| |
               

মূল পাতা জাতীয় কক্সবাজারে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করবেন না : প্রধানমন্ত্রী


কক্সবাজারে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ করবেন না : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     18 May, 2022     03:34 PM    


কক্সবাজারে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ না করতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র্য অটুট রেখে এর সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। কক্সবাজারকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হবে। সে জন্য আমি সবাইকে বিশেষ করে কক্সবাজারবাসীকে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ না করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

আজ (১৮ মে) সকালে কক্সবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা মাঠে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ আয়োজিত কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের নব-নির্মিত পরিবেশ-বান্ধব বহুতল ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথি’র ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার বক্তৃতা করেন। কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের কর্মকান্ড এবং নব-নির্মিত ভবনের ওপর একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে আশপাশের উন্নয়ন পরিকল্পনা নিশ্চিত করার লক্ষে ইতোমধ্যে একটি মাস্টার প্লান তৈরি করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমাদের বিশাল সমুদ্র সীমায় পর্যটনের ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করার মাধ্যমে এই জায়গাটাকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করার উদ্যোগ আমরা নিতে যাচ্ছি। তাছাড়া যেহেতু এটা আন্তর্জাতিক এয়ার রুটে পড়ে, তাই কক্সবাজার বিমানবন্দরকে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠায় সরকারের কাজ চলমান রয়েছে। এই বিমানবন্দর যখন সম্পূর্ণ হবে তখন পশ্চিমা দেশগুলো থেকে প্রাচ্যে যাতায়াতকারী বিমানগুলো এখান থেকে রিফুয়েলিং করার মাধ্যমে এটি একটি রিফুয়েলিং কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে। রিফুয়েলিংয়ে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন সময়ে অগ্রাধিকার পায়। এক সময় হংকং ছিল, এর পর থাইল্যান্ড অথবা সিঙ্গাপুর এখন দুবাই। কিন্তু এখন কক্সবাজারই হবে আন্তর্জাতিক আকাশ পথে রিফুয়েলিং এর একটা কেন্দ্র। পাশাপাশি এখানে তাঁর সরকার ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম করেছে, ফুটবল ষ্টেডিয়ামও করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক খেলাধূলা আয়োজনের সব ধরনের ব্যবস্থা এখানে থাকবে। মেরিন ড্রাইভ যেটি কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত করা হয়েছে সেটা একেবারে চট্টগ্রাম পর্যন্ত করা হবে। সরকার ইতোমধ্যে কক্সবাজারে অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এরমধ্যে মহেশখালী, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্ট মার্টিনসহ বিভিন্ন দ্বীপাঞ্চলের উন্নয়ন উল্লেখযোগ্য। আজকে মহেশখালীতে গভীর সমুদ্র বন্দর যেমন তৈরি হচ্ছে, বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠায় বিনিয়োগ হচ্ছে। একে একটি ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড’ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এই মহেশখালীর উন্নয়ন দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিস্ময়ের সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি টেকনাফে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সঙ্গে এর সমুদ্র সৈকতও যাতে আন্তর্জাতিক মানের হয় সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

অতীতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কক্সবাজার সফরকালে যোগাযোগ ব্যবস্থার দুরাবস্থার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি অনুযায়ী দোহাজারি থেকে গুনধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ এবং চমৎকার একটি রেলস্টেশন নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের ন্যয় কক্সবাজার অবধি হাইওয়ের কাজও চলছে। পাশাপাশি সিলেট থেকে কক্সবাজার সরাসরি বিমান চলাচল চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আমাদের অন্যান্য অঞ্চল যেমন বরিশাল, রাজশাহী এবং সৈয়দপুরসহ যতগুলো বিমানবন্দর রয়েছে সেখান থেকে কক্সবাজারের সঙ্গে সরাসরি বিমান চলাচল চালুর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষকে ইতোমধ্যেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কক্সবাজারে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের অনুমোদন সরকার দিয়েছে। সেখানে একটি মেডিক্যাল কলেজ করা হয়েছে, হাসপাতাল স্থাপনের পাশাপাশি উন্নতমানের কনভেনশন সেন্টার এই কক্সবাজারেই করা হবে। যাতে যে কোন ধরনের সেমিনার-সিম্পোজিয়াম সেখানে আয়োজনের পাশাপাশি পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয় হয়।

কক্সবাজারে ‘সি এ্যাকুরিয়াম’ প্রতিষ্ঠার কথা পুনরোল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, এদেশে এ ধরনের এ্যাকুরিয়াম পরিচালনায় দক্ষ জনবলের অভাব থাকায় তাঁর সরকার এ ব্যাপারেও কাজ করে যাচ্ছে। ’৯১ সালের ঘূর্ণি দুর্গতদের কক্সবাজার খুরুশকুলে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বহুতল ফ্ল্যাট বাড়ি নির্মাণ করে দেয়ার কথাও উল্লেখ করেন। এই ফ্ল্যাটের অধিবাসীরা অধিকাংশই মৎসজীবী হওয়ার কারণে সেখানে একটি দৃষ্টিনন্দন আধুনিক শুটকির হাট করে দেয়ার পাশাপাশি সেখানকার সি-বীচ উন্নয়নেরও পদক্ষেপ নেয়া হবে। যে সব দেশে বরফ পড়ে সে সব দেশে বরফ গলানোর জন্য অপরিশোধিত লবণের ব্যবহার হয়। লবণের উৎপাদন বাড়ানো এবং এ অঞ্চলের লবণ চাষিদের জন্য আরো সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে লবণ উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তারও উল্লেখ করেন। চিংড়ি চাষিদের জন্য তাঁর সরকার সেখানে চিংড়ির পোনা উৎপাদনের যেমন ব্যবস্থা নিয়েছে তেমনি যশোর থেকে উৎপাদিত চিংড়ির পোনা হেলিকপ্টার বা বিমানে কক্সবাজারে পাঠানোর উদ্যোগও সরকার নিয়েছে।

প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর এই দেশের সার্বিক উন্নয়ন তাঁর সরকারের একমাত্র লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্র, পাহাড় এবং সবুজে ঘেরা সমতল ভূমির এই চমৎকার ভূখন্ডকে জাতির পিতা আমাদেরকে উপহার দিয়ে গেছেন। কাজেই একে আরো উন্নত-সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এর প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সম্পদ রক্ষা করা একান্তভাবেই জরুরি। দেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার সঙ্গে দ্বীপটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও একান্তভাবে অপরিহার্য। কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশন স্থাপনসহ কক্সবাজার থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম পর্যন্ত স্থল সীমানা রক্ষায় বর্ডার গার্ডের জন্য নতুন নতুন ‘বিওপি’ প্রতিষ্ঠা এবং যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার কথা বলেন।পর্যটকদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীববৈচিত্র যেন অটুট থাকে সে দিকে লক্ষ্য রাখার জন্য কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃর্পক্ষকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিশেষকরে লাল কাঁকড়া, কাছিম এবং অন্যান্য সামুদ্রিক জীবের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র এবং সামুক-ঝিনুক, লতা-গুল্ম প্রভৃতির সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহবান জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোটা কক্সবাজার ঘিরেই আমাদের অনেক অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনা রয়েছে সে জন্যই ‘কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃর্পক্ষ’ করে দিয়েছি। কাজেই পর্যটনকে আকর্ষণীয় করতে আজকাল অনেক ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়, সে সব ব্যবস্থাও আমরা ধীরে ধীরে নেব। কারণ, বাংলাদেশে বিশ্বে সবচেয়ে সুন্দর এবং উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সরকার ইতোমধ্যেই করোনাকালিন অর্থনৈতিক ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, সরকার প্রধান দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহবান পুণর্ব্যক্ত করেন।কক্সবাজার সমুদ্র তট রক্ষায় জাতির পিতার ঝাউবন সৃষ্টির প্রসঙ্গ টেনে এর চারদিকে ঝাউবনের সবুজ বেষ্টনি গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখ করেন। আসছে আষাঢ় মাসে তাঁর দল আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন কৃষক লীগের দেশব্যাপী অনুষ্ঠেয় বৃক্ষরোপন কর্মসূচির কথা উল্লেখ করেন, এই কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত পুরোটাই যদি আমরা ঝাউবন দিয়ে ঢেকে দিতে পারি তাহলে ঝড়-জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। কাজেই প্রতিবছরই সবাই মিলে এ রকম ঝাউবন তৈরি বা ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরোপনের উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান তিনি।