেছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করা এবং ২০১৯ সালের নির্বাচনে মাত্র সাতটি আসনে জয় পাওয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আসন্ন নির্বাচনে কয়েক ডজন আসনে জিতবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতের পুনরুজ্জীবন পাওয়ার বিষয়টিও নয়াদিল্লিতে উদ্বেগের সাথে দেখা হচ্ছে। গত ১০ জুন ঢাকায় ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করে জামায়াত। এই দলটি সর্বদা ‘ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে’ বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। জামায়াতের শক্তিশালী হয়ে ওঠা ‘চরমপন্থি শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে’ বলে ভারত বিশ্বাস করে এবং আর সেটি বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া ভারতীয় পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে চলতি মাসের শুরুর দিকে নয়াদিল্লি সফর করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। সফরে তারা বিজেপির ঊর্ধ্বতন নেতা ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন এবং সেখানে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বাংলাদেশের আসন্ন সাধারণ নির্বাচনের গুরুত্ব তুলে ধরেন তারা।