স্বাস্থ্য ডেস্ক 25 July, 2022 11:35 AM
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত সাড়ে ৬ মাসে সারাদেশে ৫৯৬ শিশুসহ মোট ৬৫০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি শিশু।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনা থেকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর তথ্য-উপাত্ত থেকে গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর-জিএইচএআইর সহযোগিতায় গণমাধ্যম ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান সমষ্টির তৈরি প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। রবিবার (২৪ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত করে সমষ্টি।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাগুলোর জাতীয়ভাবে কার্যকর তথ্যায়ন ব্যবস্থা না থাকায় বেশির ভাগ ঘটনাই গণমাধ্যমে উঠে আসে না। ফলে এ সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ চিত্র পাওয়া যায় না। ২০১৬ সালে পানিতে ডুবে মৃত্যু নিয়ে জাতীয়ভাবে সর্বশেষ জরিপটি হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ পরিচালিত ওই জরিপে তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী প্রতিবছর সব বয়সী প্রায় ১৯ হাজার মানুষ পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি অর্থাৎ আনুমানিক ১৪ হাজার ৫০০ জনই ১৮ বছরের কম বয়সী শিশু। এই জরিপ অনুযায়ী, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ জন ১৮ বছরের কম বয়সী শিশুরা পানিতে ডুবে প্রাণ হারায়। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা প্রতিদিন প্রায় ৩০ জন, অর্থাৎ বছরে প্রায় ১০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডাব্লিউএইচও ২০১৪ সালের বৈশ্বিক প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর ৪৩ শতাংশের কারণ পানিতে ডুবে মারা যাওয়া।
সমষ্টির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মারা গেছে ৩০০ জন, ৫ থেকে ৯ বছরের শিশু মারা গেছে ২০৭ জন, ১০ থেকে ১৪ বছরের শিশু মারা গেছে ৬৩ জন ও ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষ মারা গেছেন ৫৪ জন। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩২, ফেব্রুয়ারি ৪৩, মার্চে ৪৫, এপ্রিলে ৩১, মে-তে ৫৪, জুনে ৬৯ এবং ১৭ জুলাই পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছে। ৫ থেকে ৯ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে জানুয়ারিতে ১০, ফেব্রুয়ারিতে ১২, মার্চে ২৬, এপ্রিলে ৫০, মে-তে ৪৬, জুনে ৩৭ এবং জুলাইয়ের ১৭ তারিখ পর্যন্ত ২৬ জন মারা গেছে। ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে জানুয়ারিতে ৩, ফেব্রুয়ারিতে ৫, মার্চে ৭, এপ্রিলে ৭, মে-তে ১৯, জুলাইয়ে ১৫ ও জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৭জন মারা গেছে। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশু একজনও মারা যায়নি। তবে মার্চে ৭, এপ্রিলে ২, মে-তে ৭, জুনে ৬, ১৭ জুলাই পর্যন্ত ৪ জন মারা গেছেন। ১৮ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে জানুয়ারিতে ২৩, ফেব্রুয়ারিতে ২, মার্চে ৪, এপ্রিলে ২, মে-তে ২, জুনে ১৬ এবং জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছেন।
আজ (২৫ জুলাই) দ্বিতীয়বারের মতো আন্তর্জাতিকভাবে পালিত হচ্ছে পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস। গত বছরের এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে ‘নীরব মহামারী’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে প্রতি বছর ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে এই দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ। পানিতে ডুবে মৃত্যু ঠেকাতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমার প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করা হয়েছিল। ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস-২০২২’ উদযাপন উপলক্ষে সোমবার বিকালে শিশু একাডেমিতে পোর্টেবল সুইমিং পুলে শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করা হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।