বিশেষ প্রতিবেদক 09 November, 2021 12:50 AM
জন্মদিনে বাবাকে স্মরণ করলেন পাকিস্তানের জাতীয় কবি আল্লামা ইকবালের ৯১ বছর বয়সী ছোট মেয়ে মুনিরা সালাহুদ্দিন।
আল্লামা ইকবাল যখন মারা যান, তখন তার ছোট মেয়ে মুনিরার বয়স মাত্র ৭ বছর। মাথার পেছনে বাঁধা ধূসর চুল, শালোয়ার কামিজ পরিহিত, লাহোরে বসবাসকারী মুনিরা তার বাবাকে স্মরণ করার চেষ্টা করেন, ‘তিনি তুর্কিদের খুব পছন্দ করতেন এবং তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমর্থক ছিলেন।’
এ বিষয়ে মুনিরার ছেলে ইকবাল সালাহুদ্দিন বলেন যে, তার মা তার বয়সের কারণে বিশদ বিবরণ ভুলে যান। ‘আপনার বয়স যতই হোক না কেন, আপনাকে সবসময় আপনার পিতামাতার প্রয়োজন হয়। তার বয়স তখন মাত্র ৪ বছর যখন তার মা ইন্তেকাল করেন এবং ৭ বছর বয়সে আল্লামা পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। তিনি তাকে তার জনগণের অধিকারের জন্য লড়াই করতে দেখেছেন। আল্লামার মৃত্যুর পর, তাকে তার খালা এবং একজন জার্মান ভদ্রমহিলা মিসেস ডরিস লালনপালন করেন। কিন্তু এই বয়সে তিনি তার বাবা-মাকে সবচেয়ে বেশি মিস করেন’ -বলেন সালাহুদ্দিন।
সালাহুদ্দিন বলেন, ‘আমি আমার মামা জাভেদ ইকবালের কাছ থেকে ইকবালের দর্শনের ওপর আমার প্রাথমিক প্রশিক্ষণ পেয়েছি এবং এখন ইকবালকে পড়ার এবং বোঝার পরে আমি মনে করি ইকবালের এসব ধারণা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেওয়া আমার সর্বোচ্চ দায়িত্ব’।
ইকবাল ছিলেন খ্যাতিমান তুর্কি আলেম মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমির ভক্ত। ইকবাল নিজেকে মুরিদ-ই-হিন্দ (ভারতভক্ত) এবং পীর-ই-রুমি (রোমের সাধু) হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আল্লামা ইকবালের পরিবারের কাছে ইকবাল তার বন্ধু মহারাজা কিষাণ প্রসাদকে লেখা একটি মূল্যবান চিঠি রয়েছে, যা তিনি আসরার-ই-খুদি (নিজের রহস্য) লিখছিলেন। এটি ১৯১৫ সালে ফার্সি ভাষায় প্রকাশিত এবং তার প্রথম দার্শনিক কবিতার বই। চিঠিতে আল্লামা ইকবাল এবং মাওলানা রুমির মধ্যে তার কল্পনায় ঘটে যাওয়া অনেক গোপন কথোপকথন রয়েছে।
সালাহুদ্দিন বলেন, ‘তিনি (ইকবাল) তার বন্ধু প্রসাদকে চিঠির একটি নির্দিষ্ট অংশ পুড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন, কারণ তিনি মাওলানার সঙ্গে তার কল্পনাপ্রসূত কথোপকথন গোপন রাখতে চেয়েছিলেন। তবে তিনি (প্রসাদ) এটি পোড়াননি এবং এটি রেকর্ডে রয়েছে। ইকবাল আরও উল্লেখ করেছেন যে, তিনি তার স্বপ্নে রুমিকে কোথায় দেখেছিলেন এবং মসনভি লেখার নির্দেশনা পেয়েছিলেন’।
মসনভি হলো ছন্দময় লেখা এক ধরনের কবিতা, বা আরও নির্দিষ্টভাবে স্বাধীন, অভ্যন্তরীণভাবে ছন্দবদ্ধ লাইনের ওপর ভিত্তি করে লেখা একটি কবিতা। ইকবালের নাতি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে এ যুগে অনুপ্রেরণা পেতে ইকবালের দর্শন শিখতে হবে।
তিনি বলেন, ‘আমার মা সর্বদা আমাদের বলেছেন, কীভাবে আল্লামা সর্বদা সাফল্যের পথে যেতে জাতির তরুণদের কাজে লাগানোর ওপর জোর দিয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এ প্রজন্ম ইকবাল সম্পর্কে জানার অনেক দূরে। সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে এবং সিলেবাসে ইকবাল সম্পর্কে আরও অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি পরিকল্পনা প্রস্তাব করতে হবে’।
ইকবাল সালাহুদ্দিন লাহোরে দাবিস্তান-ই-ইকবাল (ইকবালের বাগান) নামে একটি ইনস্টিটিউট পরিচালনা করেন যেখানে তিনি বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে তার দাদার দর্শন শেখান।
উল্লেখ্য, উর্দু এবং ফার্সি ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি আল্লামা ইকবাল। তিনি পাকিস্তানের জাতীয় কবিও। তার সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আদর্শ দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদের জন্য একটি পৃথক দেশের ধারণা তৈরি করেছিল। আল্লামা ইকবাল ইন্তেকাল করেন ১৯৩৯ সালে।
১৮৭৭ সালের ৯ নভেম্বর একটি জাতিগত কাশ্মীরি মুসলিম পরিবারে বর্তমানে উত্তর পাকিস্তানের শহর শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আল্লামা ইকবালকে ঔপনিবেশিক সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে তার বিপ্লবী কবিতার কারণে প্রাচ্যের কবি হিসাবেও অভিহিত করা হয়।
/জেআর/