তিস্তার পানি প্রত্যাহারে খাল খননের বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে জানতে চেয়েছে ঢাকা

পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, তিস্তার পানি প্রত্যাহারে পশ্চিমবঙ্গে নতুন করে দুটি খাল খননের বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে নোট ভারবালের (এক ধরনের কূটনৈতিক যোগাযোগ) মাধ্যমে জানতে চেয়েছে ঢাকা। চিঠি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে লিখবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা নোট ভারবালের মাধ্যমে তথ্য জানতে চেয়েছি। নোট ভারবালে ঢাকার পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ, এটা হয়তো তাদের অনেক দিন আগের পরিকল্পনা। তবে এখনো তো কিছু হয়নি।

আজ (১৯ মার্চ) রবিবার পাইলট প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু রোহিঙ্গাকে রাখাইনে প্রত্যাবাসনের জন্য যাচাই-বাছাইয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন। খাল খননের বিষয়ে নয়াদিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে বলে দিন তিনেক আগে জানিয়েছিলেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। একইদিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, তিস্তায় খাল খননের বিষয়ে পরিস্থিতি সতর্কভাবে পর্যালোচনা করছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে সত্যতা যাচাইয়ের চেষ্টা চলছে। ভারতের ইংরেজি দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, তিস্তা ব্যারাজ প্রকল্পের আওতায় আরও দুটি খাল খননের জন্য ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সেচ বিভাগ প্রায় এক হাজার একর জমির মালিকানা পেয়েছে। জলপাইগুড়ির জেলা প্রশাসন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে সেচ বিভাগকে জমির মালিকানা হস্তান্তর করেছে। এ জমির মাধ্যমে তিস্তার পূর্ব তীরে দুটি খাল খনন করবে প্রশাসন।

পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার দিক থেকে ইতিবাচক সাড়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তবে এটা কী সাময়িক ব্যাপার বা এটার মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে; তা বোঝার জন্য বাংলাদেশকে চেষ্টা করতে হবে। কালকে রোহিঙ্গারা রওয়ানা করবে বা পরশু দিন ওদের ঠেলে পাঠিয়ে দেব, ব্যাপারটা সে রকম না। ১১ লাখ তো একদিনে বা এক রাতে, এক বছরে ফিরে যেতে পারবে না। প্রতিনিধিদল এসেছে, তারা কাজ করছে। এরপর আরও অনেক স্টেপ আছে।  দেখতে হবে রোহিঙ্গারা যেখানে ফিরে যাবে সেখানে (রাখাইনে) সহায়ক পরিবেশ, তাদের স্বাধীনতা, তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা থাকবে কি না। সেখানে আন্তর্জাতিক উপস্থিতি থাকবে কী না, হতে পারে আসিয়ান বা জাতিসংঘ।

তিনি আরো বলেন, এ সমস্ত কম্বিনেশন যখন হবে তখন তারা আমাদের সঙ্গে বা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবে। তারপরই এ লোকগুলো সেখানে যাওয়ার কথা আসবে। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের দিক থেকে একটা ইতিবাচক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা আগে কিন্তু করে নাই। ওদের দিক থেকে পজিটিভ একটা বিষয় লক্ষ্য করছি, এতদিন তো করে নাই। তবে এটা কী সাময়িক ব্যাপার বা এটার মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কী না… থাকলেও থাকতে পারে। সেটা আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আমরা যদি কনভিন্স না হই তাহলে জিনিসটা টেকসই হবে না বা এটা শুরু করলে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে না। এটা না হওয়া পর্যন্ত আমরা ওদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাবো ইন গুড ফেইথ। গত পাঁচ-ছয় মাসে তাদের দিক থেকে নড়াচড়া বা মুভমেন্ট দেখা যাচ্ছে। এখন সময়ই বলে দেবে আগামী ছয় মাসে তাদের এসব পদক্ষেপ টেকসই হবে কী না। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বর্ষা মৌসুম শেষে আগামী শীতের শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরুর ইঙ্গিত দেন তিনি।