| |
               

মূল পাতা রাজনীতি সাংবাদ সম্মেলনে জমিয়তের ৮ দফা দাবি


বন্যা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে জমিয়তের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সাংবাদ সম্মেলনে জমিয়তের ৮ দফা দাবি


রহমত ডেস্ক     20 June, 2022     04:08 PM    


সিলেট বিভাগসহ দেশেন বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান বন্যা পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আজকের সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হলেও  দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি,কারাবন্দি উলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ তন্মধ্যে অন্যতম। সঙ্গত কারণে বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতির সাথে ৮ দফা দবিলোকে যুক্ত করে সরকারের কাছে নিম্নোক্ত দাবীসমূহ উপস্থাপন করা হয়।

দাবীসমূহ :  ১. বন্যাকবলিত জেলাগুলোর মধ্যে যে সব জেলার অবস্থা খুবই ভয়াবহ, অতিদ্রুত সে সব জেলাকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২. দুর্গত জেলাগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীসহ জরুরী ঔষধ প্রেরণ নিশ্চিত করা হোক। ৩. বন্যাপরবর্তী সময়ে ঘরবাড়ি হারা মানুষদেরকে পুনর্বাসিত করতে আলাদা বরাদ্দ দেওয়া এবং ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ ও রাস্তাঘাটগুলোতে ব্যাপক ভাবে সংস্কারকাজ আরম্ভ করা হোক।বিশেষ করে সিলেটের সুরমা,কুশিয়ারা ও বরাক নদীর সংযোগস্থল বা ত্রিমোহনার পাশে অবস্থিত আমলশিদের দুর্বল বাঁধটিকে শক্তিশালী বেড়িবাঁধে পরিণত করা হোক।এতে ইনশাআল্লাহ বারংবার প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল। ৪. এবারের ভয়াবহ বন্যাজনিত কারণে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্পসমূহের বরাদ্দ কমিয়ে দর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হোক। ৫. জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহ-সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল-হাবীবসহ কারাবন্দি সকল আলমকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হোক। ৬. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ,অর্থবহ ও গ্রহণযোগ্য করার জনদাবী পুরণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক। ৭. দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতিতে জনসাধারণ আজ দিশেহারা।বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা চরম কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।তাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে অতিদ্রুত বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ৮. দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত উর্ধ্বগতি ও দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক সংকটের বড় কারণ হিসেবে আমরা মনে করি দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হওয়া। অতি সম্প্রতি সুইচ ব্যাংকের যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা রীতিমত উদ্বেগজনক।উক্ত প্রতিবেদনে বাংলাদেশের গচ্ছিত অর্থের যে পরিমাণ দেখানো হয়েছে তাও লোমহর্ষক। সুতরাং এ বিষয়ে অনুসন্ধানপূর্বক পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনয়ন এবং পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।

আজ (২১ জুন) সোমবার দুপুর ১২টায় পল্টনস্থ দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন জমিয়তের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। দলের সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুকের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সহসভাপতি মাওলানা আবদুর রব ইউসূফী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস কাসেমী, সহকারী মহাসচিব মাওলানা জাকারিয়া আমিনী, অর্থ সম্পাদক মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আফজাল হোসাইন রহমানী, অফিস সম্পাদক মাওলানা আব্দুল গফ্ফার ছয়ঘরী, পাঠাগার সম্পাদক মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা মাহবুবুল আলম, সদস্য মাওলানা ইলিয়াস আমিনী, মাওলানা সলিমুল্লাহ খান,প্রবাসী নেতা মাওলানা আলী নূর, মাওলানা বুরহান উদ্দিন ও মাওলানা নূরে আলম ইসহাকী, মাওলানা বিন ইয়ামিন, নূর হোসেন সবুজ প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জমিয়তে মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, দেশের বিরাজমান বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন।পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন বন্যা আর কখনো হয়নি।প্রাপ্ত খবর অনুসারে ক্রমাগত বৃষ্টিতে ভারতের মেঘালয় ও আসাম থেকে নেমে আসা পানিতে বাংলাদেশের বন্যা পরিস্থিতি এ রকম ভয়াল রূপ নিয়েছে।সিলেট,সুনামগঞ্জ,হবিগঞ্জ,মৌলভীবাজার,নেত্রকোনা,লালমনিরহাট,কুড়িগ্রাম,রংপুর ও নীলফামারীসহ বিভিন্ন জেলায় ৪০ লক্ষ মানুষ পানিবন্দি। বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে সড়ক ও বিদ্যুত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বন্ধ হয়েছে মোবাইল নেটওয়ার্ক।পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। অসংখ্য বসতবাড়ী বিলীন হয়ে গেছে।হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে।দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে মৃত্যু ও নিখোঁজসহ ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্র এখনো পাওয়া যায়নি। এককথায় লক্ষ লক্ষ পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ ও দুর্দশার কোন সীমাপরিসীমা নেই।এমনকি বন্যার্ত মানুষজন আশ্রয় নেওয়ার জায়গাটুকুও পাচ্ছে না।অনেক বিলম্বে উদ্ধার তৎপরতা শুরু হলেও তা অপর্যাপ্ত। এহেন পরিস্থিতিতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা কয়েক দফায় সুনামগঞ্জ ও সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ,গোয়াইনঘাট,জৈন্তাপুর,কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায় ব্যাপকভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালিয়েছি। তৎসঙ্গে আমাদের সহযোগী সংগঠন যুব জমিয়ত বাংলাদেশ, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ ও স্থানীয় শাখাসমূহের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনা করে দলের সম্মানিত সভাপতি আল্লামা শায়খ যিয়া উদ্দীন সাহেবকে আহবায়ক করে ১৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটিও গঠন করা হয়েছে।আশা করি এই কমিটি পরবর্তী ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠু ভাবে সম্পাদন করতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ।

 লিখিত বক্তব্যে মাওলানা আফেন্দী বলেন, আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন বন্যা শুরু হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত সর্বস্তরের আলেম-উলামা,বিভিন্ন রাজনৈতিক/অরাজনৈতিক সংগঠন,বিভিন্ন সেবাসংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ মানুষেরাও ব্যক্তিগত ও সম্মিলিত ভাবে ব্যাপক উৎসাহের সাথে দুর্দশাগ্রস্ত জনতার পাশে দাঁড়িয়েছেন।আজ আমরা আপনাদের মাধ্যমে তাঁদের সকলকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি। সুতরাং "আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী ছাড়া বন্যার্তদের পাশে কেউ নেই" মর্মে মাননীয় তথ্যমন্ত্রী সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সম্পূর্ণ অবাস্তব।আমরা আজ আপনাদের মাধ্যমে আমাদের দলীয় নেতা-কর্মী এবং দেশ-বিদেশের সমস্ত সামর্থ্যবান ভাই-বোনদেরকে জাতির এ দুর্দিনে এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। এর সাওয়াব ও প্রতিদান অবশ্যই আমরা পাব ইনশাআল্লাহ।