রহমত ডেস্ক 19 January, 2022 09:39 PM
বিশ্বের শীর্ষ ঘনবসতিপূর্ণ মহানগরী ঢাকা এখন বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায়ও শীর্ষস্থান দখল করেছে। ভারতের দিল্লিকে হটিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকায় প্রথমে উঠে এসেছে ঢাকা। এছাড়া, চীনের উহান ও ভারতের নয়াদিল্লি যথাক্রমে ২৫২ ও ২১৪ একিউআই স্কোর নিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আজ (১৯ জানুয়ারি) বুধবার সকাল ১০টার দিকে ঢাকার এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স-একিউআই স্কোর ২৬৯ রেকর্ড করা হয়েছে। যার অর্থ হলো জনবহুল এ শহরের বাতাসের মান 'অস্বাস্থ্যকর' পর্যায়ে রয়েছে। একিউআই স্কোর ১৫১ থেকে ২০০ হলে নগরবাসীর প্রত্যেকের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ ও রোগীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। একিউআই স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে স্বাস্থ্য সতর্কতাসহ তা জরুরি অবস্থা হিসেবে বিবেচিত হয়। এ অবস্থায় শিশু, প্রবীণ ও অসুস্থ রোগীদের বাড়ির ভেতরে এবং অন্যদের বাড়ির বাইরের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটুকু নির্মল বা দূষিত সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং তাদের জন্য কোন ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে তা জানায়। বাংলাদেশে একিউআই নির্ধারণ করা হয় দূষণের ৫টি ধরনকে ভিত্তি করে- বস্তুকণা (পিএম১০ ও পিএম২.৫), এনও২, সিও, এসও২ এবং ওজোন (ও৩)। ঢাকা দীর্ঘদিন ধরে বায়ু দূষণে ভুগছে। এর বাতাসের গুণমান সাধারণত শীতকালে অস্বাস্থ্যকর হয়ে যায় এবং বর্ষাকালে কিছুটা উন্নত হয়। এর আগে গত বছরের ২৩ অক্টোবর ঢাকার বাতাসের গুণমান সূচক (একিউআই) ১৫৯ রেকর্ড করা হয়েছিল। তখন ঢাকাকে বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত শহর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। যা “অস্বাস্থ্যকর” হিসেবে বিবেচিত। ২০১৯ সালের মার্চ মাসে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ঢাকার বায়ু দূষণের ৩টি প্রধান উৎস হলো, ইটভাটা, যানবাহনের ধোঁয়া ও নির্মাণ সাইটের ধুলো।
জাতিসংঘের তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জন দূষিত বাতাসে শ্বাস নেন এবং বায়ু দূষণের কারণে প্রতি বছর প্রধানত নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশে আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে। সাধারণত, জুনের মাঝামাঝিতে বর্ষাকাল শুরু হলে ঢাকার বাতাস সতেজ হতে শুরু করে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বায়ু নির্মল থাকে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, বায়ুদূষণ বিশ্বব্যাপী মৃত্যু ও অক্ষমতার শীর্ষ ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে একটি। দূষিত বাতাসে দীর্ঘদিন শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণের ফলে হৃদরোগ, দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের রোগ, ফুসফুসের সংক্রমণ এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় স্বীকৃত হয়েছে।
ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন-ডব্লিউএইচও জানায়, বায়ুদূষণের প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী আনুমানিক ৭০ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। যা মূলত স্ট্রোক, হৃদরোগ, ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজিজ, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের কারণে হচ্ছে।