রহমত নিউজ 31 December, 2022 04:32 PM
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার মাধ্যমেই দরিদ্রতা দূর হয়। বিদেশ থেকে ফিরে এসে আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি। সরকার গঠন করার পর থেকে আমরা বাংলাদেশের মানুষকে দারিদ্র্য মুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করি। আর শিক্ষায় হচ্ছে দরিদ্রতা দূর করার বড় হাতিয়ার। তাই তো আমরা পুরো জাতিকে শিক্ষিত করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করি। পুনরায় শিক্ষা কমিশন গঠন করি। তবে সরকারের সময়সীমা শেষ হওয়ায় আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে পারিনি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে দেশকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। ’
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) বিনামূল্যে বই বিতরণ অনুষ্ঠান উদ্বোধন শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আমরা স্বাক্ষরতার হার পেয়েছিলাম মাত্র ৪৫ ভাগ। সেটিকে আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে নিয়ে যাই। এ জন্য তখন আমরা আন্তর্জাতিক সম্মাননাও পেয়েছিলাম। ২০০৬ সাল থেকে আরেকটা অন্ধকার যুগ আমাদের জীবনে মাঝে চলে আসে। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এ অবস্থা ছিল। ’
‘২০০৮ সালের নির্বাচনে আমরা ফের বিজয় লাভ করে সরকার গঠন করি। ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষকে নিরক্ষরতা থেকে দূর করতে আমরা ফের পদক্ষেপ গ্রহণ করি। ২০১০ সাল থেকে আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণ শুরু করি। স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমনটা শুরু করেছিলেন। তাকেই অনুসরণ করে আমরা বিনামূল্যে বই বিতরণের কাজ শুরু করি। ’
তিনি আরও বলেন, ‘২০১৩ সালে ২৬ হাজার সরকারি রেজিস্ট্রার্ড ও কমিনিউটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১ লাখ ৫ হাজার ৬১৬ জন শিক্ষককে সরকারীকরণ করেছি। প্রধান শিক্ষকের পদকে দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদা দিয়েছি। এছাড়া সহকারী শিক্ষকদের বেতনের স্কেল এক ধাপ উন্নীত করেছি। আগে পুরনো বই বাচ্চাদের দেওয়া হতো, তবে আমরা তাদের নতুন বই দিচ্ছি। ’
‘২০১০ সাল থেকে আমরা নতুন বই দিয়ে আসছি। এর মধ্যে করোনা, জিনিসপত্রের দাম বাড়াসহ নানা ঝামেলা হয়েছে। তবুও আমরা শিশুদের কথা ভুলিনি। আমরা সব কিছুতে সাশ্রয় হলেও বই ছাপানোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিয়ে যাচ্ছি,’ যোগ করেন সরকার প্রধান।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির পিতা বাংলাদেশে আসেন। একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পান তিনি। পাকিস্তান বাহিনী আমাদের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদ্রাসা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছিল। সেই বিধ্বস্ত দেশ গড়ে তোলার সাথে সাথে জাতির পিতা আমাদের একটি সংবিধান দেন; যেখানের ১৭ অনুচ্ছেদে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, প্রাথমিক শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে অবৈতনিক হবে এবং মহিলাদের অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত অবৈতনিক হবে। শিক্ষাকে সবথেকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন জাতির পিতা। ড. কুদরতই খুদাকে প্রধান করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি কমিশন গঠন করে দেন। সেই কমিশনের রিপোর্ট ৭৪ শেষের দিকে কিংবা ৭৫ এর শুরুর দিকে প্রকাশিত হয়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী কাজগুলো তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেননি। কারণ ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতকরা। এরপর যেসব সরকার এসেছে তারা এ দেশের মানুষদের নিরক্ষতা মুক্ত করবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। জাতির জন্য এটি খুবই দুঃখজনক। ’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য জাতির পিতা অনেক কাজ করে গেছেন। তিনি প্রায় ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ করে গিয়েছিলেন। টাকা পয়সা, রিজার্ভ, কারেন্সি না থাকা সত্ত্বেও তিনি এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষকের চাকরি তিনি সরকারীকরণ করে দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে তিনি মঞ্জুরি কমিশন গঠন করেছিলেন। ৭৪ সালে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা এবং আণবিক শক্তি কমিশন নামে একটি স্বতন্ত্র বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আধুনিক প্রযুক্তি শিক্ষা যাতে মানুষ নিতে পারেন সেই ব্যবস্থা তিনি করে দিয়ে গিয়েছিলেন। বেতবুনিয়াতে প্রথম ভূগ্রহ উপকেন্দ্রও তিনি ৭৫ সালে করে দিয়েছিলেন। তারই মধ্যে দিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করেছি।
‘শুধু এখানে না আমাদের বিশাল অংশ সমুদ্রে চলে গিয়েছে সেজন্য সেই সমুদ্রসীমার জন্য তিনি ৭৪ সালে আইন করেন। আমাদের স্থল সীমানা চুক্তি তিনি ভারতের সঙ্গে করে যান। সেজন্য তিনি আইনও পাস করে যান পার্লামেন্টে। তিনি দেশের ভিত্তি তৈরি করে যান। ’