মূল পাতা সোশ্যাল মিডিয়া বিয়ের এক সপ্তাহ বাকি ছিল ফিলিস্তিনি তরুণী শায়মার...
মুহাইমিনুল ইসলাম অন্তিক 22 May, 2021 02:20 PM
ফিলিস্তিনের এই তরুণীর পুরো নাম শায়মা আবু আলাউফ। মাত্র ২১ বছর বয়স। ফিলিস্তিনের গাজার এক ডেন্টাল কলেজে তৃতীয় বর্ষে পড়ত সে। পাস করে বের হত বছরখানেকের মধ্যেই। নিশ্চয়ই পাস করার পর কী করবে, একটা সাস্টেইনেবল আর সাক্সেসফুল ক্যারিয়ার কীভাবে গড়বে ইত্যাদি নানা চিন্তা মাঝে মাঝেই তার মাথায় আলতো টোকা দিত, যে ক্যারিয়ার প্ল্যানিংয়ে সবার উপরে থাকত ‘মানবসেবা’ নামক শব্দটি।
মনের মানুষের সাথে এঙ্গেজমেন্ট হয়ে আছে দু’বছর আগে থেকেই। বিয়ের কথাবার্তাও পাকা হয়ে ছিল, আর সেটা আগামী সপ্তাহেই। সেই উপলক্ষে গত দু’মাস ধরে একটু একটু করে ঘর সাজিয়ে গেছে তার হবু জীবনসঙ্গী আনাস। সেই সাথে বিয়ে উপলক্ষে কেনাকাটা তো চলছিলই। দু’পরিবারের মাঝেও চলছিল বিয়ে নিয়ে নানা পরিকল্পনা, আত্মীয়স্বজনের মাঝে ছিল আনন্দ।
সব আনন্দ, জল্পনা-কল্পনা, সুখের সংসারের পরিকল্পনায় দাঁড়ি টেনে দিলো ইসরাইলি বিমানবাহিনীর নিক্ষিপ্ত রকেট।
গত শনিবার (১৫ মে) গাজার আল ওয়াহ্দা স্ট্রিটে চালানো হামলায় বিধ্বস্ত হয় শায়মাদের ভবন। সে সময় আনাসের সাথেই ফোনে কথা বলছিল সে। হুট করে লাইন কেটে যায়, এরপর শত চেষ্টাতেও আর শায়মাকে ফোনের লাইনে পায়নি আনাস।
১৪ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে সপরিবারে আটকা ছিল শায়মা। এরপর যখন উদ্ধার করা হলো, ততক্ষণে কেউই বেঁচে নেই, চিরস্থায়ী গন্তব্যের পথে পাড়ি জমিয়েছে মেয়েটির পরিবারের প্রতিটি সদস্য।
শায়মার কাহিনি পড়তে এবং লিখতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছিল আমার নিজের বিয়ের সময়গুলোর কথা। সেসময় বাসা কীভাবে সাজানো হতে পারে, কী কী ফার্নিচার থাকবে, বিয়ের বিভিন্ন আয়োজনে কোন সময় কোন পোশাক পরবে- এ নিয়ে আমার স্ত্রীর উৎসাহের অন্ত ছিল ছিল না। দিনের বিভিন্ন সময়ই আমার কাছে ফোন আসত, ‘আচ্ছা অন্তিক, …।’ আমি সব শুনে হেসে খুব বিজ্ঞের ভাব নিয়ে জবাব দিতাম, পরিকল্পনা সাজাতাম বিয়ের পরের একটা সুখী-সুন্দর সংসারজীবনের। শায়মাও নিশ্চয়ই মনের মানুষ আনাসের সাথে তেমনই একটা সংসারের স্বপ্ন দেখেছিল। আফসোস, কেবলই আফসোস… আর দীর্ঘশ্বাস…।
(লেখকের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত। ইষৎ সম্পাদিত ও পরিমার্জিত।)