রহমত নিউজ 01 November, 2022 12:20 PM
২০ বছরে বায়ুদুষণজনিত রোগের কারণে মৃত্যু ৯ শতাংশ বেড়েছে। বায়ুদুষণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে প্রায় দুই লাখ মানুষ। ১৫ বছরে প্লাস্টিক দূষণও বেড়েছে দ্বিগুণ। এর ফলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যগত ক্ষতির শিকার হচ্ছে শহরাঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশে বায়ুদূষণের মাত্রা ও পরিমাণ অতিরিক্ত। পরিবেশের ওপর বায়ুদূষণের যে সরাসরি ক্ষতিকারক প্রভাব তার কারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া জনস্বাস্থ্যের ওপরে এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর প্রভাব মারাত্মক। বাংলাদেশের প্রতিবেশী চীন ও ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বায়ুদূষণ মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছে। বাংলাদেশেরও সময় এসেছে বায়ুদূষণের ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার।
সোমবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে 'সবুজ শহর উদ্যোগ'-বিষয়ে আলোচনায় এ তথ্য তুলে ধরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডি।সেমিনারে ‘বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণ হ্রাসের মাধ্যমে শহর সবুজায়ন’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা সহকারী সৈয়দ ইউসুফ সাদাত। এ সময় সিপিডি’র গ্রিন সিটিস ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়। সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক লিয়াকত আলী, ইউনিলিভারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাভেদ আখতার, দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র-ডিএসকেএর নির্বাহী পরিচালক ড. দিবালোক সিংহসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রধান, গবেষক, শিক্ষক ও উন্নয়ন কর্মীরা।
স্বাগত বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, বায়ু ও প্লাস্টিক দূষণের জন্য সম্ভাব্য নীতিগত পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক, সুনির্দিষ্ট এবং কার্যকরী হতে হবে। ইতিবাচক কোনও পরিবর্তন আনা ততক্ষণ সম্ভব হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত এতে সকল অংশীজনের সম্পৃক্ততা ও সমর্থন না থাকবে।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, সাধারণভাবে ব্যবহৃত পরিমাপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের শহরগুলোতে প্রতি ঘনমিটারে বাতাসে বার্ষিক গড় সূক্ষ্ম বস্তুকণার পরিমাণের উপস্থিতি অনেক বড় সমস্যা সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আইকিউএয়ার বায়ুমান সূচক বা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেস্কের মতে, ২০২০ এবং ২০২১ উভয় সময়েই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হিসেবে বাংলাদেশ স্থান পেয়েছে। ২০২১ সালে আঞ্চলিক রাজধানী শহরগুলোর মধ্যে ঢাকার অবস্থান ছিল দ্বিতীয়, নয়া দিল্লির পরেই সবচেয়ে খারাপ। দেশের শহরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বায়ুমান নির্দেশিকার তুলনায় ১৫গুণ বেশি এবং বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বার্ষিক বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাম্বিয়েন্ট এয়ার কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ড (BNAAQS)-এর চেয়ে ৫ গুণ বেশি৷ ১৯৯৫ সালে প্রতি ঘনমিটারে বাতাসে বার্ষিক গড় সূক্ষ্ম বস্তুকণার পরিমাণ ৫১.৬ মাইক্রোগ্রাম থেকে ২০১৯ সালে ৬৩.৪ মাইক্রোগ্রাম হয়েছে, যা ২৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি, যথেষ্ট নীতিগত অবহেলার কারণে আগামী ১০ বছরে বায়ুদূষণ দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বায়ুদূষণের বিভিন্ন কারণ হিসেবে পরিবহন খাত, ইট ভাটা ও নির্মাণ খাতকে দায়ী করা হয়।
সিপিডি বায়ুদূষণ রোধে কিছু সুপারিশমালা উপস্থাপন করে। যার মধ্যে রয়েছে- হাইব্রিড গাড়ির ক্রয়ক্ষমতা বাড়িয়ে এবং আমদানি শুল্ক কমিয়ে উৎসাহিত করা। যানবাহনের ফিটনেস পরীক্ষা নিয়মিতভাবে করা এবং পুরানো যানবাহন বর্জন করা এবং পর্যায়ক্রমে বাতিল করা। ইটভাটায় ব্যবহৃত আদিম প্রযুক্তি প্রতিস্থাপনের জন্য বেসরকারি খাতকে সহায়তা করা, দক্ষ, অধিক লাভজনক এবং কম দূষণকারী ইট উৎপাদন প্রযুক্তি চালু করা। নির্মাণ খাতে নির্মাণ সামগ্রীর যথাযথ স্টোরেজ, কভারেজ এবং পরিবহন নিশ্চিত করতে সাইটগুলির আরও ভালো নিয়ন্ত্রণ। দূষণের হিসাব এবং ডাটাবেস নিয়মিত আপডেট করা উচিত, এবং এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পর্যবেক্ষণ এবং পদক্ষেপ জরুরি।