রহমত নিউজ ডেস্ক 26 June, 2023 06:09 PM
কবুল হজের বিনিময় জান্নাত। হজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ইবাদতের মর্যাদাই বেশি। হজের সফরে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে তবে কেয়ামত পর্যন্ত হজের সওয়াব পাবে মৃতব্যক্তি। আরবি জিলহজ মাসের নবম দিনটিকে আরাফার দিন বলা হয়। এ দিনে হাজিরা মিনা থেকে আরাফার ময়দানে সমবেত হন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এটিই হজের প্রধান রুকন। শুধু তাই নয় হজের দিন তথা আরাফার দিনের রোজাও বিশেষ মর্যাদা ও পুরস্কার পাওয়ার ইবাদত। ফজিলত হিসেবে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। হাদিসে আছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের প্রতিটি দিন ১ হাজার দিনের সমতুল্য আর আরাফার দিনটি ১০ হাজার দিনের সমান মর্যাদাপূর্ণ। -ফতহুল বারি। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনটি সব দিবসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। -উমদাতুল কারি
নানা কারণে এ দিবসটি মুসলমানদের কাছে স্মরণীয়। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে এ দিনের কসম খেয়েছেন। আরাফার ময়দানে অবস্থানরত হাজিদের ওপর আল্লাহতায়ালার অজস্র রহমত বর্ষিত হয়। এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, বদরের যুদ্ধের দিন বাদে শয়তান সবচেয়ে বেশি অপদস্থ, ধিকৃত ও ক্রোধান্বিত হয় আরাফার দিনে। কেননা এ দিন শয়তান আল্লাহ পাকের অত্যধিক রহমত এবং বান্দার অগণিত পাপরাশি মাফ হতে দেখতে পায়। -মুয়াত্তা ও মিশকাত। অন্য হাদিসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বছরের মধ্যে এমন কোনো দিন নেই যে, আল্লাহ তাআলা আরাফার দিন অপেক্ষা বেশি সংখ্যায় তার বান্দাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। আর আরাফার দিন আল্লাহ তাআলা বান্দার একেবারেই কাছাকাছি থাকেন। এরপর ফেরেশতাদের কাছে গৌরব প্রকাশ করে জানতে চান- আমার এ (রোজাদার) বান্দারা কী চায়? (মুসলিম)
আরাফার দিনটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। তাই এ দিন বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। আরাফার দিনের আমলসমূহের মাঝে রয়েছে- এক. জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা। দুই. বেশি বেশি দোয়া ও এস্তেগফার পড়া। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফার দিনের দোয়া। এ দিনে দোয়া ও তওবা কবুলের সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে। তিন. রোজা রাখা। নবী করিম (সা.) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এ রোজা দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন। আরাফার দিন ইবাদত-বন্দেগিতে সময় অতিবাহিত করা কল্যাণ ও মর্যাদার। বেশি বেশি নেক আমলে পরিপূর্ণ প্রতিদান পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগও এটি।
আরাফার রোজা কেন রাখবেন?
হজরত আবু কাতাদাহ আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আরাফার (হজের দিনের) রোজা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আরাফার দিনের (হজের দিনের) রোজা পেছনের এক বছর এবং সামনের এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে। আর তাকে আশুরার রোজার কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, বিগত এক বছরের গুনাহের কাফফারা হবে।’ (মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)। হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আরাফার দিন রোজা রাখে তার একাধারে দুই বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ (আবু ইয়ালা, আত-তারগিব)। ইয়াওমে আরাফা তথা হজের দিন ইবাদত-বন্দেগির সঙ্গে সঙ্গে রোজা পালনে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফজিলত ও মর্যাদা। তাই আরাফার দিন রোজা রাখা এবং তাসবিহ, তাহলিল, ইবাদত-বন্দেগি করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য, হজের দিনকেই আরাফার দিন বলা হয়। চাঁদের হিসাবে আগামী (২৮ জুন) বুধবার আরাফার দিন। যারা আরাফার দিনের রোজা রাখতে চান; তাদেরকে অবশ্যই মঙ্গলবার (২৭ জুন) রাতে সেহরি খেতে হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আরাফার দিন রোজা রাখার পাশাপাশি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। আরাফার দিনের আগের ও পরের বছরের গুনাহ থেকে নাজাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। সর্বোচ্চ প্রতিদান জান্নাত পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।