রহমত ডেস্ক 08 July, 2022 09:47 PM
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে মারা গেছেন। দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। শুক্রবার (৮ জুলাই) জাপানের জাতীয় সম্প্রচারমাধ্যমের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। এর আগে শুক্রবার সকালে জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় নারা শহরে প্রচার কর্মসূচিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত হন আবে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেই জানানো হচ্ছিল। একপর্যায়ে চিকিৎসকদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান তিনি।
এদিকে শিনজো আবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। পাবলিক ব্রডকাস্টার এনএইচকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, নারা শহরে হামলার শিকার হওয়া স্থানের কাছাকাছি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিনজো আবে মারা যান। সংবাদমাধ্যম বলছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় নারা শহরে প্রচার কর্মসূচিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় জাপানের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ওপর গুলি চালানো হয়। এরপরই লুটিয়ে পড়েন শিনজো। পরে ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিবিসি বলছে, প্রচার কর্মসূচিতে বক্তব্য দেওয়ার সময় আবেকে পেছন থেকে গুলি করা হয়েছিল।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি এম আবদুল হামিদ। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন। শিনজোর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন।
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের হত্যাকাণ্ডে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে তার আকস্মিক মৃত্যুকে জাপান ও বিশ্বের জন্য এক বিরাট ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত দুর্ভাগ্যের এই সময়ে জাপানের শোকার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশের জনগণ আমার সঙ্গে যোগ দিয়েছে। আবের মতো একজন রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যু শুধু জাপানের জন্যই নয়, বরং তার নেতৃত্বের চিন্তা, দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার কারণে সমগ্র বিশ্বের জন্য ক্ষতি হয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদা ফুমিওকে উদ্দেশ্য করে লেখা এক চিঠিতে তিনি এসব কখো বলেন।
তিনি আরো বলেন, মহাদুর্দশার এই সময়ে, আমরা গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি জাপানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার মেয়াদকালে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে একটি নতুন ব্যাপক অংশীদারিত্বে উন্নীত করার ক্ষেত্রে তার অপরিসীম অবদানের কথা। বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং তার নিজের পক্ষ থেকে আবের মর্মান্তিক মৃত্যুতে তার গভীর সমবেদনা ও আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন। আমরা প্রার্থনা করি জাপানের শোকাহত বন্ধুত্বপ্রতীম জনগণ এবং প্রয়াত শিনজো আবের পরিবারের সদস্যরা সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে এ শোক কাটিয়ে ওঠবে।
উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানের সবচেয়ে কমবয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৭ সালে দায়িত্ব নেন শিনজো আবে। তবে অসুস্থতার কারণে ২০২০ সালের আগস্টের শেষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা থাকলেও এক বছর আগেই দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান আবে। ৬৭ বছর বয়সী শিনজো আবে সেসময় জানিয়েছিলেন, তার আলসারেটিভ কোলাইটিস রয়েছে এবং নতুন ওষুধ ব্যবহার করে তার চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। তিনি বহু বছর থেকে আলসারেটিভ কোলাইটিস রোগে ভুগছিলেন। ২০১২ সালে আবারও জাপানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া শিনজো আবে সবচেয়ে দীর্ঘসময় ধরে দায়িত্ব পালন করা জাপানি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ২০০৭ সালেও প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি আলসারেটিভ কোলাইটিসে ভুগতে থাকায় হঠাৎ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন। মূলত কৈশোর থেকেই এই রোগে ভুগছিলেন আবে। প্রসঙ্গত, জাপানে বন্দুক সহিংসতার ঘটনা বেশ বিরল। কারণ পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে হ্যান্ডগান বা বন্দুক নিষিদ্ধ।