| |
               

মূল পাতা সারাদেশ রাজধানী নগরে দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নে বিশিষ্টজনদের ১০ সুপারিশ


নগরে দরিদ্রদের জীবনমান উন্নয়নে বিশিষ্টজনদের ১০ সুপারিশ


রহমত নিউজ     28 August, 2023     03:03 PM    


দেশে বস্তি এলাকার মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় ৮২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। সম্প্রতি অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (এএলআরডি) এক গবেষণা এ তথ্য উঠে এসেছে। এসব নগর দরিদ্র মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নীতিগত, অধিকারগত এবং মৌলিক পরিষেবার বিষয়ে বিশিষ্টজনেরা ১০টি সুপারিশ দিয়েছেন।

সোমবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এবং এইচডিআরসি যৌথভাবে আয়োজিত ‘নগর দারিদ্র্য: বস্তিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ভূমিতে অধিকার এবং নাগরিক সেবায় অভিগম্যতা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।সেমিনারে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান, দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দীন আহমেদ, এএলআরডি নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ।

এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অর্থনীতি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত।তিনি বলেছেন, দেশে বস্তি এলাকায় মোট জনগোষ্ঠীর ৮২ শতাংশ দরিদ্র, যা মোট জনগোষ্ঠীর দারিদ্র্যের হিসাবে ৪১ শতাংশের কম নয়। যদিও সরকার বলছে, বস্তিবাসী ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর ১৯ শতাংশ দরিদ্র। তারপরও অভিবাসন হচ্ছে, যাকে আমরা বলছি ‘গলাধাক্কা অভিবাসন’। কাজ না পাওয়া, সঠিক সময়ে কৃষি ঋণ না পাওয়াসহ নানা কারণ রয়েছে। বস্তিবাসীকে অন্য ব্যয় সংকুলান করতে খাদ্য ব্যয় এবং শিক্ষা ব্যয় কমাতে হচ্ছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ অন্য বহু দারিদ্র্য বাড়ছে। নগর দরিদ্রদের ব্যাংক ঋণ নেই। অন্যদিকে নগর দরিদ্রদের আমরা অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলে আসছি। গ্রাম থেকে যে অভিবাসন হচ্ছে তা নয়। গ্রাম থেকে ‘গলাধাক্কা অভিবাসন’ হচ্ছে। ৪৫ লাখ মানুষ এ অভিবাসনের শিকার।

সেমিনারের সভাপতিত্ব করেন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অ্যাড. সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, আমরা যে সুপারিশগুলো দিয়েছি, এগুলো বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা রয়েছেন তারা যদি ঠিক মতো কাজ করেন তাহলেই সম্ভব হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে আমাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বস্তি শুধু কোনো ভূখণ্ড নয়, এটা হচ্ছে মানুষের জীবন। এই মানুষের জীবনকে জীবনের মতো করে বিকশিত করে দেবার যে সুযোগ, তা বাস্তবায়ন সম্ভব। আর এটা পারবে যারা সমাজকে নেতৃত্ব দিচ্ছে তাদের মাধ্যমে। আমি মনে করি সরকারের সব ঠিকই আছে, শুধু শাসনব্যবস্থা ঠিক নাই। মানুষের যে মৌলিক চাহিদা সেগুলো বিবেচনা করে যদি উন্নয়নের পরিকল্পনা করা যেত, তাহলে অনেক আগেই এই অবস্থার পরিবর্তন আনা যেতো।

সেমিনারে নীতিগত, অধিকারগত এবং মৌলিক পরিষেবার বিষয়ে ১০ সুপারিশ দেওয়া হয়। সেগুলো হলো-

১. অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর পরিকল্পনা: শহুরে দরিদ্র চাহিদাগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে নীতিগুলি তৈরি করা, মৌলিক পরিষেবাগুলিতে অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা এবং প্রাসঙ্গিক সরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে সহযোগিতা এবং টেকসই উন্নয়ন কৌশলগুলির জন্য উন্নয়ন অংশীদার এবং বেলওয়েদার সংস্থাগুলিকে নিযুক্ত করা।

২. জমির মেয়াদের নিরাপত্তা: শহুরে দরিদ্র ভূমি অধিকার রক্ষার জন্য ভূমি সংস্কার বাস্তবায়ন, জমি দখল এবং আবাসন অ্যাক্সেস সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা এবং সাংবিধানিক নীতির সাথে নীতিগুলি সারিবদ্ধ করা।

৩. ভূমি অধিকার সুরক্ষা: ভূমি বাস্তুচ্যুতির বিরুদ্ধে শহুরে দরিদ্রদের সুরক্ষার জন্য আইন প্রয়োগ করুন এবং লঙ্ঘনের জন্য প্রতিকারের ব্যবস্থা স্থাপন করুন।

৪. অংশগ্রহণমূলক শাসন: স্থানীয় শাসন, প্রতিরোধে শহুরে দরিদ্রদের অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা। এবং সম্প্রদায়-ভিত্তিক সংস্থাগুলিকে শক্তিশালী করা।

৫. আইনি সহায়তা এবং সচেতনতা: শহুরে দরিদ্রদের তাদের সম্পর্কে শিক্ষিত করার জন্য আইনি সহায়তা পরিষেবা সরবরাহ করা।

৬. প্রাথমিক মৌলিক পরিষেবার বিধান: শহুরে দরিদ্র চাহিদার জন্য উপযুক্ত বিশুদ্ধ জল, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষার ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেস নিশ্চিত করা।

৭. অবকাঠামো উন্নয়ন: নিম্ন আয়ের জনবসতিতে উন্নত অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করুন, জীবনযাত্রার অবস্থা উন্নত করুন এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকি প্রতিরোধ করা।

৮. জীবিকার সুযোগ: বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণে চাকরির নিয়োগ, এবং মাইক্রো- অনুমোদন উন্নত অর্থনৈতিক সম্ভাবনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।

৯. সামাজিক নিরাপত্তা জাল: আর্থিক জন্য ব্যাপক সামাজিক নিরাপত্তা নেট প্রোগ্রাম উন্নত করা। এবং সংকটের সময় দুস্থদের জন্য সহায়তা, খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা করা।

১০. ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি: ডিজিটাল সাক্ষরতা প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তি অ্যাক্সেস, শিক্ষা এবং যোগাযোগের পথ খোলার মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজনের সেতুবন্ধন তৈরি করা।


এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: ঢাকা ঢাকা