জিয়াউর রহমান কখনো বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না : হানিফ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, জিয়াউর রহমান কখনো বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, জিয়াউর রহমান নাকি সিলেটে যুদ্ধ করেছেন। আমি সিলেটে বহু জনসভা করেছি। সেসব জনসভায় বলেছি, এই সিলেটের রণাঙ্গনে জিয়াউর রহমান যুদ্ধ করেছেন এরকম কোনো ইতিহাস থাকলে জানানোর জন্য। উনি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন কোনো ইতিহাস খুঁজে পাইনি। জিয়াউর রহমান মনেপ্রাণে পাকিস্তানের আদর্শ ধারণ করতেন, জিয়া বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করেছিলেন। তার কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে তিনি পাকিস্তানের পক্ষে ছিলেন। যার কারণে রাজাকারদের দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেছিলেন। কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে রাজনীতির সুযোগ দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা ও মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো নিষিদ্ধঘোষিত জামায়াতকে রাজনীতির সুযোগ করে দিয়েছেন। যারা স্বাধীনতাবিরোধী, রাজাকারদের দোসর ও পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসী তাদের কথায় সংবিধান পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই।

আজ (২০ নভেম্বর) রবিবার নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন হাজারী। সম্মেলন উদ্বোধন করেন জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী।

বিএনপিকে উদ্দেশ্যে হানিফ বলেন, সংবিধান মেনে যদি নির্বাচনে আসেন, আপনাদের স্বাগত। আর যদি না আসেন, সেই দায়ভার আপনাদের। সংবিধানের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে। সেই নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক সেটা আমরা চাই। নির্বাচন হবে বর্তমান সরকারের অধীনে, সংবিধানসম্মত উপায়ে। বর্তমান কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে। নির্বাচনকে অধিক ত্রুটিমুক্ত করার কোনো পরামর্শ থাকলে দিতে পারেন। সরকার এবং নির্বাচন কমিশন অবশ্যই বিবেচনা করবে। আমরা চাই দেশে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আপনারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করুন। আমাদের কোনো অসুবিধা নেই, কোনো বাধা নেই। আওয়ামী লীগের শক্তি বাংলার মানুষ, এ দেশের জনগণ। আপনাদের জনসভায় কিছু সুবিধাবাদী লোক-কর্মী গেছেন, এতেই মনে করছেন একেবারে গোটা দেশ আপনাদের হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল। বাংলার মাটির অনেক গভীরে আওয়ামী লীগের শেকড়, কোনো ভূঁইফোড় দল নয়। আওয়ামী লীগ কচুপাতার পানি নয় যে ধাক্কা দিলে টলমল করে পড়ে যাবে। আপনাদের মতো দলের অন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নই থাকবে।

হানিফ বলেন, বিএনপি রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বিচার পেতে চান? হত্যার বিচার হচ্ছে, হবে। বিচার তো চলছে। ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে পেট্রল দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছেন, সরাকরি-বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করেছেন। সেই সব মামলা তো আছে, বিচার চলছে। অপেক্ষা করুন, এ সমস্ত হত্যার দায়ভার নিয়ে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। খালেদা জিয়াকে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে, ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলার পর বহু নাটক করেছেন আপনারা। হাওয়া ভবনে বসে তারেক রহমান রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে গ্রেনেড হামলা চালিয়েছিল। আজ তা প্রমাণিত হয়েছে। আলামত ধ্বংস করেছিলেন, হামলায় আহতদের চিকিৎসা নিতে দেননি। তিন ঘণ্টা থানায় বসিয়ে রেখে মামলাও নেননি। উল্টো খালেদা জিয়া সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে আবার কে মারতে যাবে। তিনি নিজেই ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গেছেন। কী নির্লজ্জ রসিকতা, মিথ্যচার। তখন কোথায় ছিল অপানদের কান্না? কোথায় ছিল গণতন্ত্র, মানবতাবোধ? আর আজ আপনারা গণতন্ত্র, মানবতার কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাতের মামলায় কারাগারে ছিলেন। আজ শেখ হাসিনার দয়া, অনুকম্পায় বাসায় আছেন, বিএনপি-জামায়াতের কাছে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি ছাড়া আর কিছু নেই। দেশের উন্নয়ন অগ্রগতি চায় না কারণ তাদের মনেপ্রাণে-দিলে আছে পাকিস্তান। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, যিনি ক্যান্টনমেন্টে বসে বন্দুকের নলের ডগায় বসে দল গঠন করেছিলেন। যে দলের জন্ম হয়েছে অবৈধ পন্থায়, সেই দল দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারে না। এটা বারবার প্রমাণ হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, জামায়াত বাংলাদেশকে এখনো পাকিস্তানের তাবেদার রাষ্ট্র বানাতে চায়, জামায়াত একাত্তর সালে রাজাকার ছিল, এখনো রাজাকার আছে। তারা এখনো এ দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। ২০১৩ সালে তাদের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা কাদের মোল্লা, মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মুজাহিদের ফাঁসিতে দেশের মানুষ খুশি হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের পার্লামেন্টে নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছিল। পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী বলেছিলেন- কাদের মোল্লা, নিজামী, মুজাহিদ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাকিস্তানের অকুতোভয় সৈনিক ছিলেন। মতিউর রহমান নিজামীকে বেসামরিক সর্বোচ্চ নেসার-ই পাকিস্তান উপাধি দেওয়ার মধ্যদিয়ে প্রমাণ করেছে তারা পাকিস্তানের পক্ষের রাজনীতিক। স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও তারা পাকিস্তানের সৈনিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না। বিএনপি এবং জামায়াত একই মায়ের পেটের দুই ভাই, ২০০৪ সালে ছাত্রশিবিরের এক সভায় তারেক রহমান বলেছিলেন- ছাত্রশিবির ও ছাত্রদল একই মায়ের পেটের দুই ভাই। বিএনপি-জামায়াতও একই জায়গা থেকে সৃষ্টি। জামায়াতে ইসলামীর সৃষ্টি পাকিস্তানের মওদুদীর হাতে আর বিএএনপি সৃষ্টি করেছে তাদের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। বিএনপি-জামায়াত একে অপরের পরিপূরক। তারা কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না।

এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: চট্টগ্রাম নোয়াখালী চাটখিল