রহমত নিউজ ডেস্ক 18 July, 2023 02:50 PM
রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর প্রথমে নবজাতক ও পরে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় তোলপাড়ের মধ্যে একই হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় হাবিবা হীরা নামে একজন শিশুর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের দাবি, ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুকে অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের ফলে তার সন্তানের লিভার ড্যামেজ হয়ে যায় এবং এক পর্যায়ে মৃত্যু হয়। এ ঘটনা সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের শাস্তি দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (ক্র্যাব) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন শিশুটির মা এডভোকেট সুফিয়া পারভীন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে সুফিয়া পারভীন বলেন, আমার একমাত্র সন্তান হাবিবা হীরা চৌধুরীর বয়স মাত্র ৬ বছর। সে ওয়াইডব্লিউসি স্কুলের ক্লাস ওয়ানের ছাত্রী। পাশাপাশি ব্রিটিশ কাউন্সিলের একটি কোর্সেরও ছাত্রী ছিলেন। শরীরে জ্বর নিয়ে গত ৭ জুলাই ঢাকা সেন্ট্রাল হসপিটালে ৪২২ নম্বর কেবিনে অধ্যাপক এ এফ এম সেলিমের তত্ত্বাবধানে ভর্তি করা হয়। এই দিন তার শরীরে ডেঙ্গু পজিটিভ আসে। প্রথমে স্যালাইনের সঙ্গে জ্বরের ওষুধ প্রয়োগ করেন চিকিৎসকরা। কিন্তু ওই রাতেই তাকে স্যালাইনের মাধ্যমে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। পরে ‘রোফেসিন’ নামক উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হয়। এভাবে কয়েক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগের পর আমার মেয়ের লিভার ড্যামেজ হতে থাকে। তার পায়খানার সঙ্গে রক্ত আসতে শুরু করে। কিন্তু হাসপাতালে বিষয়টি জানানোর জন্য নার্স ছাড়া কাউকে পাওয়া যায় না। চারটি ফ্লোরের জন্য একজন ডিউটি ডাক্তার থাকেন। বসেন সপ্তম তলায়, খুঁজতে গেলে বেশিরভাগ সময় পাওয়া যায় না। অধ্যাপক সেলিম ভর্তির পর থেকে মাত্র তিনবার ডিউটি রোগীর কাছে এসেছেন। এখানে চিকিৎসকই খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এডভোকেট সুফিয়া পারভীন বলেন, গত ১০ জুলাই রাতে ডাক্তার আমার মেয়েকে দেখতে এসে তার ব্লাড প্রেসার ও পালস পাচ্ছিলেন না। এরপর আমাদের বলেন, রোগীর অবস্থা ভালো না। তাকে জরুরি ভিত্তিতে পিআইসিইউ সাপোর্ট দিতে হবে। সেই ব্যবস্থা সেন্ট্রাল হসপিটালে নেই। তাদের পরামর্শে আমার সন্তানকে রাত ১১টার দিকে মহাখালী ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে বেশ কিছু পরীক্ষার মধ্যে ফেরিটিন নামক একটি পরীক্ষা দেওয়া হয়। যেখানে একজন শিশুর ফেরিটিনের মাত্রা ৭ থেকে ১৪০ থাকার কথা সেখানে হাবিবার ফেরিটিন ধরা পড়ে ২১ হাজার ৪৮৩। শ্বাস, হার্টসহ অন্যান্য সমস্যা দেখা দেয়। এ রিপোর্ট দেখেই সেখানকার চিকিৎসকরা বিড়বিড় করে বলে বসেন- ‘সব তো শেষ করে নিয়ে আসছেন। রোগীর লিভার ফাংশন পুরো শেষ হয়ে গেছে’। তারপর পিআইসিইউ নিয়ে চেষ্টা শুরু করেন তারা। কিন্তু আমার মেয়েকে আর বাঁচাতে পারেনি। ডেঙ্গু রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যায় না- এটা ডাক্তাররা জানিয়েছেন। আর যদি কোন কারণে নিতেই হয় তাহলে তার ফেরিটিন পরীক্ষা করে তারপর প্রয়োগ করতে হয়। কিন্তু সেন্ট্রাল হসপিটাল থেকে সেটা করা হয়নি। মাত্র কিছুদিন আগেই সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসায় একজন নবজাতকসহ প্রসূতি মায়ের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করেছিলাম, এত কিছু হয়ে যাওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে হয় তাদের ভুল বুঝতে পেরে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু তারা সেটা করেননি। জানি আমি মেয়েকে আর ফিরে পাবো না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অবহেলার জন্য তাদের শাস্তি চাচ্ছি।