| |
               

মূল পাতা আন্তর্জাতিক ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ শতাংশ দূষণের জন্য ১০ শতাংশ ধনী দায়ী : গবেষণা


যুক্তরাষ্ট্রে ৪০ শতাংশ দূষণের জন্য ১০ শতাংশ ধনী দায়ী : গবেষণা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক     19 August, 2023     02:24 PM    


যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণে পরিবেশদূষণ ও উষ্ণায়ন হয়, তার ৪০ শতাংশের জন্য দায়ী সেই দেশের মাত্র ১০ শতাংশ শীর্ষস্থানীয় ধনী। শুধু তাঁদের বিশাল আবাসনব্যবস্থা ও ব্যক্তিগত জেট বিমানের কারণেই দূষিত হয় না, তাঁরা যেসব কোম্পানিতে অর্থ বিনিয়োগ করছেন, সেগুলো থেকে নির্গত জীবাশ্ম জ্বালানিজনিত দূষণও বেশ দায়ী। এ কারণেই মূলত বেশি পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবারে পিএলওএস জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে কার্বন নিঃসরণ করে, এমন পণ্যের পরিবর্তে পরিবেশদূষণকারী কোম্পানিগুলোর ওপর করারোপে মনোনিবেশ করার জন্য মার্কিন সরকারকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। খবর সিএনএনের।

গবেষকেরা কার্বন দূষণের সঙ্গে জড়িত আর্থিক লেনদেনকে সংযুক্ত করতে প্রায় ৩০ বছরের আর্থিক তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। তাঁরা যেসব কোম্পানি সরাসরি পরিবেশদূষণে ভূমিকা রাখছে, সেগুলোর পাশাপাশি যাদের উৎপাদিত পণ্যর মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, তাদেরও এই গবেষণার আওতায় রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়, বিভিন্ন তেল উৎপাদনকারী কোম্পানির জ্বালানি তেল যখন গ্রাহকেরা ব্যবহার করেন, তাতেও ব্যাপকভাবে পরিবেশদূষণ ঘটে।

গবেষণা অনুযায়ী, গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিটি ডলারের অর্থনৈতিক কার্যকলাপে কী হারে কার্বন দূষণ ঘটে, তা–ও পর্যালোচনা করেছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁরা একজন ব্যক্তি কোন ধরনের শিল্পের সঙ্গ জড়িত, কোথায় কী পরিমাণে বিনিয়োগ করেছেন এবং তাঁর আয়ই–বা কত—এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছেন। দেশটির ৪০ শতাংশ দূষণ, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নে ভূমিকা রাখে—এর জন্য দায়ী দেশটির মাত্র ১০ শতাংশ অতিধনী ব্যক্তি। এই ধনীদের ন্যূনতম আয় ১ লাখ ৭৮ হাজার ডলার। তবে ১০ শতাংশ ধনীর মধ্যে ১ শতাংশের আয় ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বেশি। আর ৪০ শতাংশ পরিবেশদূষণ ও উষ্ণায়নের মধ্যে ১৫ থেকে ১৭ শতাংশই করেন ওই ১ শতাংশ ধনী। যুক্তরাষ্ট্রের ১ শতাংশ শীর্ষস্থানীয় ধনী অর্থ, বিমা, খনি—এসব খাতে বিনিয়োগ করেছেন। তাঁরা বছরে প্রায় তিন হাজার টন দূষিত কার্বন উৎপাদন করেন। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাঁদের বার্ষিক কার্বন দূষণের পরিমাণ ২ দশমিক ৩ টনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করতে হবে। জলবায়ু–সংকট মোকাবিলায় নীতিনির্ধারকদের করনীতি পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়েছে।

ম্যাসাচুসেটস আমহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকসই উন্নয়ন বিজ্ঞানী ও এই গবেষণার লেখক জ্যারেড স্টার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে ধনী শূন্য দশমিক ১ শতাংশ পরিবার মাত্র ১৫ দিনে যে পরিমাণ কার্বন দূষণ করে, তার আর্থিক মূল্য দেশের সবচেয়ে গরিব ১০ শতাংশ মানুষের সারা জীবনের আয়ের সমান।

সুইডেনের লান্ড ইউনিভার্সিটির টেকসই উন্নয়নবিজ্ঞানের সহযোগী অধ্যাপক কিম্বার্লি নিকোলাস বলেন, এই গবেষণা প্রমাণ করেছে যে আয় ও বিনিয়োগ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে কতটা ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব শুধু একজন মানুষের আয়ের ক্ষেত্রেই নয়, বরং শিল্পের ওপরও নির্ভর করে। একজন ধনী ব্যক্তি ৯ লাখ ৮০ হাজার ডলার আয় করতে জীবাশ্ম জ্বালানিজনিত যে দূষণ ঘটান, তার সমপরিমাণ দূষণ করতে হাসপাতালশিল্পের সঙ্গে জড়িত একজন ধনী ব্যক্তির আয় হবে ১ কোটি ১০ লাখ ডলার। ধনীদের অর্থ উপার্জন প্রতিযোগিতায় জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব, তা শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সমস্যা নয়। গত বছরে অক্সফামের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বব্যাপী ১০ শতাংশ ধনীর একেকজন গড়ে যে পরিমাণ দূষণ ঘটান, তা একজন সাধারণ মানুষের চেয়ে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ গুণ বেশি।


সূত্র : প্রথম আলো