রহমত ডেস্ক 10 September, 2022 10:18 PM
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম একটি আধুনিক ব্যবস্থা। ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই। ইভিএম ছিনতাই করলেও লাভ হবে না। ইভিএমের কোনো আইনগত বাধাও নেই। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের দায় থাকবে নির্বাচন কমিশনের। একইসঙ্গে ইভিএমের গ্রহণযোগ্যতা জনগণের কাছে প্রমাণ করার দায়িত্বও ইসির। আজ (১০ সেপ্টেম্বর) শনিবার বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তাফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ইলেকশন মনিটরিং ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আবেদ আলী।
ইভিএম বিশেষজ্ঞ মাহফুজুল হক বলেন, ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হলে কেন্দ্র দখল করে ব্যালট চুরি বা ছিনতাইয়ের সুযোগ থাকে। কিন্তু ইভিএম ছিনতাই করলেও লাভ হবে না। একজনের ভোট আরেকজনও দিতে পারবে না। ব্যালট নির্বাচনে মারামারি ও রক্তপাতের ঘটনা ঘটে কিন্তু ইভিএমে রক্তপাতের ঘটনা ঘটেনি। ইভিএমে ফিঙ্গার প্রিন্ট না মিললে প্রিজাইডিং অফিসার এজেন্টদের কাছে পরিচয় শনাক্ত করে। প্রিজাইডিং অফিসার নিজের ফিঙ্গার প্রিন্ট দিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ দেন। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা মাত্র এক শতাংশ হয়েছে। ইভিএমে ইন্টারনেট, ব্লু-টুথ নেই। কেন্দ্রের মধ্যে ইভিএমের কোন পার্টস চেঞ্জ করারও সুযোগ নেই। কোন প্রোগ্রাম বা পার্টসও বাইরে পাওয়ার সুযোগ নেই। ভারত বা অন্য দেশের ইভিএমে কাস্টমাইজড করার সুযোগ থাকলে আমাদের ইভিএমে সেটা সম্ভব নয়। নির্বাচনের ফলাফলও পরিবর্তনের সুযোগ নেই। ফলাফল প্রকাশের পর প্রিন্ট করে ফলাফলের কপি কেন্দ্র পাঠানো হয়। আবার ফলাফল দিতে দেরি হলেও সমস্যা নেই। কুমিল্লায় আধা ঘণ্টা পরে ফল প্রকাশ করা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয় কিন্তু আধা ঘণ্টা কেন, ৩০ বছর পরেও ফলাফল পরিবর্তনের সুযোগ নেই। একমাত্র শতভাগ স্বচ্ছ ভোটে ইভিএমের বিকল্প নেই।
সাংবাদিক অজয় দাস গুপ্ত বলেন, অনেকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। সামরিক শাসনের সময় মানুষের বাক স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ভোটের অধিকার ছিল না। তখন যারা এসব কাজ করেছে তারাই এখন নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তারা মূলত নির্বাচনই চায় না। নির্বাচন বলতে তারা জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ না ভোট, খালেদা জিয়ার ৯৬ এর ভোট আর হাওয়া ভবন বুঝে। তাই তারা ইভিএমে নির্বাচন চায় না।
বুয়েটের উপ-উপাচার্য আব্দুল জব্বার খান বলেন, ইভিএমের ত্রুটি নিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছে নির্বাচন কমিশন। রাজনৈতিক দলগুলার উচিত এ সুযোগ গ্রহণ করা। তারা দেশি বা বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়েও পরীক্ষা করাতে পারেন। মূলত নির্বাচনে হেরে যাওয়ার জন্য একটি পক্ষ ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। তাদের ইভিএম নিয়ে কথা না বলে এখন জন সম্পৃক্ত কাজ করা দরকার। এক পক্ষ বলছে আমাদের অধীনে নির্বাচন হবে, আরেক পক্ষ বলছে কারও অধীনে নির্বাচন হবে না। কিন্তু সংবিধান বলছে, নির্বাচন কমিশনের দ্বারা নির্বাচন হবে। সংবিধানে তাদের সর্বময় ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
লেখক গবেষক ড. মুহাম্মদ মাসুম চৌধুরী বলেন, আমরা এখন সর্বকালের সেরা বিজ্ঞান চর্চার যুগে বসবাস করি। সবকিছুই এগিয়ে গেছে প্রযুক্তির উন্নয়নে। তথ্যের স্রোতে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ১৯৬০ সালে আমেরিকা ইভিএম চালু করে। আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। জাপান আমেরিকা কম্পিউটার নিয়ে খেলা করে আর আমরা গরুর ঘরে বসে স্বপ্ন দেখি। পৃথিবীতে যখন কাগজের ব্যবহার কমানো নিয়ে কথা বলা হয়, তখন আমরা ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন তুলি।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, এখন প্রশ্ন হলো নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কি-না, নির্বাচনে কে যাবে কে যাবে না? আরেকটা প্রশ্ন নির্বাচন ইভিএমে হবে কি-না? আগের নির্বাচন নিয়ে কিছু কিছু দল প্রশ্ন তুলছে। এখন দুনিয়া ডিজিটাল। সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে। এখন কাগজের পরিবর্তে আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করছি। নতুন প্রযুক্তির শুরুতে অনেকের আপত্তি থাকে কিন্তু পরে সেটি মেনে নেয়। এখন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের দায় থাকবে একটু সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা।
ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.আহসান উল্লাহ বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার না জানলে আমাদের অনেক প্রশ্ন জাগে। ইভিএমের প্রযুক্তি ব্যবহারের নিয়েও নানা প্রশ্ন। মানুষ যখন ইভিএমের ব্যবহার ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবে তখন তাদের এ দ্বিধা কেটে যাবে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুন নুর দুলাল বলেন, দেশ এগিয়ে গেছে। সর্বত্রই উন্নয়ন হয়েছে। অবকাঠামো থেকে স্যাটেলাইট সব দিক থেকে দেশ এগিয়ে গেছে। আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করলে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না থাকলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। এখানে ভোট ডাকাতির সুযোগ নেই।