| |
               

মূল পাতা শিক্ষাঙ্গন এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা


এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি আত্মহত্যা করেছেন


রহমত ডেস্ক     29 January, 2022     09:47 PM    


পারিবারিক সমস্যা, হতাশা, সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা, আর্থিক সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি কারণে গত বছর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৬২ জন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তাদের মধ্যে ৬৫ জন পুরুষ এবং ৩৬ জন নারী শিক্ষার্থী। গত বছর সর্বোচ্চ ৯ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এছাড়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংগঠনটি ২০১৯ সাল থেকে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে কাজ করছে। দেশের প্রায় অর্ধশতাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকার তথ্য যাচাই করে আঁচল ফাউন্ডেশন এ চিত্র পেয়েছে।  সমীক্ষায় দেখা গেছে, সম্পর্কগত সমস্যার কারণে ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। পারিবারিক সমস্যার কারণে ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, মানসিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। পড়াশোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মহত্যা করেছেন ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর্থিক সমস্যার কারণে ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ, মাদকাসক্ত হয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে আত্মহত্যা করেছেন ২১ দশমিক ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। বয়সভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। ১৮-২১ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৭ জন, ২৬-২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১০ জন এবং ২৯ উর্ধ্ব ৪ জন আত্মহত্যা করেছেন। সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীরা।

May be an image of text that says '১৯.৮০% বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার কারণ সম্পর্ক নিয়ে জটিলতা পারিবারিক সমস্যা মানসিক চাপ পড়াশোনা আর্থিক সংকট মাদকাসক্তি অন্যান্য ১৫.৮৪% ২৪.৭৫% ১০.৮৯% ২১.৭৮% ৪.৯৫% .৯৮% সূত্র: আঁচল ফাউন্ডেশন'

সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই বেশি আত্মহত্যা করেছেন :  দেশে গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার যে সংখ্যা জানিয়েছে আঁচল ফাউন্ডেশন তার মধ্যে ৬২ জনই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এছাড়া মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২ জন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ জনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের, এরপরই আছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চারজন। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনজন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে উঠে এসেছে সমীক্ষা জরিপে। সংস্থাটির হিসাবে, ২০১৮ সালে ১১ এবং ২০১৭ সালে ১৯ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিলেন। ২০২০ সালের মার্চে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের পর থেকে ১৫ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই সময় মানসিক চাপে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে যায়। সে বছর দেশে ৫০ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছিল, যার ৪২ জন ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি :  সমীক্ষার জরিপের তথ্য তুলে ধরে আঁচল ফাউন্ডেশনের গবেষকরা জানান, গত এক বছরে যারা আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে ডিসেম্বরে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে। এই মাসে গড়ে ১৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে, যা সংখ্যায় ১৫ জন। সবচেয়ে কম এপ্রিলে, যা ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ বা ২ জন। এতে দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালের চেয়ে শীতকালে আত্মহত্যার হার বেশি। স্নাতক তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলক বেশি, যা শতকরা হিসাবে ৩৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

ছাত্রদের আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি :  গত বছর আত্মহত্যার শিকার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রদের সংখ্যা বেশি। ১০১ জনের মধ্যে ৬৫ জনই ছাত্র, ৩৬ জন ছাত্রী। বয়স বিবেচনায়, ২২-২৫ বছর বয়সীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি। এ বয়সী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৬০টি আত্মহত্যার ঘটনা দেখা গেছে, যা মোট ঘটনার ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে ২১ বছর বয়সী ২৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ বা ২৭ জন। ২৬-২৯ বছর ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ১০ জন এবং ২৯ বছরের ওপরে ৩ দশমিক ৯৬ শতাংশ বা চারজন। ২০১৯ সাল থেকে আঁচল ফাউন্ডেশন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছে। এর আগে আলাদা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার সংখ্যা নিয়ে কাজ করেনি সংগঠনটি।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে না পারা আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। আত্মহত্যার কারণগুলো বাইরে থেকে যতটা দেখা যাচ্ছে, সমস্যা তার চেয়েও গভীর। নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয় শিক্ষার সুযোগ অপর্যাপ্ত বিধায়, তাদের জীবনে অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটলে তারা সেটা সামলাতে পারেন না। প্রেমে বিচ্ছেদ হলে তারা যেমন ভেঙে পড়ে, তেমনি পরীক্ষায় খারাপ ফলাফলও তাদেরকে আশাহত করে। আমরা যদি তাদেরকে শেখাতে পারি যে, ভালো-মন্দ যাই ঘটুক না কেনো, সেটা জীবনেরই অংশ এবং আত্মবিশ্বাস না হারিয়ে তাদেরকে ধৈর্য্যশীল হতে হবে। ফলপ্রসূতে এই শিক্ষার্থীরা যেকোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। পাশাপাশি সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবমুখী কিছু জ্ঞান যেমন—আর্থিক ব্যবস্থাপনা, আবেগ নিয়ন্ত্রণ, ক্যারিয়ার কেন্দ্রিক দক্ষতা উন্নয়ন ইত্যাদি আত্মহত্যা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এখনই উদ্যোগ নিতে না পারলে পরবর্তীতে আমাদের অনুশোচনা করতে হবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষায় দায়িত্বশীলদের অবদান রাখার সঠিক সময় এখনই।