| |
               

মূল পাতা জাতীয় পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় না করলে উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না : প্রধানমন্ত্রী


পরিবেশের সঙ্গে সমন্বয় না করলে উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     05 June, 2022     06:27 PM    


পরিবেশ রক্ষায় টেকসই উন্নয়ন অর্জনে প্রকৃতিভিত্তিকি সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পরিবেশেরে সঙ্গে সমন্বয় না করলে উন্নয়ন কখনোই টেকসই হবে না। সুতরাং, আমাদের এটি মাথায় রেখে প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধানের দিকে যেতে হবে। দেশকে উন্নয়নের পথে যেতে হবে, তবে প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান নীতি অনুসরণ করতে হবে। এটি জরুরিভাবে প্রয়োজন। সরকার যখনই কোনো উন্নয়ন কর্মসূচি নেয় প্রতিটি প্রকল্পে একটি শর্ত থাকে, তা হলো এই উন্নয়ন প্রকল্পে কোনো গাছ কাটা হলে পাঁচগুণ বেশি সংখ্যক গাছ সেখানে লাগাতে হবে। দেশের বনভূমি ১১ ভাগ থেকে সরকার আজকে ২২ দশমিক ৫ ভাগে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে, আবাদি জমি সংরক্ষণের জন্য সরকার নির্বিচারে কল-কারখানা স্থাপন রোধে সারাদেশে ১শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করছে। আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় দেশের বনভূমি বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে যাবার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

আজ (৫ জুন) রবিবার সকালে গণবভন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২২’ এবং ‘জাতীয় বৃক্ষ রোপণ অভিযান ও বৃক্ষ মেলা ২০২২’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে  মূল অনুষ্ঠানে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। পরি্েবশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এবং পরি্েবশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংস্দীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ড.ফারহিনা আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং অংশী জনের মাঝে ‘পরিবেশ পদক ২০২০ ও ২০২১,’ ‘বঙ্গবন্ধু এওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন, ২০২০ ও ২০২১’, ‘বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরষ্কার, ২০১৯ ও ২০২০’ এবং বিজয়ীদের মঝে সামাজিক বনায়নের লভ্যাংশের চেক বিতরণ করেন। অনুষ্ঠানে পরি্েবশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডের ওপর একটি তথ্য চিত্র পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী বন গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রকাশিত একটি গ্রন্থের মোড়কও উন্মোচন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বনভূমি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি সার্বিক উন্নয়নের কাজও করে যেতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য দেশটাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। আমাদের সামাজিক বনায়নের কাজটাও ব্যাপকভাবে করে যেতে হবে। এতে যেমন দরিদ্র জনগোষ্ঠী লাভবান হয়। এখানে তাঁরা কেবল গাছ লাগায় না- এর সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। তাই এখন ৭০ ভাগ লভ্যাংশ প্রদান করা হচ্ছে। কাজেই এই কাজগুলো আরো ব্যাপকভাবে করতে হবে। ১৫ জুন আমরা আমাদের দলের পক্ষ থেকে প্রতিবারের মত এবারেও বৃক্ষরোপন কর্মসূচির উদ্বোধন করবো। আমাদের কৃষক লীগ, যুব লীগ, স্বেচছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগসহ প্রত্যেকটি সহযোগি সংগঠন ব্যাপক ভাবে এই বৃক্ষরোপণ করে। আর জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনকালে তাঁর সরকার ও দলের পক্ষ থেকে ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। আমাদের যত স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত যা রয়েছে এর সীমানা চত্বরে আমরা যদি ব্যাপকভাবে বৃক্ষ লাগাতে পারি তাহলে পরিবেশটা যেমন রক্ষা হবে তেমনি ফল-ফলাদিও গ্রহণ করা সম্ভব হবে। আগামী প্রজন্মের জন্য সুন্দর জীবনের নিশ্চয়তা বিধানে তাঁর সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতা পরবর্তী দেশ গঠনে কল্যাণমূলক ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রবর্তনে কাজ করে গেছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য টেকসই বাংলাদেশ গড়তে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে তিনি বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ‘ওয়াইন্ডলাইফ (কনজার্ভেশন) অর্ডিন্যান্স-১৯৭৩ জারি করেন। যা পরবর্তীতে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন, ১৯৭৪’ হিসেবে অনুমোদিত হয়। তিনি ১৯৭৩ সালে ‘পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ’ জারী করেন। তখন পানি দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পও গ্রহণ করা হয়। এ অধ্যাদেশ ও প্রকল্পের ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি হয়েছে আজকের ‘পরিবেশ অধিদপ্তর’। ১৯৭০-এর প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সময় জাতির পিতা ছুটে গিয়েছিলেন বন্যার্ত ও ঘুর্ণিঝড় কবলিত উপকূলবাসীর কাছে। প্রলয়ংকরী ঘুর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে উপকূলবাসীদের জান ও মাল রক্ষার জন্য তিনি উপকূল জুড়ে বনায়ন কার্যক্রম গ্রহণ করে সবুজ বেষ্টনী গড়ে তোলেন।

তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা নগন্য হলেও আমরা এর বিরূপ প্রভাবের নির্মম শিকার। আওয়ামী লীগ সরকার জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁঁকি মোকাবিলায় ২০০৯ সালে ‘বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড একশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি) প্রণয়ন করে। এর বাস্তবায়নে অর্থায়নের জন্য ২০০৯ সালে আমরা বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট গঠন করে। যার আওতায় প্রায় শতাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।দীর্ঘমেয়াদে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সমন্বিতভাবে অভিযোজন কৌশল ও করণীয় নির্ধারণকল্পে ‘ন্যাশনাল এডাপটেশন প্ল্যান’ বা এনএপি প্রণয়নের কাজ জুন ২০২২- এ শেষ হবে। জাতীয় পরিবেশ পদক বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁঁকি মোকাবিলায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহে অভিযোজনমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে ঢাকায় ‘গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপটেশন (জিসিএ)’ এর আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপিত হয়েছে। যার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁঁকি মোকাবিলায় জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং অভিযোজনের সর্বোত্তম কৌশল বিনিময় সহজতর হবে। এর মাধ্যমে শুধু আমাদের দেশ নয়, পুরো এ্ই অঞ্চলকে সুরক্ষিত রাখার পদক্ষেপও আমরা নিয়েছি। এত বৃহৎ ঘনবসতী পূর্ণ ছোট্ট একটি ভূখন্ডের দেশে বন ও পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষা করাটা দুরুহ।

তিনি বলেন, প্রায় ১০ লাখের অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় তারা এক সময়কার ঘন বনভূমি সমৃদ্ধ উখিয়া অঞ্চলের বনভূমি বিনষ্ট হয়েছে, যে কারণে তাঁর সরকার রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পরই তাঁর সরকার হেলিকপ্টারে বীজ ছড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি সারাদেশে সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বৃক্ষরোপনের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে। আমাদের দুর্ভাগ্য যে এরফলে সোনাদিয়াসহ বিভিন্ন চরাঞ্চল এবং সুন্দরবন এলাকায় যে প্রাকৃতিক বন্য পরিবেশ গড়ে ওঠে তা পরবর্তীকালের বিএনপি সরকার কেটে সেখানে মাছের ঘের করতে শুরু করে। শুধু তাই নয় সুন্দরবনের জীব বৈচিত্র রক্ষায় জাতির পিতার কাটা ঘাঁসিয়ার খালসহ প্রায় আড়াইশো খালের মুখ বন্ধ করেও সেখানে চিংড়ি চাষ শুরু করে।সরকার সেখান থেকে বর্তমানে প্রায় শতাধিক খাল উন্মুক্ত করতে হয়েছে এবং বাকী খালগুলো উন্মুক্ত করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে আহবান জানান তিনি ।

তিনি আরো বলেন, আমরা সরকারে আসার পর ঘাঁষিয়ার খাল আবার কেটে দিয়েছি তবে, সুন্দরবনের জীবজন্তুর চারণভ’মি এই ঘাঁষিয়ার খাল টিকে থাকবে তখনই যখন সুন্দরবনের বাকী খালগুলো উন্মুক্ত করা হবে আর সালনা নদী জাহাজ চলাচলের জন্য ব্যবহার হলে জীব বৈচিত্রের ক্ষতি হবে। তাঁর সরকার সারাদেশের নদ-নদীর নব্যতা বৃদ্ধিতে ড্রেজিং করার যে পদক্ষেপ নিয়েছে সেখান থেকে যে ভূমি উত্তোলিত হচ্ছে, সেখানে বনায়ন করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। আমাদের নদীগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে পারলে আমরা প্রকৃতিক দুর্যোগ থেকেও যেমন মুক্তি পাব তেমনি মৎস ও জলজ সম্পদ বৃদ্ধির পাশাপাশি লবণাক্ততা থেকেও বাঁচতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী দেশের প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষের আওতায় আনায় তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করে ছাদ বাগানকেও উৎসাহিত করেন এবং পরিবেশ বন এবং জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের উদ্যোগকে আরো উৎসাহিত করার পরামর্শ দেন। শেখ হাসিনা এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকেসহ দেশবাসীকে অন্তত তিনটি করে (ফলজ, বনজ, ভেষজ) গাছ লাগানোর আহ্বানও পুণর্ব্যক্ত করেন।