| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘বাংলাদেশ যেন শেষ পর্যন্ত জ্বালানি সনদে স্বাক্ষর না করে’


‘বাংলাদেশ যেন শেষ পর্যন্ত জ্বালানি সনদে স্বাক্ষর না করে’


রহমত ডেস্ক     04 August, 2022     03:59 PM    


বিদ্যুৎ খাতে প্রতিবছরই বিনিয়োগ সর্বোচ্চ থাকায় জ্বালানি খাত যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায়। জ্বালানি সনদের আইনি কাঠামো বেশ একপেশে ও ভারসাম্যহীন। এটা এক রকমের দ্বন্দ্ব নিরসনের নামে আইনি ফাঁদ স্বাগতিক রাষ্ট্রের জন্য। তাই সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতা প্রশমনে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দায়মুক্তি আইন-২০১০ এর বিরোধিতা যেমন করতে হবে তেমনি বাংলাদেশ যেন শেষ পর্যন্ত জ্বালানি সনদে স্বাক্ষর না করে। কারণ জ্বালানি সনদ ও জ্বালানি নীতির অনেক কিছুই সাংঘর্ষিক। তাই তরুণ প্রজন্মকে এর বিরোধিতা করার আহ্বান জানাচ্ছি।

আজ (৪ আগস্ট) বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতির বাস্তবায়নে জ্বালানি সনদ চুক্তির ভূমিকা নিয়ে এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাবের সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সংলাপে ক্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক এম শামসুল আলমের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান ও প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান। সংলাপে ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক এড. হুমায়ুন কবির, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মনজুর ই খোদা, প্রকৌশলী শুভ কিবরিয়াসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এনজিও সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রবন্ধ উপস্থাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, জ্বালানি সনদ চুক্তি ক্যাব প্রস্তাবিত জ্বালানি রূপান্তর নীতি বাস্তবায়নকে অসম্ভব করে তুলতে পারে। শুধু বিদেশি বিনিয়োগকারীর স্বার্থ রক্ষায় এই আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোটি একপেশেভাবে কার্যকর। তাই জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় জ্বালানি সনদ চুক্তির বিরোধিতা করাটাই মূল কাজ। রাষ্ট্র কিছু প্রতিষ্ঠানের সুবিধার জন্য দেশের পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে। এটা হতে পারেনা। এই জ্বালানি চুক্তি স্বাক্ষরে আরও চিন্তা করা দরকার। এই চুক্তিকে না বলা জরুরি। তাই রাষ্ট্র যেন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর না করে। বিদ্যুৎ খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এসেছে গত কয়েক বছরে। ফলে বোঝা যায় জ্বালানি খাদ কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান জ্বালানি সনদ এবং জ্বালানি নীতিতে বেশ কিছু সাংঘর্ষিক বিষয় রয়েছে। ফলে জ্বালানি চুক্তি নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নে যে চুক্তি করা হয়েছে এটি অবাস্তব। পাকিস্তান আমলের ২২ পরিবারের মতো বর্তমানেও সরকারকে ব্যবহার করে কিছু ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী সুবিধা নিচ্ছে। তাই এধরনের জ্বালানি সনদ চুক্তি করলে পুনরায় তাদের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আমরা দিন দিন জ্বালানি সেক্টর চালানোর সক্ষমতা হারিয়েছি। আমরা একটি পাওয়ার প্লান্ট চালাতে পারিনা। বিদেশ থেকে প্রশিক্ষিত কর্মী আনতে হয়। আমাদের সক্ষমতা শুধু দেশের জ্বালানি খাতের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দেওয়া। যে টাকা গ্যাস উৎপাদন ও উত্তোলনে খরচ করার কথা সেটি ব্যবহার করা হয়েছে আমদানিতে। জনগণের টাকা এভাবে খরচ করা লুণ্ঠনের মতো। সমুদ্রের গ্যাস উত্তোলন করতে না পারলে স্থলের গ্যাস উত্তোলন করা যায় বাপেক্সকে দিয়ে। কিন্তু সেটি করা হচ্ছেনা। করা হচ্ছে শুধু আমদানি যার ফলে মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ক্ষতিকর ফলের শিকার হচ্ছে জনগণ। ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কিছুই করা হচ্ছেনা যার ফলাফল মানুষ সক্ষমতা হারাচ্ছে। আর দেশে বিদ্যুৎ জ্বালানির সংকট।

পরে মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন এনজিওর প্রতিনিধিরা অংশ নিয়ে বলেন, জ্বালানি সনদে যেখানে বিনীয়োগকারীদের স্বার্থ দেখা হয় সেখানে দেশের স্বার্থ উপেক্ষিত হবেই। সনদটি ভয়াবহ। রাষ্ট্র কিভাবে এমন একটা সনদ করে যা আমাদের পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। রাষ্ট্রের চেয়ে বিনিয়োগকারীরা বড় হয়ে গেলে এমনটি হয়। তাই এই নীতির সঙ্গে তরুণদের সম্পৃক্ত করতে হবে, তরুণদের কাছে তুলে ধরতে হবে। জ্বালানি নীতি বাস্তবায়নের জন্য জ্বালানি সনদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলোতে জনমত গড়ে তুলতে হবে।