| |
               

মূল পাতা সারাদেশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে সরকারি ওষুধ


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে সরকারি ওষুধ


আমানত উল্যাহ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর)     23 December, 2020     02:46 PM    


লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে টাকায় মিলছে সরকারি ওষুধ। হাসপাতালের ওষুধ বিতরণের দায়িত্বরত (টিএলসিএ-ফার্মাসিস্ট) আবদুল মালেক প্রকাশ্যে এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।

বেপরোয়া চলতে থাকা মালেকের এ কর্মকাণ্ডের বিষয়ে খোদ কর্মকর্তা একাধিক হুঁশিয়ারি দিলেও কোনওরূপ সংশোধন কিংবা পরিবর্তন হয়নি তিনি। ভুক্তভোগী রোগীদের অভিযোগ, প্রায় সবগুলো ওষুধই তাদের কিনতে হচ্ছে বাহির থেকে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন তদন্তে দেখা গেছে, মেডিকেল অফিসারের প্রদত্ত ওষুধের স্লিপ নিয়ে রোগীরা বিতরণ কক্ষে টিএলসিএ মালেকের নিকট গিয়ে তার চাহিদা মতো টাকা দিতে পারলে মিলছে ওষুধ। টাকা দিলে কোনও প্রকার অপেক্ষা করতে হয় না তাদের। অন্যদিকে টাকা না দিতে পেরে ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে খালি হাতে ফিরে যেতে হয় অসহায় হতদরিদ্র নদী ভাঙ্গন কবলিত নীরিহ জনসাধারণকে।

ভুক্তভোগী এক রোগীর ভাষ্যমতে স্যার "ওইহান থেইক্কা দুই পাতা দিয়েন" চুপ থাকেন কিছু বলতে হইবো না। আমি সব দিতেছি কথা কইয়্যান না! মালেকের এমন কথোপকথনসহ অবৈধ উপায়ে টাকা লুফে নেয়ার একাধিক প্রমাণও ক্যামেরায় ধারণ করেন সচেতন এক রোগীর স্বজন। আর এভাবেই  দিনের পর দিন ও  মাসের পর মাস গড়িয়ে বছর ধরে চলছে মালেক কর্তৃক সরকারি ওষুধ বিক্রির মহাউৎসব।

ভুক্তভোগী হাসিনা বেগম বলেন, স্যারকে (মালেককে) কিছু  টাকা দিলে বাড়তি ওষুধ পাওয়া যায়। সরকার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ওষুধ দিচ্ছে  টাকায় কেন নিচ্ছেন জানতে চাইলে হাসিনা বলেন, এখানে নামে শুধু সরকারি আসলে টাকা ছাড়া কিছুই পাওয়া যায় না। টাকা না দিলে খালি হাতে ফিরে যেতে হবে।

অনূরুপ ভুক্তভোগী জরিনা বেগম মালেকের মুখোমুখি হলে এ প্রতিবেদককে বললেন "স্যার আমিও ওনাকে ১শ  টাকা দিয়ে ওষুধ কিনেছি"আবদুল করিম বলেন, আমি নাস্তা খাওয়ার জন্য খুশি হয়ে ৪০ টাকা দিয়েছি। তবে মালেকের দাবি আমি চাই না রোগীরা স্লিপের সাথে খুশি হয়ে টাকা দিয়ে যায়।

হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগী সফিক উল্লা জানান, ডাক্তার রাউন্ডে এসে ওষুধ  লিখে দেওয়ার পর ২ দিন বাইরের ফার্মেসী  থেকে কিনেছি । পরে মালেকের সাথে আলাপ করে ১শ টাকা দিলে তিনি তা ম্যানেজ করে দেন।  যদিও ওষুধের গায়ে 'গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সম্পদ ক্রয়-বিক্রয় আইনত দন্ডনীয় অপরাধ' সম্বলিত লোগো দেয়া আছে।

এদিকে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি এই ওষুধ খোদ রোগীদের কাছে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান মালেক ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক ব্যক্তি বলেন,হাসপাতালে সাপ্লাই আছে এমন  দামি ওষুধ ডাক্তার স্লিপে লিখলেও মূলত রোগীরা কখনো তা পায় না। দামি যত ঔষধ আছে তা কৌশলে সরিয়ে  রেখে সুযোগ বুঝে তা রোগীদের কাছে কিংবা অন্যত্র টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় মালেক। এবং এই অবৈধ কর্মকান্ডের বিষয়ে  হাসপাতালের খোদ কর্মকর্তাও অবগত রয়েছেন জানিয়ে তিনি আরো বলেন, একজন রোগীর জন্য ডাক্তার স্লিপে লিখলেন দশটা প্যারাসিটামল  আর ছয়টি  এন্টিবায়োটিক লিখলেন। মালেক রোগিকে প্যারাসিটামল হাতে ধরিয়ে দিয়ে এন্টবায়োটিক সাপ্লাই নেই বলে সাফ জানিয়ে দেয়। আবার কারো কারো দশটি ট্যাবলেট লিখলে চারটা ধরিয়ে দেন।   কিন্তু কাগজে-কলমে দেখালেন রোগিকে লিখে পাঠানো সবগুলো ওষুধই ঠিকঠাক পাচ্ছেন রোগী।

ভুক্তভোগীর বর্ণনামতে, মালেক প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টাকার সরকারি ঔষধ বিক্রি করে মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছেন। জানা যায়, হাসপাতালের স্টোরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ওষুধ মজুদ রয়েছে । রোগীদের চাহিদানুযায়ী তা সরবরাহ করার জন্য দায়িত্বে থাকা কর্মচারী মালেকের নিকট প্রতিনিয়তই ওষুধ পৌঁছে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাছাড়া প্রতিদিনকার সরবরাহকৃত ওষুধের তালিকা ফার্মেসীর সামনে ঝুলিয়ে দেয়া সত্যেও তা মানছেন না মালেক।

চিকিৎসা নিতে আসা ভুক্তভোগী রোগী ও তাদের স্বজনরা বলছেন, টাকা ছাড়া কোনো ওষুধই পাচ্ছেন না তারা। ভুক্তভোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঔষধ বন্টনের দায়িত্বে থাকা আবদুল মালেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

এ বিষয়ে হসপিটালের স্টোর কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা বলেন, বরাদ্দের তুলনায় দ্বিগুণ রোগী চিকিৎসা নেওয়ার ফলে ওষুধের ঘাটতি হচ্ছে।

অন্যদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী জানান, সরকারি ওষুধ বিক্রির জন্য নয়, অবৈধভাবে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ খতিয়ে দেখে মালেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বললেন তিনি।

রোগীরা খুশি হয়ে আমাকে টাকা দিয়ে যায় মালেকের এমন বক্তব্যের বিষয়ে কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার ডাক্তার রেজাউল করিম রাজিব বলেন, ফার্মাসিস্ট হয়ে মালেক রোগীদের কি এমন সেবা দিচ্ছেন। রোগীরা তাকে খুশি হয়ে টাকা দিবে। আমি তো এ হাসপাতালে ছয় বছর ধরে সেবা দিয়ে যাচ্ছি আমাকে তো কেউ খুশি হয়ে  টাকা দিয়ে যায় না। তবে মালেকের বিরুদ্ধে ওষুধ বিক্রির একাধিক অভিযোগ পেয়ে একাধিকবার সতর্ক করার পরেও সতর্ক হয়নি মালেক। সরকারের দেওয়া বিনামূল্যের ওষুধ আপনি কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্ন করা হলে মালেক বলেন, কিছু বলার থাকলে কর্তৃপক্ষকে বলেন। আমি কর্তৃপক্ষকে জবাব দিব আপনাকে নয়।

কমলনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মেডিকেল অফিসার  (আরএমও) ডাক্তার মীর আমিনুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সরকারি ঔষধ বিক্রি করার কোনও সুযোগ নেই। অভিযোগ খতিয়ে দেখে মালেকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার তাহের পাটোয়ারী বলেন, মালেকের বিরুদ্ধে ওষুধ বিক্রির অভিযোগ পেয়ে একাধিকবার তাকে সতর্ক করা হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড থেকে ফিরে না আসলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফার্মেসীটিকে সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হবে বলেও তিনি জানান।
-জেড


এই এলাকার অন্যান্য সংবাদ দেখতে ক্লিক করুন: