| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক এশিয়া চীনের অর্থনীতি এখন গভীর সংকটে


চীনের অর্থনীতি এখন গভীর সংকটে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     22 August, 2023     11:27 AM    


দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে কারখানা, আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর সড়ক নির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ করে অর্থনীতিতে এগিয়ে গেছে চীন। এই কর্মপরিকল্পনা দেশটিকে এনে দিয়েছে অসাধারণ সাফল্যও। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশটি। বিশ্বব্যাপী রপ্তানিতে নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার পাশাপাশি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশের মর্যাদাও অর্জন করেছে চীন। তবে দেশটির সেই পুরোনো মডেল এখন ভেঙে পড়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করলেও সেখান থেকে আসছে না আয়। প্রবৃদ্ধিও মন্থর। কমে গেছে বিদেশি বিনিয়োগ। ফলে চীনের অর্থনীতি এখন গভীর সংকটে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

রবিবার (২০ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

চীন এখন ঋণে জর্জরিত। নির্মাণসামগ্রীও ফুরানোর পথে। চীনের কিছু অংশে সেতু আর বিমানবন্দর রয়েছে অব্যবহৃত। লাখ লাখ অ্যাপার্টমেন্ট খালি পড়ে আছে। অথচ যুগ যুগ ধরে এসব প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে দেশটি। সেসব প্রকল্প থেকে এখন আয় ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। এসব সমস্যা চীনের হতাশাজনক অর্থনৈতিক তথ্যই দেয়। এর বাইরে দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউনানসহ দূরের প্রদেশগুলোতেও একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এসব এলাকায় করোনার সময় শূন্য কভিড নীতির কারণে দীর্ঘ লকডাউন ছিল। অন্য এলাকাগুলোরও একই অবস্থা। বেসরকারি বিনিয়োগ ও রপ্তানি কমে যাওয়ায় কর্মকর্তারা বলছেন, অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ঋণ নেওয়া এবং নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চরম ধীরগতির প্রবৃদ্ধির যুগে প্রবেশ করছে চীন। জনসংখ্যা কমে যাওয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে চরম দ্বন্দ্বের কারণে আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। এর মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ ও বাণিজ্য হুমকিতে রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক এবং অর্থনৈতিক সংকট বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম টুজ বলেন, আমরা দেশটিতে অর্থনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে নাটকীয় গতিপথের মধ্যে একটি পরিবর্তন দেখছি। চীনের ভবিষ্যতের বিষয়েও কোনো সুসংবাদ নেই। কারণ, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী বছরগুলোতে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪% এর নিচে রেখেছে। এটি দেশটির গত ৪০ বছরের অধিকাংশ সময়ের তুলনায় অর্ধেকেরও কম।

লন্ডন-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিক্সের তথ্যমতে, চীনের প্রবৃদ্ধির প্রবণতা ২০১৯ সালে ৫% থেকে ৩ শতাংশে নেমে আসে। ২০৩০ সাল নাগাদ এটি প্রায় ২ শতাংশে নেমে আসবে। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির আকার দ্বিগুণ করার বিষয়ে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের লক্ষ্য পূরণ ব্যর্থ হবে।এছাড়া, মধ্যম আয় থেকে উন্নত দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়া এবং বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে যাওয়ার দীর্ঘদিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও অপূর্ণই থেকে যাবে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির উৎপাদন কমার পাশাপাশি রপ্তানিও হ্রাস পেয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে যুবকদের বেকারত্ব। এমন দুর্বল অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী চীনা নেতা জিনপিংয়ের জনপ্রিয়তাও কমিয়ে দিতে পারে। তবে দেশটিতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে বিরোধিতার কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত নেই। ক্ষমতাসীন দলে জিনপিংয়ের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।