| |
               

মূল পাতা জাতীয় অবহেলিত মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী


অবহেলিত মানুষগুলোর ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি : প্রধানমন্ত্রী


রহমত ডেস্ক     20 February, 2022     03:25 PM    


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বীতা অর্জনের পাশাপাশি দেশের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো বিকশিত করায় তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমাদের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি সেটা যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো বিকশিত হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। আমরা চাই অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বীতা অর্জন করতে। আমরা বাংলাদেশে একেবারে তৃণমূলের যে মানুষগুলো, অবহেলিত মানুষগুলো রয়েছেন তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনে কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা চাই অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বীতা অর্জন করা এবং আমাদের ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি সেটা যেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরো বিকষিত হয় সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে। কাজেই সেই প্রচেষ্টাতেও আমরা সাফল্য অর্জন করবো বলে আমি বিশ্বাস করি।

আজ (২০ ফেব্রুয়ারি) রবিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘একুশে পদক ২০২২’ প্রদান অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম. মোজাম্মেল হক অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের মাঝে পদক বিতরণ করেন। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রি পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিসরূপ দেশের ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিককে এবার একুশে পদক প্রদান করেছে সরকার। এ বছর ভাষা আন্দোলন বিভাগে দুইজন, মুক্তিযুদ্ধে চারজন, শিল্পকলা (শিল্প, সংগীত ও নৃত্য) বিভাগে সাতজন, সমাজসেবা বিভাগে দুইজন, ভাষা ও সাহিত্যে দুইজন, গবেষণায় চারজন এবং সাংবাদিকতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং শিক্ষায় একজন করে পুরস্কার পেয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী, নির্বাচিত প্রত্যেককে এককালীন নগদ ৪ লাখ টাকাসহ ৩৫ গ্রাম ওজনের একটি স্বর্ণপদক, রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র প্রদান করা হয়। ভাষা আন্দোলনের ক্ষেত্রে মোস্তফা এম এ মতিন (মরণোত্তর) এবং মির্জা তোফাজ্জল হোসেন মুকুল (মরণোত্তর) পুরস্কার পেয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে মনোনীত হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব অধ্যক্ষ মো. মতিউর রহমান, রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী (মরণোত্তর), কিউএবিএম রহমান ও আমজাদ আলী খন্দকার। নৃত্যে মনোনীত হয়েছেন জিনাত বরকতুল্লাহ, সঙ্গীতে নজরুল ইসলাম বাবু (মরণোত্তর), ইকবাল আহমেদ ও মাহমুদুর রহমান বেনু, অভিনয়ে খালেদ মাহমুদ খান (মরণোত্তর), আফজাল হোসেন ও মাসুম আজিজ। সাংবাদিকতায় এম এ মালেক, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে মো. আনোয়ার হোসেন এবং শিক্ষায় অধ্যাপক ডা. গৌতম বুদ্ধ দাস মনোনীত হয়েছেন। সমাজসেবা বিভাগে মনোনীত হয়েছেন এস এম আব্রাহাম লিংকন ও সংঘরাজ ডা. জ্ঞানশ্রী মহাথেরো। ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন কবি কামাল চৌধুরী ও ঝর্ণা দাস পুরকায়স্থ। কবি কামাল চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও মুজিববর্ষ উদযাপনের জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কের পদে অধিষ্ঠিত।গবেষণা বিভাগে মনোনীত হয়েছেন এমিরেটাস অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস সাত্তার মন্ডল, ডা. মো. এনামুল হক (টিম লিডার), ডা. শাহানাজ সুলতানা (টিম) এবং ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস (টিম)।

যাঁরা আজকে সম্মাননা পেয়েছেন এবং যাঁরা এখনও কাজ করে যাচ্ছেন সবাইকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। আমাদের এই গুণীজনরাইতো পথ দেখাবে। আপনাদের এই অবদান বিভিন্ন ক্ষেত্রে রয়েছে বলেই আজকে আমাদের এই অগ্রযাত্রা সম্ভব হয়েছে। আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেন দেশের কল্যাণে কাজ করে সেটাই আমি চাই।একুশ আমাদের প্রেরণা দেয়। একুশ মানে মাথা নোয়াবার নয়। তাই, অমর একুশে ফেব্রুয়ারি দিবসটি আমাদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। একুশের পথ ধরে বহু সংগ্রামের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন, এই সংগ্রামে বিভিন্ন জন যাঁরা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন তারাতো বটেই, এর বাইরেও অনেকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। প্রতিটি সংগ্রামে মানুষের অবদান রয়েছে। কেউ সরাসরি রাস্তায় নেমে আন্দোলন যেমন করেছেন ঠিক পাশাপাশি ভাষা-সংস্কৃতির মাধ্যমে-গান, নাটিকা, কবিতার প্রভৃতির মাধ্যমে এই আন্দোলনকে সহযোগিতা করেছেন এবং তাদের অবদান সবসময় চিরস্মরণীয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে যে ক’জন গুণীজন পুরস্কৃতি হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেই সেই ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে, ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অনেক অবদান রেখেছেন। কাজেই তাদের খুঁজে বের করা এবং সম্মানিত করা এবং দেশের নতুন প্রজন্মের সঙ্গেও তাদের পরিচয় ঘটানো- যে কত ত্যাগ তিতীক্ষার মধ্যদিয়ে আমাদের এই স্বাধীনতা অর্জন ছিল। কেন, হঠাৎ ঘোষণার মধ্যদিয়ে স্বাধীনতা আসে না এবং সেটা আসেনি। যে সংগ্রামের শুরুই করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। বঙ্গবন্ধুরই অবদান আজকে আমাদের স্বাধীন জাতিস্বত্তা এবং বাংলাদেশ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পেরেছে। বঙ্গবন্ধু যখন দেশ স্বাধীন করে একটি যুদ্ধ বিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে বাংলাদেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তাঁকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ওপর আঘাত এল। মনে হল ’৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের প্রতিশোধটাই নিয়েছিল পরাজিত শক্তি ’৭৫ এর ১৫ আগস্টে। কেননা, জাতির পিতাকে হত্যার পর যে আদর্শ বা নীতি নিয়ে দেশটা স্বাধীন হয়েছিল তার থেকে দেশকে অনেক দূরে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ভূলুন্ঠিত করা হয়েছিল। কিন্তু, ২১ বছর পর ’৯৬ সালে প্রথমবার ক্ষমতায় এসেই আওয়ামী লীগ সরকার তা আবার পুণ:প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

তিনি বলেন, আমরা যখন পুণরায় সরকারে আসি তখন আমাদের প্রচেষ্টাই ছিল ২১শে ফেব্রুয়ারি শুধু আমাদের নয়, যাঁরা মাতৃভাষা ভালবাসে এবং মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে সেই মাতৃভাষাকে সংরক্ষণ করা, হারিয়ে যাওয়া মাতৃভাষাকে খুঁজে বের করাটাই তাঁর সরকারের প্রচেষ্টা হয়ে দাঁড়ায়।সরকার সে প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে, আজকে ২১শে ফেব্্রুয়ারি শুধু বাংলাদেশেই নয়, বিশ^ব্যাপী পালিত হচ্ছে। কারণ, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি। কাজেই, আমাদের সকলকে এদিকে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে-কেননা যা কিছু আমাদের অর্জন, যা কিছুই আমরা করতে পেরেছি মহান আত্মত্যাগের মধ্যদিয়েই আমরা তা করতে পেরেছি।

‘মহান অর্জনের জন্য মহান আত্মত্যাগ দরকার,’- বঙ্গবন্ধু এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহান আত্মত্যাগের মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার এবং স্বাধীনতা অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। কাজেই মা’কে মা’ বলে ডাকার অধিকার অর্জন আমাদের জন্য একটা বিরাট পাওয়া। আজকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, বাংলাদেশকে বিশ্বে ’৭৫ এর পর যেভাবে হেয় করে দেখা হোত এখন তা আর হয় না। তিনি বলেন, অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি আজকের বাংলাদেশ সারাবিশ্বে একটা আলাদা মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনা না ঘটলে এটা হয়তো আমরা আরো আনেক আগেই করতে পারতাম। ’৭৫ এর ছোট বোন রেহানাসহ বিদেশে রিফিউজি হিসেবে জীবন কাটাতে বাধ্য হবার কথা স্মরণ করে বলেন, তবে, আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল যখনই সুযোগ পাব এদেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করার মাধ্যমে বাঙালি জাতিকে আবার বিশ^ দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করার। আজকে আমরা বিশে^ মাথা উঁচু করে চলতে পারি।

তিনি বলেন, আজকে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশে^ যে স্বীকৃতি পেয়েছে সেটা বাংলাদেশের মানুষেরই অবদান। আমাদের সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যাঁরা অবদান রেখে যাচ্ছেন- সেখানে গবেষণা, সংস্কৃতি চর্চা থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ভাষা আন্দোলন-সেই ধরনের গুণীজনকে সম্মানিত করার জন্যই এই প্রয়াস। সকলকে আমরা দিতে পারি না তবুও আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে ,যাঁরা একসময় অবদান রেখেছেন আবার একসময় অনেকে হারিয়েও যাচ্ছিলেন চেষ্টা করে যাচ্ছি তাদেরকেও খুঁজে বের করতে এবং তাদের সম্মান জানাতে। যাতে ইতিহাস বিকৃতির হাত থেকে আমাদের দেশের মানুষ মুক্তি পায়। কারণ ’৭৫ এর পরতো ইতিহাস বিকৃতিই করা হয়েছিল। ভাষা আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে অবদান সেটাতো মুছেই ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। আসলে সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। ইতিহাস ঠিকই ফিরে আসে। আর আজকে আমাদের সেই দিন। সকলে যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন সেটা আমি যেমন অনুরোধ করবো। পাশাপাশি, আমরা যে বিনা পয়সায় টিকাদান কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছি সেই সুুবিধা নিয়ে সকলে করোনার টিকা গ্রহণ করবেন। যেটা অনেক অর্থনৈতিকভাবে সক্ষম দেশও করতে পারেনি। আর এই টিকা আপনাকে সুরক্ষিত করবে।