| |
               

মূল পাতা জাতীয় বৃক্ষ সংরক্ষণে নীতি নয়, আইন ও বিধিমালা চাই : রিজওয়ানা হাসান


বৃক্ষ সংরক্ষণে নীতি নয়, আইন ও বিধিমালা চাই : রিজওয়ানা হাসান


রহমত নিউজ ডেস্ক     08 July, 2023     06:23 PM    


বৃক্ষ সংরক্ষণে নীতি নয়, আইন ও বিধিমালা চাই বলে মন্তব্য করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের বড় বড় শহর, সিটি করপোরেশন, পৌর এলাকাসহ পুরো দেশের জন্য আমরা বৃক্ষ সংরক্ষণের মাস্টার প্ল্যান চাইতে পারি না কেন? আমরা ভারতের মতো একটি বিস্তারিত পদ্ধতি অবলম্বন করে গাছ কাটতে হবে, এমন আইন বা বিধিমালা চাইতে পারি না কেন? আমি তো নীতি একদমই চাই না। যেখানে নীতিতে কোনো কিছুই চলে না, সেখানে একটি কাগজের উপর সিল দিলে, সেটি দেশের নীতি কখনো হয়ে যায় না। আইন থাকলে আপনার আমার হাতে একটি শক্তি থাকে, যেটা নিয়ে আমরা সরকারকে বলতে পারি, আপনি আপনার নিজের আইন পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। কাজেই বৃক্ষ সংরক্ষণের জন্য আমি একটি আইন ও মাস্টারপ্ল্যানের দাবি করছি।

শনিবার (৮ জুলাই) প্রেস ক্লাবে বাপা আয়োজিত ‘বৃক্ষ নিধন ও তার পরিবেশগত প্রভাব: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাপার কোষাধক্ষ্য মহিদুল হক খানের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালণায় সংবাদ সম্মেলনে আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন সাত মসজিদ সড়ক গাছ আন্দোলনের শিরিন হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম শহীদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান পরিবেশবিদ অধ্যাপক ড. তাওহীদা রশীদ, গ্রিন সেভার্স-এর প্রধান নির্বাহী আহসান রনি প্রমুখ।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বাংলাদেশে বন আইন-১৯৮৭ আছে। সরকার ২০১৬ সালে গাছ কাটা যাবে না, কাটলে পদ্ধতি অনুসরণের একটি খসড়া প্রস্তুত করে। সেই আইন মন্ত্রিপরিষদে অনুমোদিত হয়ে যখন সংসদে গেছে, তখন সংসদ থেকে বলা হলো, এমন কোনো আইন আলাদা করে প্রয়োজন নেই। বরং বিদ্যমান বন আইনের অধীনে বিধিমালা করে এটা করা সম্ভব বলা হলো। আমাদের কথা হলো, যেভাবেই করা সম্ভব হোক না কেন সেটা করেন। আর বসে থাকবেন না। আমার-আপনার টাকা দিয়েই সরকারি প্রকল্পগুলো হয়, তাহলে আমাদের কাছে কেন ন্যূনতম জবাবদিহিতা থাকবে না। ওই প্রকল্পগুলোর পরিকল্পনা যদি আমাদের দেওয়া হয়, তাহলে আমরা তো ভালো উপদেশও তাদের দিতে পারি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব পরিকল্পনাবিদ আছেন। কিন্তু তিনি কি কর্তাব্যক্তির ইচ্ছার বাইরে গিয়ে কোনো পরিকল্পনা করতে পারবেন?

তিনি আরো বলেন, আইইউসিএল বলে একটি সংস্থা আছে। তারা ৩৯৪টি প্রজাতির উপর গবেষণা করে দেখেছে, পাঁচটি বৃক্ষ প্রজাতি দেশে বিলুপ্তপ্রায়। ১২৭টি প্রজাতি বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে৷ ২৬২ টি প্রজাতি সংকটাপন্ন। তাহলে আমাদের ৩৯৪টি প্রজাতির মধ্যে সবকটিই প্রায় হারিয়ে যাওয়ার রাস্তায় রওনা হয়েছে। তাহলে আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা কি রেখে যাব? কতগুলো ফ্লাইওভার? কতগুলো রাস্তা? তা তো হতে পারে না। উন্নয়নের কোনো অভিধানে বলা নেই এত জনগণের জন্য এত রাস্তা লাগবে। বরং বলা আছে এত জনগণের জন্য এত গাছ লাগবে, জলাশয় লাগবে। নগরে আমাদের এমন গাছ লাগাতে হবে, যেগুলো ছায়া দেবে, তাপ কমাবে, দূষণ কমবে, একইসঙ্গে পাখিরও বাসস্থান হবে। পাখি আমরা গাছে দেখব। পাখি কাঁটাবনে গিয়ে দেখার জিনিস নয়৷

সংবাদ সম্মেলনে ‘বৃক্ষ নিধন ও তার পরিবেশগত প্রভাব: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব। মূল প্রবন্ধে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত বৃক্ষ নিধনের নানা চিত্র তুলে ধরেন। পাশাপাশি বৃক্ষ নিধনের কারণে পরিবেশগত যেসব প্রভাব পড়ছে সেগুলো আলোচনা করেন। তিনি বলেন, বৃক্ষ নিধনের ফলে প্রতিনিয়ত আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, কার্বন শোষণ হ্রাস পেয়েছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও হিট আইল্যান্ড এফেক্ট পড়ছে, বায়ু দূষণ হচ্ছে। বৃক্ষ অব্যবস্থাপনার ফলাফল নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো রোধে বেশ কয়েকটি প্রস্তাবনা দেন তিনি। পাশাপাশি বৃক্ষ নিধন বন্ধে ১২ দফা দাবি জানান।