রহমত ডেস্ক 06 January, 2022 10:17 PM
একটি স্বাধীন নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের লক্ষ্যে চলমান সংলাপের ১১তম দিনে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদেকে নতুন আইন প্রণয়নসহ ১৪ দফা প্রস্তাবনা দিয়েছে গণ ফ্রন্ট। বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) বঙ্গভবনের দরবার হলে রাষ্ট্রপতির সাথে অনুষ্ঠিত সংলাপে গণফ্রন্টের চেয়ারম্যান মোঃ জাকির হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল অংশগ্রহণ করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাহ উদ্দিন ইসলাম, সচিব (সংযুক্ত) মোঃ ওয়াহিদুল ইসলাম খান প্রমুখ।
সংলাপ শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন ব্রিফিংয়ে বলেন, আলোচনাকালে গণ ফ্রন্টের প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রপতি বলেন তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী সৎ ও দুর্নীতিমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। প্রতিনিধি দল তিনজন মহিলা সদস্যসহ ৯ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব করেন। নির্বাচনে যাতে সরকারি হস্তক্ষেপ না থাকে নির্বাচনী আইনে সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা রাখার প্রস্তাব দেন গণ ফ্রন্টের নেতারা। তারা বলেন, নির্বাচনের সংলাপ বর্জন করলেই সব সমস্যার সমাধান হবে না। স্বাধীনতার পর সংসদে যেসব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিত্ব ছিল সে সব দলের সমন্বয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেন তারা।
বঙ্গভবনে তাদের স্বাগত জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা অপরিহার্য। জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে হলে সুস্থ রাজনীতি অপরিহার্য। রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো পরিচালনায় সুষ্ঠু রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে যাতে রাজনৈতিক দল ও নেতৃত্ব জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনে সক্ষম হয়।
এখন পর্যন্ত ১৬টি রাজনৈতিক দলের সাথে ১১ দিনের পৃথক পৃথকভাবে বৈঠক করেছেন রাষ্ট্রপতি। গত ২০ ডিসেম্বর চলমান সংলাপের প্রথম দিনে সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সাথে আলোচনায় বসেন রাষ্ট্রপতি হামিদ। এর মধ্যে চারটি রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপে অংশ নেননি। দলগুলো হলো: বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) ।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ২৮টি রাজনৈতিক দলকে বঙ্গভবনে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে। আগামী ৯ জানুয়ারি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে আলোচনা হবে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) এর সঙ্গে ওই দিন সন্ধ্যা সাতটায়। ১০ জানুয়ারি রোজ সোমবার সংলাপ হবে জাতীয় পার্টি (জেপি) এর সাথে সন্ধ্যা ছয়টায় এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) সাথে সন্ধ্যা সাতটায়। মঙ্গলবার ১১ জানুয়ারি সন্ধ্যা ছয়টায় সংলাপ হবে ইসলামী ফন্ট বাংলাদেশের সাথে এবং ঐদিন সন্ধ্যা সাতটায় বৈঠক হবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (বাংলাদেশ ন্যাপ) এর সাথে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সাথে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে ১২ জানুয়ারি বিকেল চারটায় এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি এনটিভির সাথে একই দিনে সন্ধ্যা ছটায় আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এর আগে নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। রাষ্ট্রপতিকে সিইসি এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েকটি মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ‘সার্চ কমিটি’র সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশন পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এ সময়ের মধ্যেই রাষ্ট্রপতি নতুন ইসি গঠন করবেন। আর এর অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।