রহমত নিউজ 15 July, 2023 10:45 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সামনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। সেখানে বেশির ভাগ দক্ষ জনগোষ্ঠী প্রয়োজন পড়বে। দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ইনকিউবেটর সেন্টার তৈরি করে কম্পিউটার ট্রেনিং দেয়া শুরু করেছি। তাছাড়া স্কুল লেভেল থেকে কম্পিউটার ল্যাব করে দিচ্ছি, সেখানে ট্রেনিং দিচ্ছি। পাশাপাশি ন্যানো টেকনোলজির জন্য একটি আইনও করে দিয়েছি। ন্যানো টেকনোলজির ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছি। আইন ইতিমধ্যে কেবিনেট অনুমোদন দিয়েছি। দ্রুতই আইন পার্লামেন্টে পাস করে দেব। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযুক্ত স্মার্ট জনগোষ্ঠী গড়ে ওঠে সে জন্য এসব পদক্ষেপ আমরা নিয়েছি। শনিবার (১৫ জুলাই) রাতে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে `স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে ব্যবসায়ী সম্মেলনে' প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার বেসরকারি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় পরিকল্পনা নিয়েছিলাম সরকারে গেলে কী করব। আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রণয়ন করেছি। ব্যবসা-বাণিজ্যে বেসরকারি খাতকে আমরা উন্মুক্ত করে দিয়েছি। ব্যাংক, বিমা, হেলিকপ্টার সার্ভিস, বিমান থেকে শুরু করে বেসরকারি টেলিভিশন, শিল্প, কলকারখানা, হাসপাতাল, যা কিছু যেখানে দরকার সবকিছু তৈরি করার জন্য বেসরকারি খাতকে সব থেকে গুরুত্ব দিয়েছি। শিল্প, কলকারখানা বা বিনিয়োগ যদি না হয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। অনেক বাধা অতিক্রম করে আমাদের এসব করতে হয়েছে। অনেক পরামর্শদাতা বিদেশ থেকে এসে পরামর্শ দিত, এটা করা যাবে না, ওটা করা যাবে না। সরকার গঠনের আগেই এই পরামর্শ শুনতে হয়েছে। আমার একটাই কথা ছিল, দেশটা আমাদের, মাটি ও মানুষও আমাদের। তাদের ভালো মন্দ কী হবে সেটা আমরা বুঝি, জানি। আমরা আমাদের মতো করেই করব। আমাদের দেশের জনগণ হবে স্মার্ট সিটিজেন, আমাদের ইকোনোমি হবে স্মার্ট ইকোনমি, আমাদের সমস্ত গভর্নমেন্টকে আমরা স্মার্ট গভর্নমেন্ট করতে চাই, পাশাপাশি আমাদের সমাজ হবে স্মার্ট সোসাইটি। এভাবে বাংলাদেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। ২০০৮ সালে ঘোষণা দিয়েছিলাম, দিন বদলের সনদ, রূপকল্প ২০২১। আমরা তা বাস্তবায়ন করেছি। ফলে আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। এখন আমরা শিল্প কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষিসহ সকল ক্ষেত্রে স্মার্ট ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে চাই। সে ক্ষেত্রে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি, রোবোটিক, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ন্যানো টেকনোলজি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিজিটাল ডিভাইসে।
তিনি বলেন, শুধু স্বপ্ন দেখলে হবে না স্বপ্ন বাস্তবায়নেরও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। সে জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এখানে যেমন বয়স্ক অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরা আছেন, আবার নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ীরাও আছেন। আমাদের যুব সমাজকে আমরা সেভাবে উৎসাহিত করতে চাই, তারা নিজেরাই মাস্টার হবে, নিজেরাই উদ্যোক্তা হবে, নিজেরাই চাকরি দেবে, সে যোগ্যতা তারা অর্জন করবে। সেজন্য ইতিমধ্যে স্ট্যাটাস প্রোগ্রাম আমরা কার্যকর করেছি। স্ট্যাটাস প্রোগ্রামের পাশাপাশি তাদের জন্য স্পেশাল ফান্ডও রেখেছি আমি বাজেটে। কোম্পানি আইন পরিবর্তন করে এক ব্যক্তি যাতে একাধিক কোম্পানি খুলতে পারে সেই ব্যবস্থাও নিয়েছি। আমরা ব্যবসা করি না। কিন্তু আমরা ব্যবসায়ীকে উৎসাহিত করা, সুযোগ সৃষ্টি করা, সুবিধার তৈরি করে দেয়া, পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া এবং সেই সুযোগ নিশ্চিত করে ব্যবসাবান্ধব সরকার আমরা নিশ্চিত করেছি। সেটা আপনার উপলব্ধি করেছেন। দল-মত নির্বিশেষে কে কোন দলের আমরা কিন্তু সেটা দেখিনি। কে কোন ব্যবসা করে, কার কারণে দেশের মানুষ লাভবান হচ্ছে সেটাই আমার কাছে বিবেচ্য। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য যার যতটুকু প্রয়োজন সুযোগ সুবিধা আমরা কিন্তু সেটা দিই। এটা বলতে পারি আমরা কিন্তু হাওয়া ভবন খুলিনি, স্বাধীন মতো ব্যবসা করতে পারেন সেই ব্যবস্থাটাই করে দিয়েছি। অর্থাৎ সরকার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে দেবে, অবকাঠামো উন্নয়ন করে দেবে। সেভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে ব্যবসায়ী-বান্ধব সরকার। সেটা নিশ্চয়ই আপনারা টের পেয়েছেন। আমি চাই, ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাক।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আর এক একটা কাজ করতে গিয়ে অনেক সমালোচনা শুনতে হয়। মেট্রোরেল করার সময় শুনতে হলো, ‘৩৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করে মেট্রোরেল করার কী দরকার। ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করলেই তো নাকি সব সমাধান হয়ে যায়।’ অবশ্য ভালোই একদিকে। আমি বেসরকারি খাতে অনেক টেলিভিশন দিয়েছি, সেখানে সবাই টকশো করে আর টক টক কথা বলে। সেই টক টক কথা শুনতে হয়। মাঝে মাঝে আমি বলি, আপনারা শুধু টক টক বলেন কেন? কথা যদি টক-ঝাল-মিষ্টি হয় তখন না সুস্বাদু হবে। একজন বলে দিলেন, ‘এতো টাকা খরচ করে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল করার কী দরকার ছিল।’ মানে আপনি যাই করতে যান, কিছু লোকের মানসিকতাই হচ্ছে কিছুই ভালো লাগে না। তাই কিছুই ভালো লাগে না লোকের কথা ভুলে গিয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য যা করা দরকার সেটাই করতে হবে। আজকের বাংলাদেশের সঙ্গে সেই ৮১ সালের বাংলাদেশের অনেক তফাৎ। অনেকেই বলেছিলেন যে, ‘এতো ব্যাংক দিয়ে কী হবে? বাংলাদেশের অর্থনীতি তো এত বড় না।’ আমার কথা ছিল, অর্থনীতি তো এতো ছোটো থাকবে না। অর্থনীতি বড় করার জন্যই তো আমাকে ব্যাংক দিতে হবে। কাজেই সেভাবেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইউরোপ-আমেরিকায় মন্দা চলছে। সেখানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। তাছাড়া সেখানে রফতানি খরচও বেড়ে গেছে। এজন্য বিকল্প বাজার খোঁজতে হবে।