| |
               

মূল পাতা জাতীয় বিমসটেক নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


বিমসটেক নেতাদের একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর


রহমত ডেস্ক     30 March, 2022     05:52 PM    


বিমসটেক নেতৃবৃন্দকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কভিড-১৯ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ এবং পশ্চিমের রাজনৈতিক সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় সদস্য দেশগুলোর পারস্পরিক স্বার্থে এই ফোরামটি হতে পারে একটি কার্যকর হাতিয়ার। এই সম্মেলন আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার এবং একাধিক চ্যালেঞ্জের অভিন্ন সমাধান খুঁজে বের করার সুযোগ দেবে। বিমসটেক সদস্যভুক্ত ৭টি দেশে ১৫৪ কোটির বেশি লোকের বসবাস, যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক পঞ্চমাংশের বেশি, এই বিশাল জনসংখ্যা কেবল একটি চ্যালেঞ্জ নয়, এটি একটি বড় সুযোগও। এ অঞ্চলের পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে একটি টেকসই এবং প্রতিকূলতা সহিষ্ণু বঙ্গোপসাগর অঞ্চল পূনর্গঠনের জন্য অভিন্ন কৌশল খোঁজার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

 আজ (৩০ মার্চ) বুধবার শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অনুষ্ঠিত বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্ট্রি-সেক্টরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন-বিমসটেক ফোরামের ২৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে শীর্ষ সম্মেলনে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। শ্রীলঙ্কা ভার্চ্যুয়ালি এই ৫ম বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘বিমসটেক-টুওয়ার্ডস এ রেসিলেন্ট রিজিয়ন, প্রোসপারাস ইকোনমিকস অ্যান্ড হেলদি পিপলস।’ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়ে রাজাপাকসের সভাপতিত্বে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, প্রতিনিধিদলের প্রধান এবং বিমসটেক মহাসচিব অ্যাম্বাসেডর তেনজিন লেকফেল সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থা চালুর জন্য ২০১৪ সালে এগ্রিমেন্ট অন ফ্রি ট্রেড এরিয়া (এফটিএ) স্বাক্ষরিত হয়।

শীর্ষ সম্মেলনে তিন দফা প্রস্তাব রাখেন এবং সকল নেতাদের সহযোগিতায় ১৪টি সেক্টরকে সক্রিয় করে প্রক্রিয়াটিকে সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রথম দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী জনগণের স্বার্থে অবিলম্বে বাস্তব সুবিধা নিশ্চিত করতে বিমসটেক এফটিএ, বিমসটেক সেন্টারসমূহ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, এনার্জি সেন্টার, কালচারাল কমিশন ইত্যাদি, সংযোগ প্রকল্প, বিদ্যুতের গ্রিড লাইন সংযোগে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। দ্বিতীয় দফায় তিনি বলেন, অন্যান্য সব আইনি উপকরণ এবং নীতি সংক্রান্ত চলমান প্রক্রিয়া যা এখনো সম্পন্ন হয়নি, সে গুলো দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন। পরিশেষে তৃতীয় দফায় তিনি উদীয়মান হুমকি মোকাবেলা এবং নতুন সুযোগ গ্রহণের লক্ষে বিমসটেকের বাইরে প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব সম্প্রসারণ করে সৃজনশীল এবং উদ্ভাবনী প্রক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার জন্য সংস্থাটিকে ক্ষমতায়নের পরামর্শ দেন।

বিমসটেকের সদস্যভুক্ত দেশগুলোতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের জন্য নেতৃত্ব দানকারি দেশ হিসেবে বাংলাদেশের গুরুত্ব তুলে ধরে বিমসটেক কাঠামোর বাস্তবায়নে সহযোগিতা বাড়াতে নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এক্ষেত্রে এফটিএ’র কিছু অত্যাবশকীয় আইনগত দিক চূড়ান্ত করা প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের নেতৃত্বে সংশ্লিষ্ট সেক্টরাল ওয়ার্কিং গ্রুপের সহযোগিতায় এগ্রিমেন্ট অন ট্রেড ইন গুডস অ্যান্ড রুলস অব অরিজিন চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে আমি নেতাদের সহযোগিতা চাচ্ছি।

বিমসটেক সহযোগিতার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান মাল্টিমডেল পরিবহন সংযোগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তাঁর দেশ বে অব বেঙ্গল রিজিয়নে বিভিন্ন দেশের সাথে বাংলাদেশকে যুক্ত করার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংকের কারিগরি সহযোগিতায় সদস্য দেশগুলোর প্রণীত বিমসটেক ট্রান্সপোর্ট কানেকটিভিটি মাস্টার প্লান গ্রহণে আজ বিমসটেক নেতাদের সাথে খুশি মনে যোগ দেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এ মাস্টার প্লান বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলের আঞ্চলিক ঐক্য সহজ করবে।’

অপরদিকে তিনি বলেন, উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য জ্বালানি খাতে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এই কারণে সকলকে উদ্ভাবনী ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য নতুন ও যৌথ পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ২০১৮ সালের সর্বশেষ সম্মেলন চলাকালে বিমসটেকের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোজন বিষয়ে সকল দেশের চুক্তি স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ চুক্তিকে কার্যকর করতে আমরা একত্রে কাজ করতে পারি। বিদ্যুৎ গ্রিড সংযোজন বিষয়ে বিমসটেক মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে এডিবির প্রস্তাবিত কারিগরি সহযোগিতা কার্যক্রমকে তারা স্বাগত জানাতে পারে।

 বিমসটেক সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা কৌশলের কাঠামোর মধ্যে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারে তাঁর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ জন্য বাংলাদেশ কাজ করছে এবং বিমসটেক কনভেনশন অন কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড কনভেনশনাল ক্রাইম’র (সিটিটিসি) অধীনে সকল কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে। পাশাপাশি বিমসটেক ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজর্স ফোরামের কাঠামোর অধীনে নিয়মিত নিরাপত্তা পরামর্শে অংশ নিচ্ছে। স্থায়ী সচিবালয় এবং মহাসচিব তাদের সমন্বয় এবং সুবিধা কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন। আয়োজক দেশ হিসেবে অবকাঠামো জোরদারে প্রয়োজনীয় সবকিছু করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কার্যকারিতা ও সঠিক প্রতিনিধিত্বের জন্য তিনি বর্তমান সচিবালয়ের প্রাঙ্গনে একটি নতুন আইকনিক ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন। মহাসচিব এবং তার টিমকে তাদের নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে বিমসটেক সহয়োগিতার কার্যক্রমকে জোরদারের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমসটেক তার ২৫ তম বার্ষিকী উদযাপন করছে, এতে তিনি খুশি। চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলনের নির্দেশনা অনুসরণ করে সব সরকার আলোচনা করে প্রস্তাবিত চার্টারের টেক্সট চূড়ান্ত করেছে, যা আমরা আজ অনুমোদন এবং স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। তারা আরো তিনটি পারস্পরিক আইনী দলিলে স্বাক্ষর প্রত্যক্ষ করবেন। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতার স্বপ্ন দেখেছিলেন। জাতির পিতার স্বপ্নের উত্তরাধিকার বাস্তবায়নে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে ১৯৯৭ সালে বিমসটেকে যোগ দেয়। সংস্থার রজত জয়ন্তীর প্রাক্কালে আজ আমি ব্যক্তিগতভাবে একমাত্র প্রতিষ্ঠাতা নেতা হিসেবে বিশেষ মর্যাদা অনুভব করছি। জাতির পিতার আঞ্চলিক সহযোগিতার অনুপ্রেরণা আজ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতির অগ্রাধিকারের অংশ এবং ঢাকায় বিমসটেক সটিবালয় এই সংস্থার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার প্রতিফলিত করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশকে গণতান্ত্রিক রীতি সমুন্নত রেখে আর্থ-সামাজিক ফ্রন্টে বাংলাদেশে একটি অভূতপূর্ব পরিবর্তন এসেছে। এ সময়ে দারিদ্রের হার ৪১.৫ শতাংশ থেকে ২০.৫ শতাংশ এবং অতি দারিদ্রের হার ২৫.১ শতাংশ থেকে ১০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মাথাপিছু আয় তিনগুণের বেশী বেড়ে ২,৫৯১ ডলার হয়েছে এবং শিশু মৃত্যুর হার কমে প্রতি ১ হাজারে ২৩.৬৭ এবং মাতৃমৃত্যুর হার কমে প্রতি ১ লাখে ১৭৩ জনে দাঁড়িয়েছে। গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ বছর। বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি, কভিড-১৯ মহামারির সময়েও বাংলাদেশ গত বছর ৬.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে। মাত্র গত সপ্তাহে বাংলাদেশ জনসংখ্যার ১০০ ভাগ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। এ ছাড়া ইউএনজিএ বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উন্নয়নে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে।