নিজস্ব প্রতিনিধি 05 December, 2020 06:03 PM
দেশের চলমান অস্থিরতা ও জাতীয় সঙ্কট নিরসনে আলেম-ওলামাদের করণীয় শীর্ষক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় শনিবার (০৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯ টায় বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড- বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমুদুল হাসানের সভাপতিত্বে শীর্ষ আলেমদের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে ৫ দফা প্রস্তাবাবলীসহ ভাস্কর্যের বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিধান এবং ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর মাওলানা মাহমূদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, মুফতী মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, আল্লামা শায়খ সাজিদুর রহমান, মাওলানা মুহিব্বুল হক গাছবাড়ী, মুফতী মনসুরুল হক, মুফতি মুবারকুল্লাহ, মুফতি রুহুল আমীন, মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী, মুফতী রশিদুর রহমান ফারুক, মুফতী জাফর আহমদ, মুফতী আরশাদ রাহমানী, মাওলানা মাহফুজুল হক, মাওলানা মামুনুল হক, মুফতী ফয়জুল করিম, মাওলানা বাহাউদ্দীন যাকারিয়া, মুফতী মিজানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা শাব্বির আহমদ রশীদ, মাওলানা আব্দুল্লাহ আল হাসান, মুফতি গোলাম রহমান, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, মাওলানা আবু তাহের নদবী, মুফতি মুজিবুর রহমান, মুফতি মনির হুসাইন কাসেমী, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদবী, মাওলানা নুরুল হুদা ফয়েজী, মাওলানা নেয়ামত উল্লাহ ফরিদী, মাওলানা ড. মুশতাক আহমদ, মুফতি ইয়াহয়া মাহমুদ, মাওলানা একে এম আশরাফুল হক, মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ্ আইয়ুবী, মাওলানা হাসান জামিল, মাওলানা ফজলুর রহমান, মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, মুফতি আবুল খায়ের বিক্রমপুরী, মাওলানা কেফায়েতুল্লাহ আজহারী, মাওলানা নাজমুল হাসান প্রমুখ।
বৈঠকে তিনটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এক. সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে যাত্রাবাড়ি মাদরাসায় অনুষ্ঠিত আজকের বৈঠকে গৃহীত ৫ দফা প্রস্তাবাবলীর অনুমোদন।
দুই. বেফাকের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং হাইয়াতুল উলিয়ার চেয়ারম্যান মাওলানা মাহমূদুল হাসানের পক্ষ থেকে চলমান পরিস্থিতি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি বিশেষ চিঠি প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
তিন. আজকের বৈঠকে উপস্থিত ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে ৫ দফা প্রস্তাবাবলীসহ ভাস্কর্যের বিষয়ে কোরআন-সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিধান এবং ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর মাওলানা মাহমূদুল হাসানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠকে গৃহীত সরকারের প্রতি প্রস্তাবসমূহ:
প্রস্তাবনা-১: মানবমূর্তি ও ভাস্কর্য যেকোনো উদ্দেশ্যে তৈরি করা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কোনো মহৎ ব্যক্তি ও নেতাকে মূর্তি বা ভাস্কর্য স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানানো শরিয়তসম্মত নয়। এতে মুসলিম মৃত ব্যক্তির আত্মার কষ্ট হয়। কারো প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও তার স্মৃতিকে জাগ্রত রাখতে মূর্তি বা ভাস্কর্য নির্মাণ না করে, শতকরা ৯২ ভাগ মানুষের বিশ্বাস ও চেতনার আলোকে কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত কোনো উত্তম বিকল্প সন্ধান করাই যুক্তিযুক্ত।
প্রস্তাবনা-২: আমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবমাননা, বিষোদগার, ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন ইত্যাদির তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নাশের উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড বিশেষ করে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি অবমাননাকর আচরণের ওপর কঠোর নজরদারি এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে এসব অপকর্ম বন্ধ করা হোক।
প্রস্তাবনা-৩: বিগত সময়ে দ্বীনি আন্দোলনে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দান ও মামলা প্রত্যাহার করা হোক। এ সংক্রান্ত বিষয়ে সারাদেশের আলেম-ওলামা, ইমাম-খতিব ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ওপর সব ধরনের হয়রানি বন্ধ করা হোক। ধোলাইপাড় চত্বরের পাশে ক্ষতিগ্রস্ত পুনঃনির্মিত মসজিদ নামাজের জন্য অবিলম্বে উন্মুক্ত করে দেয়া হোক।
প্রস্তাবনা-৪: সম্প্রতি শব্দদূষণ ও জনদুর্ভোগের অজুহাতে দ্বীনি মাহফিলে লাউড স্পিকার ব্যবহারে প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টির তৎপরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। অথচ সাধারণ শব্দদূষণ, উচ্চস্বরে গান-বাজনা ইত্যাদি বিষয়ে কোনো প্রশাসনিক উদ্যোগ নেই বললেই চলে। কেবল ওয়াজ-মাহফিল নিয়ে শব্দদূষণের অজুহাতে বিশেষ নির্দেশনা অনভিপ্রেত। অতএব, জনগণকে কল্যাণের পথে অনুপ্রাণিত করার লক্ষ্যে সকল দ্বীনী মাহফিল যথানিয়মে অনুষ্ঠানের অবাধ সুযোগ প্রদান করা হোক।
প্রস্তাবনা-৫ : যে সকল বিষয় শরিয়তে নিষিদ্ধ ও হারাম, সে সব বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সঠিক বক্তব্য তুলে ধরা আলেমদের দায়িত্ব। অথচ এক শ্রেণীর মানুষ আলেমদের বিরুদ্ধে বিষোদগার ও দায়িত্বহীন আচরণ করছে। কেউ কেউ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনাশের উস্কানিও দিচ্ছে। এসবের খোঁজখবর রাখা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে বের করা সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। উস্কানিমূলক বক্তব্য, অবমাননাকর মন্তব্য, উগ্র স্লোগান, মিছিল-মিটিং সমাজে অস্থিরতা বৃদ্ধি করবে।
ওলামায়ে কেরাম কঠোর ধৈর্য সংযম অবলম্বন করা সত্ত্বেও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়ার আশঙ্কা প্রবল। সরকারকে এসবের উপযুক্ত প্রতিবিধান করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী উদ্ভুত বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দায় সরকার এড়িয়ে যেতে পারবে না। বিশেষ করে ইসলাম, দ্বীন ও বাংলাদেশ বিরোধী দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র ও অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ রোধ করা সরকারের অন্যতম দায়িত্ব।