বিশেষ প্রতিনিধি 23 September, 2021 10:00 PM
ইসলামি বক্তা মাওলানা শরিফ মাহমুদ ফারুকী খুশি আক্তার নামের এক কিশোরীকে প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন দুই বছর পূর্বে। পরে যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে শুরু করেন নির্যাতন। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তার বাবা কয়েকধাপে তার জামাতাকে দুই লাখ টাকা ও গৃহসামগ্রী দেন। এতেও ক্ষান্ত হচ্ছিল না মেয়ের জামাতা। পরে আরও টাকা পয়সার লোভে স্ত্রীকে ফের শুরু করে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। সেইসঙ্গে এক নারীর সঙ্গে জড়িয়ে যান পরকিয়ায়।
এমন ঘটনায় তার স্ত্রী প্রতিবাদ করলে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিজ ঘরে স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে স্বামীর মারধরে খুশি আক্তার মাটিতে লুটিয়ে পড়লে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় তার স্বামী। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে পানি ঢেলে শরীরের আগুন নেভায়।
আগুনে শরীরের অধিকাংশই ঝলসে যায়, যন্ত্রণায় কাতর হয়ে কাঁদতে থাকেন এই গৃহবধু। ঘরের কান্নার আওয়াজ যাতে বাইরে না যায় সেজন্য তিনি তার স্ত্রীর মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ১২ ঘণ্টা ঘরে ফেলে তালাবদ্ধ করে রাখেন।
স্থানীয়রা ওই নারীর অসুস্থতার সংবাদ মুঠোফোনে গাইবান্ধায় অবস্থানরত মেয়ের বাবাকে জানালে তিনি ১৪ হাজার টাকায় একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে মেয়েকে তালা ভেঙে উদ্ধার করেন পরদিন দুপুরে। চিকিৎসার জন্য ভর্তি করাতে চেয়েছিলেন স্থানীয় হাসপাতালে সেখানেও বাধা তৈরি করেন অভিযুক্ত।
পরে নিরাপত্তাহীনতার কারণে গাড়িযোগে নিয়ে যান রংপুরে। সেখানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে স্বামীর বর্বর নির্যাতনের শিকার খুশি আক্তার।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার খুশি আক্তারের বাবা হাসান শেখ বাদী হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর শ্রীপুর থানায় মাওলানা শরীফ মাহমুদ ফারুকীকে অভিযুক্ত করে অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্ত মাওলানা শরীফ মাহমুদ ফারুকী গাইবান্ধা সদর উপজেলার বল্লমঝাড় গ্রামের হাসানুর রহমান হাসির ছেলে।
অভিযুক্ত গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌর এলাকার বহেরারচালা গ্রামের সেলিম মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় ইয়াকুব আলী জামে মসজিদের খতিব পদে চাকরি করতেন, সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় ইসলামি সম্মেলনে বক্তা হিসেবে কাজ করতেন। করোনায় ইসলামি সম্মেলন বন্ধ থাকায় সে ইউটিউবকেন্দ্রিক ওয়াজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতো।
নির্যাতনের শিকার খুশি আক্তার গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার বদনাগাড়ী গ্রামের হাসান শেখের মেয়ে।
নির্যাতিতার বাবার ভাষ্যমতে, প্রেম করে পরিবারের অমতে শরীফ মাহমুদ ফারুকী তার মেয়েকে গাইবান্ধা থেকে ঢাকায় এনে বিয়ে করেন দুই বৎসর পূর্বে। সমাজের নিজেদের অবস্থানগত দিক বিবেচনায় একপর্যায়ে তারা এ বিয়ে মেনে নেন। পরে করোনাকালীন নানা সমস্যার কথা বলে মেয়ের জামাতা যৌতুক দাবি করেন। মেয়ের সুখের কথা বিবেচনা করে কয়েকধাপে দুই লাখ টাকা ও দেড় লাখ টাকার গৃহসামগ্রী কিনে দেন। এরপরও আরও টাকা দাবি করে নির্যাতন শুরু করেন। এমনকি তিনি পরকিয়ায় জড়িয়ে যান।
রাতের বেশির ভাগ সময় এক নারীর সঙ্গে ভিডিও কলে ব্যস্ত থাকতেন তিনি। এমন ঘটনায় তার মেয়ে প্রতিবাদ করলে তার মেয়েকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করেন অভিযুক্ত। অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা তার মেয়েকে মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ঘরে তালাবদ্ধ করে ফেলে রাখেন।
স্থানীয়দের নিয়ে এসে তিনি তার মেয়েকে বন্দিদশা থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করেন। পরে তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করাতে বাধা তৈরি করেন অভিযুক্ত। চিকিৎসার নিরাপত্তাহীনতায় তিনি তার মেয়েকে নিয়ে রংপুর চলে আসেন। রংপুর মেডিকেলেরর বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এখন ওই নারী।
তিনি আরও বলেন,কতটা অমানবিক হলে একজন স্বামী তার স্ত্রীকে এভাবে নির্যাতন করতে পারেন। স্বামীর দেওয়া আগুনে তার মেয়ের শরীরের উপরি-অংশ অনেকটাই পুড়ে গেছে। অভিযুক্ত মেয়ের জামাতা তার মেয়েকে শুধুই নির্যাতন করেই ক্ষান্ত হয়নি সে মুখে গামছা দিয়ে বেঁধে ঘরে ফেলে তালাবদ্ধ করে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রেখেছিল তার মেয়েকে। তিনি এ ঘটনার বিচার চান।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মফিজ মল্লিক জানান,অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। অভিযুক্তদের পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় মামলা রুজু হবে।
এ ব্যাপারে ওই ইসলামি বক্তার সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তিনি এখন পলাতক রয়েছেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
/জেআর/