| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন প্রাথমিকের ৮০ শতাংশ শিশু বাংলা-ইংরেজি-গণিতে পিছিয়ে : জরিপ


প্রাথমিকের ৮০ শতাংশ শিশু বাংলা-ইংরেজি-গণিতে পিছিয়ে : জরিপ


রহমত নিউজ ডেস্ক     14 June, 2023     05:28 PM    


প্রাথমিক পর্যায়ের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা বাংলা, ইংরেজি ও গণিতে পিছিয়ে পড়ছে। এ স্তরের ৭০-৮০ শতাংশ শিশু বাংলা-ইংরেজি পড়তে পারে না। ৮০ শতাংশ সাধারণ যোগ-বিয়োগ করতে পারে না।

বুধবার (১৪ জুন) রাজধানীর মিরপুরের ইউসেপ বাংলাদেশের সম্মেলন কক্ষে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ওয়েভ ফাউন্ডেশন আয়োজিত শিক্ষার্থীদের শিখন স্তরের বর্তমান অবস্থা ও শিক্ষার গুণগতমান অর্জন শীর্ষক জাতীয় সংলাপে এ জরিপের ফল তুলে ধরা হয়। ওয়েভ ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক কানিজ ফাতেমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পারিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. এস এম জুলফিকার আলী, স্টিট চাইল্ডের পোগ্রাম ম্যানেজার ইমতিয়াজ হৃদয় প্রমুখ।

দ্য সাউথ এশিয়ান অ্যাসেসমেন্ট অ্যালায়েন্স কমিউনিকেটিং অ্যান্ড কোলাবোরেটিং ফর চেঞ্জ (ইওএল) প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়েভ ফাউন্ডেশন খুলনা ও রাজশাহী জেলায় ৮৮টি গ্রামের ৭১টি বিদ্যালয়ে এবং ১৭৬০টি পরিবারের ১৫৩৩জন শিশুর ওপর সিটিজেন লেড অ্যাসেসমেন্ট নামক জরিপটি পরিচালনা করা হয়। শিক্ষার্থীদের (৫-১৬ বছর বয়সী) অভিগম্যতা পর্যালোচনা ও শিক্ষার গুণগতমান পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে শিক্ষার্থীদের মৌলিক পঠন ও গাণিতিক শিখন যাচাই করার জন্য জরিপটি পরিচালনা করা হয়।

জরিপে দেখা যায়, দেশের প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণির ১০.২৮% ছেলে শিশু ও ৮.৭১% মেয়ে শিশু বাংলা বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না। এর বাইরে ১৮.০৪% শিশু ৫টির মধ্যে কমপক্ষে ৪টি শব্দ শনাক্ত করতে পারে আর ৬১.৯৫% ছেলে শিশু এবং ৫৩.১৪% মেয়ে শিশু ৩টি বা তার কম ভুল উচ্চারণসহ একটি কাহিনি সাবলীলভাবে পারে। গণিতেও একই অবস্থা। এ বিষয়ে ১৩.৬২% শিশু একক অংক বিশিষ্ট সংখ্যা শনাক্ত করতে পারে না। শুধুমাত্র ২৩.৫৪% শিশু দুটি যোগ সমস্যার সমাধান করতে পারে। আর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্য বইয়ের দুটি বিয়োগ ও দুটি ভাগ সমস্যার সমাধান করতে পারে না পর্যায়ক্রমে ৭৯.৫৩% এবং ৯৬.৫৪%, শিশু। সব থেকে করুণ অবস্থা ইংরেজিতে। এ বিষয়ে ছেলে শিশুর মধ্যে ১৬.৭৮% এবং মেয়ে শিশুর মধ্যে ১৫.২২% প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির ইংরেজি বইয়ের একটি বর্ণও পড়তে পারে না। ২৩.৮৭% শিশু ৫টির মধ্যে কমপক্ষে ৪টি ইংরেজি শব্দ শনাক্ত করতে পারে। আর ৮৪.১৫% ছেলে শিশু এবং ৮২.৮৬% মেয়ে শিশু ৩টি বা তার কম ভুল উচ্চারণসহ একটি কাহিনী সাবলীলভাবে পড়তে পারে না।

এ জরিপে শিক্ষার্থীদের অভিবাবকদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও যাচাই করা হয়। জরিপে দেখা গেছে, যেসব শিশুর পিতা-মাতার মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ছিল, তারা ভাষার দক্ষতার ক্ষেত্রে ভালো করেছে, তাদের তুলনায় স্বল্প শিক্ষিত পিতা-মাতার শিশুদের ভাষার দক্ষতা সন্তোষজনক ছিল না। যেসব শিশুর পিতা-মাতার মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ছিল, তাদের মধ্যে ৪৫৯জন শিশু বাংলায় এবং ১৯২জন শিশু ইংরেজিতে কাহিনি পড়তে পেরেছে। আর যেসব অভিভাবকের প্রাথমিক বা কম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল, তাদের শিশুদের মধ্যে মাত্র ২৩ জন শিশু বাংলায় এবং ৭৮ জন শিশু ইংরেজিতে অক্ষর শনাক্ত করতে পেরেছে। টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ৪ অনুসারে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং সবার সমান শিক্ষা লাভের সুযোগের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে সব ছেলে ও মেয়ে যাতে কার্যকর, ফলপ্রসু অবৈতনিক, সমতাভিত্তিক ও গুণগত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করা।

সরকারের উদ্যোগে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ওয়েভ ফাউন্ডেশনের ইওএল প্রকল্পের পক্ষ থেকে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হলো- শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং বরাদ্দ অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক অণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা, শিক্ষকদের ক্লাস পরিচালনায় নিয়মিতকরণে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, শিক্ষার গুণগতমান অর্জনে শ্রেণির পড়া শ্রেণিতেই সম্পন্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন তথা পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা, শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, শিক্ষকদের বেতন কাঠামো ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা, সময়োপযোগী পাঠ্যপুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ তৈরি ও বিতরণ করা, স্কুল ফিডিং কার্যক্রম প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ করে দুর্যোগপ্রবণ এলাকাতে চালু করা এবং শিক্ষার গুণগতমান উন্নয়নে নীতিনির্ধারক, শিক্ষক ও অভিভাবকসহ সক অংশীজনের মতামতের আলোকে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা।