স্বাস্থ্য ডেস্ক 15 October, 2022 08:46 PM
রোগ প্রতিরোধ ও জীবন রক্ষায় সুস্থ ফুসফুসের বিকল্প নেই। সুস্থ ফুসফুসের জন্য বিশুদ্ধ অক্সিজেনের প্রয়োজন। আর এটা নিশ্চিত করতে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। এজন্য বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। একই সঙ্গে ফুসফুসের রোগ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। জীবিকার প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের পেশা আমরা বেছে নেই। তার মধ্যে এমন কিছু পেশা আছে যা ফুসফুসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন- পাথর ভাঙা, জাহাজ ভাঙা, ওয়েলডিং, আঁশ ও তুষ জাতীয় উপাদানের সংস্পর্শে থাকা ইত্যাদি। এই পেশার কারণে তৈরি ছোট ছোট ধূলিকণা বা সূক্ষ্ম তন্তু আমাদের ফুসফুসে আটকে বিভিন্ন ধরনের রোগ সৃষ্টি করতে পারে। তবে কাজের সময় ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার করলে এই বিপর্যয় হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এ বিষয়ে আমরা মোটেও সচেতন নই। তাই ‘অকুপেশনাল হেলথ্’ বা জীবিকা সংক্রান্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের আরও মনোযোগী হতে হবে।
আজ (১৫ অক্টোবর) শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়-বিএসএমএমইউতে বিশ্ব ফুসফুস দিবস-২০২২ উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল আলোচনায় তারা এসব বলেন। বিএসএমএমইউন রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শামীম আহমেদের সঞ্চালনায় বৈঠকে বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন ) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক ) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন। ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, মেডিসিন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম, বেসিক সাইন্স ও প্যারা ক্লিনিকের ডিন অধ্যাপক ডা. শিরিন তরপদার, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক ডা. মো. হারিসুল হক, রেজিস্ট্রার ডা. স্বপন কুমার তপাদার, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ধূমপানের কারণে ফুসফুসের ক্যানসারসহ নানা ধরনের রোগের সৃষ্টি হয়। ধূমপান বন্ধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে যে, ধূমপান করব না, নিয়মিত শরীর চর্চা করব। ফুসফুসের রোগ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে বিএসএমএমইউ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। বিশেষত জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণের স্বার্থে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাডাভেরিক লাং ট্রান্সপ্ল্যান্টের উদ্যোগে নেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিভাগে স্লিপ এ্যাপনিয়া রোগের পরীক্ষা করা হয়, যা সচেতনতার জন্য মানুষকে জানাতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক, ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, বর্তমানে দেশের স্বাস্থ্যখাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে উল্লেখযোগ্য সফলতা লাভ করেছে। তবে বঙ্গবন্ধুই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উন্নয়নের ভিত্তি গড়ে গেছেন। জীবনের জন্য সুস্থ ফুসফুস কতটা জরুরি তা করোনা মহামারি বিশ্ববাসীকে বুঝিয়ে দিয়েছে। ধূমপান শুধু ফুসফুসের ক্যানসার সৃষ্টি করে না, শরীরের সর্বাংশেই রোগের সৃষ্টি করে। তাই অবশ্যই ধূমপান পরিহার করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধে ধূমপান পরিহার, বায়ুদূষণ প্রতিরোধ এবং সুস্থ, সুন্দর, নির্মল পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ফুসফুসের রোগ নির্মূলে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিকিৎসক নির্দেশিত ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করতে হবে। ধূমপান বন্ধে ও ফুসফুসের রোগ প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ‘তামাকমুক্ত দেশ’ গড়ার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। ফুসফুসের যত্নের শুরু মাতৃজঠরে থাকার সময় হতেই। গর্ভাবস্থায় মায়ের অপুষ্টি, বিভিন্ন সংক্রামক রোগের সংক্রমণ, সময়ের পূর্বে অপরিণত অবস্থায় স্বল্প ওজনের শিশুর জন্মগ্রহণ শিশুর ফুসফুসের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। আবার জন্মের পর মাতৃদুগ্ধ পান নিউমোনিয়া, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগের প্রকোপ কমায়। তাই হবু মা এবং নতুন মায়ের যত্ন শিশুর সুস্থ ফুসফুসের পূর্বশর্ত। অন্যদিকে ধূমপায়ী বাবা শুধুমাত্র তার পরিবারের সদস্যদের জন্যই নয় এমনকি যে শিশুটি এখনও ভূমিষ্ঠ হয়নি তার জন্যও হুমকি। ধূমপায়ী মায়েদের জন্য এ কথাটি আরও বেশি সত্য।