রহমত নিউজ ডেস্ক 29 August, 2023 01:09 PM
বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশির সুযোগসহ নিপীড়নমূলক ধারা বহাল রেখে এবং অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই মন্ত্রিসভায় সাইবার নিরাপত্তা আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের উদ্বেগ, মতামত ও প্রস্তাবনা উপেক্ষা করে আইনটির চূড়ান্ত অনুমোদন সরকারের একগুঁয়ে ও দমনমূলক মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএফইউজের সভাপতি এম আবদুল্লাহ ও মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে সাংবাদিক নেতৃদ্বয় বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত আইনটি কার্যকর হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে বিপন্ন করবে এবং ভয়ের পরিবেশ অক্ষুণ্ন থাকবে। বিএফইউজের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের ৮টি ধারা বাতিল ও ৪টি ধারা সংশোধনের প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলেও তা অগ্রাহ্য করা দুঃখজনক। বিএফইউজে আশা করে যে, আইনটি সংসদে পাশের আগেই স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল ও বিতর্কিত ধারা সংশোধন করা হবে। গত ১০ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, আইনটি প্রণয়নের আগে অংশীজনের সঙ্গে কথা বলা হবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কারও সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি। সাংবাদিকদের জন্য এই আইনের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় সাব-ইন্সপেক্টর মর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়া। এই ধারাটি আইনের অপপ্রয়োগের সবচেয়ে ভয়ংকর হাতিয়ার। এটি আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় ছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আছে, এখন আবার সাইবার সিকিউরিটি আইনেও রাখা হয়েছে। এছাড়া মানহানির অপরাধসহ যেসব অপরাধ ফৌজদারি ধারায় বিচারের সুযোগ রয়েছে, সেই ধারা এই আইনে এনে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে যা সংবাদকর্মীদের জন্যে খুবই উদ্বেগের। এ বিধান অবশ্যই বাতিল করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ধারা ২৫ (মিথ্যা বা আপত্তিকর তথ্য প্রকাশ), ধারা ২৯ (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ) এবং ধারা ৩১ (আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানো বা উসকানি) সাইবার নিরাপত্তা আইনের খসড়ায় অবিকৃত রয়েছে। ২৫ ধারায় ‘রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুণ্ন’-সংক্রান্ত কোনো ব্যাখ্যা নেই। এসব ধারার যথেচ্ছ অপব্যবহার হতে দেখা গেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। সাইবার আইনেও কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা ছাড়া এসব বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এসব ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছিল বিএফইউজে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রায় সব ধারা হুবহু থাকা এ আইনের চারটি ধারা জামিন অযোগ্য থাকছে। অন্য ধারাগুলো জামিনযোগ্য রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। জামিনযোগ্য করা বা শাস্তি কমানোর মাধ্যমে পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হবে না। কারণ, কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার করে জামিন না দিয়ে জেলে দীর্ঘসময় আটকে রাখার অনেক নিকৃষ্ট উদাহরণ রয়েছে। আদালতের ওপর সরকারের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণের ফলে জামিন পাওয়া না পাওয়া আইনি বিধানের পরিবর্তে সরকারের বা প্রভাবশালীদের খেয়ালখুশির ওপর নির্ভর করে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, শুধু খোলস পরিবর্তন করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে দেশি-বিদেশি উদ্বেগ ও জনগণের ভয়-শঙ্কা কাটবে না। অংশীজনদের প্রত্যাশা নতুন আইনে সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করা হয়েছে। ডিজিটাল আইনের সঙ্গে এর কোনো মৌলিক পার্থক্য নেই। কিছু ক্ষেত্রে সাজার মেয়াদ কমানো বা জামিনযোগ্য করা ওরফে আইওয়াশ এবং আন্তর্জাতিক মহলকে ধোঁকা দেওয়ার অপচেষ্টা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শিশু, কিশোর, নারী, বয়স্ক, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের ওপর সীমাহীন নিপীড়ন চালানো হয়েছে। যে কারণে সংবাদকর্মী থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন এমনকি সাধারণ মানুষও ডিজিটাল আইনটি বাতিল চেয়েছিল। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সরকার সাইবার সিকিউরিটি আইন নাম দিয়ে দমন-নিপীড়নের হাতিয়ারটি একইভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। বিএফইউজে নেতারা অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ও নিপীড়নমূলক ধারা বাতিল ছাড়া আইনটি সংসদে পাশ থেকে বিরত থাকার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছেন।