রহমত ডেস্ক 27 January, 2022 06:37 PM
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এ পর্যন্ত এক দিনের জন্যও নির্মল বাতাস পায়নি রাজধানী ঢাকাবাসী। রাতে ঢাকা শহরের বাতাসের মান সবচেয়ে খারাপ থাকে। রাত ১০টার পর মালবাহী ট্রাকের প্রবেশকে এর জন্য দায়ী করা হচ্ছে। আজ (২৭ জানুয়ারি) বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত জনস্বাস্থ্য ও দুর্যোগ মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে নানা তথ্য তুলে পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন-বাপা এ তথ্য দিয়েছে। এতে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়নকেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল।
কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা ঢাকার বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। ২০১৬ থেকে ২০২১ সালের অর্থাৎ গত ৬ বছরের জানুয়ারি মাসের বায়ুমান সূচকের তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে গড় বায়ু দূষণের পরিমাণ বেড়েছে ৯.৮ শতাংশ। ২০২২ সালে জানুয়ারি মাসের প্রথম ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯.৫২ তে এসে দাঁড়িয়েছে; যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। জানুয়ারি মাসে ঢাকার মানুষ এক দিনের জন্যও ভালো বাতাস পাননি, বাতাসের মান বেশিরভাগ সময় ‘অস্বাস্থ্যকর’ থেকে ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ অবস্থায় ছিল এবং গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩৮ দিন ভালো বাতাস পেয়েছে। ঢাকা শহরের রাস্তাগুলোতে রাতের বেলায় ঝাড়ু দেওয়ার নিয়ম চালু রয়েছে, যার কারণে বাতাসে ধূলোবালি উড়তে থাকে। রাতে যেহেতু দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কম থাকে সেহেতু ধূলোবালি বাতাসে বেশি সময় ধরে অবস্থান করে।
ক্যাপসের তথ্য বলছে, ঢাকা শহরে বিকেল ৪টার পর থেকে বাতাসের মান খারাপ হতে শুরু করে, যা রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছে। গত ছয় বছরে বাতাসের মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, রাত ১টায় বায়ুমান সূচক থাকে ১৬২; যা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সর্বোচ্চ। রাত ১০টার পর উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে প্রচুর মালবাহী ট্রাক ঢাকা শহরে প্রবেশ করে, যার কারণে এসব যানবাহন থেকে রাতে প্রচুর বায়ুদূষণ হয়। ২০২১ সালে ঢাকা শহরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দূষিত ছিল তেজগাঁও (প্রতি ঘনমিটারে ৭০ মাইক্রোগ্রাম পিএম২.৫)। এর পরের অবস্থানে ছিল শাহবাগ (প্রতি ঘনমিটারে ৬৮ মাইক্রোগ্রাম)। ২০২১ সালে আহসান মঞ্জিল, আবদুল্লাহপুর, মতিঝিল, ধানমন্ডি-৩২, সংসদ ভবন, আগারগাঁও, মিরপুর-১০ এবং গুলশান-২ এই এলাকাগুলোতে ক্ষতিকর বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর গড় পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৫৭, ৬২, ৬০, ৬৩, ৫৯, ৬১, ৬৬ ও ৬৫ মাইক্রোগ্রাম; যা নির্ধারিত মান মাত্রার প্রায় ৪-৫ গুণ বেশি।
বায়ু দূষণের ভয়াবহতা থেকে উত্তরণের জন্য ১৫টি সুপারিশ তুলে ধরে বাপা। সুপারিশগুলো হলো : ১. শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে ঢাকা শহরে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছেটানোর ব্যবস্থা করতে হবে। ২. নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে। ৩. রাস্তায় ধূলা সংগ্রহের জন্য সাকশন ট্রাকের ব্যবহার করা যেতে পারে। ৪. অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে। ৫. ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে নম্বর প্লেট অনুযায়ী জোড়-বিজোড় পদ্ধতিতে গাড়ি চলাচলের প্রচলন করা যেতে পারে। ৬. সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে এবং ছাদ বাগান করার জন্য সকলকে উৎসাহিত করতে হবে। ৭. ঢাকার আশপাশে জলাধার সংরক্ষণ করতে হবে। ৮. আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে। ৯. আগুনে পোড়ানো ইটের বিকল্প হিসাবে স্যান্ড ব্লক-এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়াতে হবে। ১০. সিটি গভর্নেন্সের প্রচলনের মাধ্যমে উন্নয়নমূলক কার্যকলাপের সমন্বয় সাধন করতে হবে। সেবা সংস্থার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড স্বল্প সময়ে সম্পন্ন করতে হবে। ১১. নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ যতদ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করতে হবে। ১২. পরিবেশ সংরক্ষণ ও সচেতনতা তৈরির জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। নিয়মিত বায়ু পর্যবেক্ষণ স্টেশনের (ক্যামস) ব্যাপ্তি বাড়িয়ে ঢাকা শহরের সব এলাকাকে এর আওতাধীন করতে হবে। এছাড়াও বায়ু দূষণের পূর্বাভাস দেওয়ার প্রচলন করতে হবে। ১৩. সর্বোপরি সচেতনতা তৈরির জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে বায়ু দূষণ সম্পর্কে আরও বেশি তথ্যনির্ভর অনুষ্ঠান প্রচারের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে ঢাকাসহ সারা দেশের বায়ু দূষণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। ১৪. ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা। ১৫. পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস এবং পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।