| |
               

মূল পাতা রাজনীতি সেতু উৎসব বন্ধ করুন: রিজভী


সেতু উৎসব বন্ধ করুন: রিজভী


রহমত ডেস্ক     19 June, 2022     02:14 PM    


পদ্মা সেতু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে যে উৎসবের আয়োজন করতে যাচ্ছে সরকার, তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। এই লোক দেখানো ভোজবাজী বন্ধ করুন। বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করুন। কোনো বিলম্ব ছাড়া এই অঞ্চলগুলোর জনগণের জন্য ত্রাণের ব্যবস্থা করুন’।

রোববার (১৯ জুন) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘আত্মপ্রচারে নিমগ্ন নিশিরাতের বেপরোয়া সরকারের চরম ব্যর্থতা, লুটপাট, উদাসীনতা, অদূরদর্শিতা আর খামখেয়ালীপনার কারণে দেশের বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।'

‘সিলেট জেলার প্রায় পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। বানের পানিতে ভাসছে সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ জেলার ৯০ ভাগ অঞ্চল। ১২২ বছরের ইতিহাসে সিলেট ও সুনামগঞ্জে এমন ভয়ংকর বন্যা আর হয়নি। মৌলভী বাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অনেক এলাকা পানিতে একাকার। বন্যায় উপায় অন্তর না দেখে মা তার সন্তানদের পাতিলে ভাসিয়ে দিচ্ছেন এমন সংবাদও গণমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি, গবাদি পশু ভেসে যাচ্ছে পানিতে, ঘরবাড়িসহ সব জিনিস নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।’— বলেন রিজভী।

তিনি বলেন, ‘সবকিছু হারিয়ে মানুষ এখন সর্বশান্ত। ত্রাণের জন্য গোটা বন্যাদুর্গত এলাকা হাহাকার করছে। সিলেট এবং সুনামগঞ্জে শুকনো মাটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বজ্রপাত, বন্যা ও ভূমিধসে গত দুই দিনে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। সিলেট ও সুনামগঞ্জ সারাদেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দুই জেলায় ব্যাংকিং সেবা বন্ধ হয়ে গেছে। সিলেটের রেলস্টেশন, বিমান বন্দর পানির নিচে। ট্রেন ও বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।’

রিজভী বলেন, ‘স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয় বানের পানির নিচে থাকায় সব কিছু বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেটে বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ। হাসপাতালে পানি ঢুকে পড়ায় স্বাভাবিক চিকিৎসাও ব্যাহত হচ্ছে। চরম বিপর্যয়ের মধ্যে দিন কাটছে সিলেট, সুনামগঞ্জের বানভাসী মানুষের। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ঢুকেছে পানি। সেখানে মানুষ আর গবাদিপশু ঠাসাঠাসি করে বাস করছে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি কিন্তু বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই, খাদ্য নেই, পয়:নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। মানুষ হাহাকার করছে। মেঘালয়-আসাম থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বিধ্বস্ত ও বিপর্যস্ত জনপদে পরিণত হয়েছে বিস্তীর্ণ জনপদ।’

এমন মহা দুর্যোগের করাল গ্রাসে যখন মানুষ বিপর্যস্ত বিপন্ন তখন নিশিরাতের মাফিয়া সরকার মহাদূর্নীতির এপিটাফ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের উৎসব আনন্দে আত্মহারা। বন্যায় ভাসছে দেশ আর সরকারপ্রধান ভাসছে আনন্দে। প্রতিদিন আনন্দ মিছিল করছে, কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিদেশী নাচগানের লোক নিয়ে এসে কনসার্ট করছে। কি বীভৎসতা! কী অমানবিকতা!’

তিনি বলেন, ‘আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করে সারাদেশে উৎসবের আয়োজন নিয়ে শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রী এমপিরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সব জেলা প্রশাসককে লিখিত নির্দেশ দিয়েছে, টানা পাঁচ দিন সারাদেশে আনন্দ উৎসব আমোদ উল্লাস করার জন্য। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করতে হবে। নাচ গান করতে হবে। আতশবাজী ফুটাতে হবে। বর্ণাঢ্য লেজার শোর আয়োজন করতে হবে। সারাদেশে একসঙ্গে বেলুন উড়াতে হবে। পদ্মা সেতুর মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সারাদেশে একযোগে বিগ স্ক্রীনে দেখাতে হবে।’

‘শেখ হাসিনা নিজে সারাদেশের মানুষকে আনন্দ উৎসব করার নির্দেশ দিয়েছেন’— এমন তথ্য দিয়ে রিজভী বলেন, ‘দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন পদ্মার দুই প্রান্তের সমাবেশে লাখ লাখ লোক জমায়েত ঘটাতে। কয়েক হাজার বাস রিকুইজিশন করা হয়েছে। ৩০০ লঞ্চ রিকুইজিশন করা হয়েছে। জনসভাস্থলে ৫০০ টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার ম্যুরাল নির্মাণ করা হচ্ছে। দুই প্রান্তে থানা করা হয়েছে। শেখ হাসিনার নিরাপত্তার জন্য হাজার হাজার আইন শৃংখলা বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।’ ‘আমাদের দাবি পদ্মা সেতু নিয়ে উৎসব বন্ধ করুন। এই লোক দেখানো ভোজবাজী বন্ধ করুন। বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোকে দুর্গত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করুন।'