উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরায় দ্রুততার সাথে নতুন করে সাজাতে হবে : রাষ্ট্রপতি

আসন্ন শিল্প বিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে দক্ষতার ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য দেশের উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে সাজাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আমাদের দক্ষতার ফাঁকগুলো শনাক্ত করতে হবে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উচ্চ শিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরায় দ্রুততার সাথে নতুন করে সাজাতে হবে। এই সম্মেলন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ এবং সুপারিশ গ্রহণ করবে যাতে দেশে এবং বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা যায়।

আজ (১০ ডিসেম্বর) শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র-বিআইসিসিতে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুির কমিশন-ইউজিসি আয়োজিত ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভ্যুলিউশন অ্যান্ড বিয়োন্ড (আইসি৪আইআর)-২০২১’ বিষয়ক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়াল ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। দুইদিন ব্যাপী আইসি৪আরবি-২০২১ আয়োজনের জন্য ইউজিসি কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের ধন্যবাদ জানান তিনি। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিল্প-সম্পৃক্ততা জোরদার করতে হবে। কারণ বর্তমান সরকার গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য ইতোমধ্যেই বাজেট বাড়িয়েছে। আমরা কৃষি, অটোমেশন, সফটওয়্যার উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং এবং অন্যান্য খাতে ক্রমবর্ধমানভাবে আরো ভালো করছি, তবে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাংকিং উন্নয়নে আরো জোর দিতে হবে। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‘একই দর্শন মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদর্শী নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত হয়েছে। 

সকলকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে যুক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এটি এখন বাস্তবতা এবং আমরা এটি অস্বীকার করতে পারি না। আমরা কেমন অনুভব করি, কীভাবে কাজ করি, কীভাবে বাস করি, কীভাবে ভ্রমণ করি তার পুরো ল্যান্ডস্কেপটি পরিবর্তন করার সময় এসেছে। প্রথম শিল্প বিপ্লব এসেছে স্ট্রিম ইঞ্জিনের মাধ্যমে, দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লব এসেছে বিদ্যুৎ আবিস্কারের মাধ্যমে, তৃতীয় বিপ্লব এসেছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে, সম্পূর্ন দৃশ্যপট পরিবর্তন করে ফোর্থ আইআর এ যুক্ত হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স। প্রচলিত চাকুরির বাজারে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে অটোমেশন। আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবসায়িক ভবিষ্যতের পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, পোশাক শিল্প ও শপিং সেন্টারে রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে, মেশিন লার্নিং সিমুলেশনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, স্মার্ট কৃষিতে ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) ব্যবহার করা হচ্ছে। ৫জি প্রযুক্তি ব্যবসায়িক মডেল পুরোপুরি পরিবর্তন করছে এবং বিশ্বজুড়ে এই পরিবর্তনের আরো অনেক দৃষ্টান্ত বিদ্যমান।

দেশব্যাপী উচ্চ প্রযুক্তি, স্বল্প প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিহীন মানুষদের সংযুক্ত করার মাধ্যমে গত দেড় বছরে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে প্রচলিত মুখোমুখি শিক্ষা থেকে মিশ্রিত , অনলাইন এবং ডিজিটাল শিক্ষার দিকে সরে এসেছি, আমাদের এটা থেকে সরে যাওয়া উচিত নয়, বরং এই অর্জন আমাদের কাজে লাগাতে হবে এবং দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে। বিদেশীরা অভ্যন্তরীণ চাকরির বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত এবং ব্যবস্থপনা স্তরে, কর্পোরেট সংস্থাগুলোতে এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে। এই প্রবণতার ফলে বাংলাদেশ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে রেমিটেন্স আউটফ্লো হয়।’ আমাদের অবশ্যই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ভূমির পরিমাণে বাংলাদেশ ৯৩ তম বৃহত্তম দেশ কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের ৮ম বৃহত্তম দেশ।  বিপুল জনশক্তির কারণে উন্নত বিশ্বে আমাদের ভালো সুবিধা আছে, ফোর্থ আইআর আসায় অনেকে চাকুরি হারাবে তবে আরো নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। দেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রবণতাকে শক্তিশালী করতে এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে ফোর্থআইআর এর জন্য প্রস্তুত করতে সুপ্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কারণ বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পৌঁছানোর অকাক্সক্ষা করছে।