মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই : শিক্ষামন্ত্রী
রহমত ডেস্ক 07 July, 2022 06:30 AM
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কিছুদিন আগে থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চলছিল যে, আমাদের নতুন শিক্ষাক্রমে ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়া হয়েছে, যেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। ধর্মশিক্ষা সবসময় ছিল, এখনও আছে। না থাকার কোনো কারণও দেখি না। ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং বাদ দেওয়া হয়নি।
বুধবার (৬ জুলাই) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এর আগে, দুপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এবং কারিগরি এবং মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় ২ হাজার ৭১৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) আইটি বিজনেস ইনকিউবেটরের উদ্বোধনকালে তিনি এ ঘোষণা দেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষায় জ্ঞান-দক্ষতা যেমন থাকবে, তার পাশাপাশি সঠিক মনোভাব, মূল্যবোধ, নৈতিকতা থাকবে। সেই জায়গায় ধর্মশিক্ষা একটি আবশ্যিক বিষয়। কাজেই ধর্মশিক্ষা বাদ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই, আমরা বাদ দিইনি। ধর্মের যে মূল কথা, তা যেন শিক্ষার্থীরা অনুধাবন করতে পারে, নিজের জীবনে চর্চা করতে পারে, নতুন কারিকুলামে সেইভাবে ধর্মশিক্ষার বইগুলো তৈরি করা হয়েছে। কাজেই আজ যারা ধর্মশিক্ষা তুলে দেওয়া হয়েছে বলছেন, তাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে রক্ষা করা নয়, ধর্মের পক্ষে থাকা নয়। তাদের উদ্দেশ্য ধর্মকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল করা। তাদের উদ্দেশ্য, দেশের ধর্মভীরু সাধারণ মানুষকে অন্যায়ভাবে উসকে দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশকে অস্থিতিশীল করা জানিয়ে তিনি দেশের সাধারণ মানুষকে আহ্বান জানান, যারা ধর্মের নামে অপপ্রচার চালায়, মিথ্যাচার করে, তাদের সমস্ত অপপ্রচার আপনারা উপেক্ষা করুন।
পাঠ্যক্রমে ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমামের বক্তব্যের সমালোচনা করে দীপু মনি বলেন, জনপ্রতিনিধি হই বা অন্য যেকোনো দায়িত্বেই থাকি না কেন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা তো আসলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটা প্রত্যেকের সঙ্গে সম্পর্কিত। সে বিষয়ে কথা বলার বা মন্তব্য করার সময় সঠিক তথ্য জেনে নিয়ে কথা বললে ভালো হয়। আর একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকে আমাদের চাওয়াটা আরও অনেক বেশি।আমি তাকে এ কারণে সাধুবাদ জানাতে চাই, তিনি পরে হলেও তথ্য যাচাই করে দেখেছেন এবং ভুল স্বীকার করে সেটি প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছেন। তবে সারাদেশে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার আগে তথ্য যাচাই করে কথা বলা উচিত ছিল। সমাজের একটি অংশ, যারা সবসময়ই কিছুটা হলেও ধর্মের দোহাই দিয়ে নানাভাবে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পথকে রুদ্ধ করার চেষ্টা করে, তারা তার এই বক্তব্যের ভিডিওটি ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কাজেই তিনি তার বক্তব্যটা যেখানে বলেছেন, সেখানেই শেষ না; যেখানে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, সেখানেও শেষ না। এর ব্যাপক অপব্যবহার হচ্ছে।
সম্প্রতি জাতীয় সংসদে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য ফখরুল ইমাম তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই থেকে বেশ কিছু বিষয় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই যে শিক্ষাব্যবস্থা প্রাইমারিতে আছে, সেখানে ক্লাস টুতে ‘সবাই মিলে কাজ করি’ শিরোনামে মহানবীর সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। ক্লাস থ্রির পাঠ্যবই থেকে ‘খলিফা হযরত আবু বকর’ শিরোনামে একটা সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। চতুর্থ শ্রেণিতে খলিফা হযরত ওমরের সংক্ষিপ্ত জীবনী ছিল, সেটা বাদ দিয়েছে। পঞ্চম শ্রেণিতে নবীজীর বিদায় হজ নিয়ে লেখা, সেটা বাদ দিয়েছে। ফখরুল ইমাম সংসদ অধিবেশনে নিজের বক্তব্যে আরও বলেন, পঞ্চম শ্রেণির বইয়ে ‘বই’ নামক একটা কবিতা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেটা ধর্মীয় গ্রন্থ আল কোরআন বিরোধী কবিতা। আর ষষ্ঠ শ্রেণিতে ‘লাল গরু’ নামক একটি ছোট গল্প আনা হয়েছে যা মুসলিম শিক্ষার্থীদের শেখানো হচ্ছে গরু হচ্ছে মায়ের মতো, তাই গরু জবাই করা ঠিক নয়। অর্থাৎ হিন্দুত্ববাদ। সপ্তম শ্রেণির বইতে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘লালু’ নামক একটি গল্প ঢুকানো হয়েছে। যাতে শেখানো হচ্ছে হিন্দুদের কালীপূজা ও পাঠা বলির কাহিনী। অষ্টম শ্রেণির বইতে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের সংক্ষিপ্ত রূপ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এক ধর্মের বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা ও অন্য ধর্মের বিষয়কে বাদ দেওয়া হয়েছে- এমন প্রসঙ্গ তুলে জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য বলেন, এগুলো কিসের আলামত? আমরা সবাই একসঙ্গে থাকতে চাই, কিন্তু একটা ধর্মের গ্রন্থকে বাদ দিয়ে আরেকটা ধর্মের প্রাধিকার দিয়ে সেখানে আপনি সংস্কৃতি বদলের চেষ্টা করবেন, সেটা কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অবশ্যই দেখতে হবে। এ বক্তব্য দেওয়ার পর সমালোচনা শুরু হলে তিনি বক্তব্য এক্সপাঞ্জ (প্রত্যাহার) করার আবেদন করেন।